এই দেশ আমারও না ||| নাজনীন মুন্নী
ছোট বেলার বন্ধুটা যখন ফোন করে বললো, “অসম্ভব ভয় লাগতেছে দোস্ত, বাড়ির কেউই সারা রাত ঘুমাই নাই। কখন কোথা থেকে হামলা হয় কে জানে। সকাল হয়েছে তারপরও ভয় কাটছে না। মন্দিরে কি যাবো, কত আয়োজন করে রেখেছি শাড়ি গয়না..কিছুই পরিনি সব কিছুর দিকে তাকালেই ভয় করছে.. কোথায় আনন্দ আর উৎসব। এই দেশটা কি আর আমাদের নাই?” বলতে বলতে ওর গলা ভার শুনলাম কিন্তু দু’চোখ ভিজে গেলো আমার.. কোনো তীক্ষ্ণ ধারালো ছুরির ফলা বুকে যেয়ে লাগলো সজোরে। মনে হল আমি নিজে ওকে এত ভয়ের সময় দিয়েছি। আমি নিজের হাতে ভেঙ্গেছি ওর দেবী ও ধর্মকে। তীব্র অপমান, লজ্জা আর কষ্টে আমি মিশে যেত থাকলাম। আমার কোনো উত্তর ছিলো না। আমার বলার থাকে না যে এইসব ভুল, শাড়ি পড়ে তুই মন্দিরে যা। কিচ্ছু হবে না। আমি বলতে পারি কারণ তা বলার, এই সান্তনা দেয়ার, কোন নিশ্চিত অস্ত্র আমার নাই। যে অস্ত্র, যে ভাষা, যে উদাহরণ ওকে নিশ্চয়তা দিতে পারে দেশটা ওরও।
পূজা মানেই ওর বাড়ি আমাদেরে উৎসবের তীর্থ। কে কোন নাড়ুটা খাবো সেটা নিয় মারামারি, ঝগড়া। লুচির সাথে আলুর দম হবে নাকি কি সেটা নিয়েও একই। মাসিমা জিতিয়ে দিয়েছেন বরাবর আমাদের। আমরা যা চাই সেই নাড়ুই তৈরী হতো সবচেয়ে বেশি। বাড়ি গেলে মাথায় যে হাতটা, কি শান্তির, দোয়ার। সেই হাত এখন মন্দিরে ভাঙ্গা দেবীর অংশ কুড়াচ্ছে -চোখে পানি নিয়ে এই দৃশ্য কি আমার দেখার কথা? কথা আমার দেখার? এই মন্দির আমি ভেঙ্গেছি। কারণ আমি মুসলমান।
আমি মুসলমান। আমি জানি এর চেয়ে শান্তির ধর্ম নাই। মুসলিম মুসলিম নাকি ভাই ভাই। তো আমার ভাই হয়ে এমন কষ্টে আপনারা আমাকে কেন ফেললেন? এমন অপরাধী আর লজ্জায় কেনো ফেললেন যে আমার ধর্মটাই এখন ভয়ের ধর্ম হয়ে যাচ্ছে? কেনো অন্য ধর্মের মানুষ জানবে ইসলাম মানে নৃশংসতা, হিংস্রতা আর অমানবিকতা? কেনো আমার ভয় লাগে আপনাদের দেখলে? আমার ধর্ম আর আল্লাহ বা আমার রসূল কি এত দুর্বল যে কোন এক ছোট ঘটনায় তাদের অবমাননা হয়? যদি হয়ও ধর্মই বলেছে ক্ষমার চেয়ে বড় কিছু নাই। এত ধর্ম রক্ষক আপনারা ধর্মটা কি বলেছে তা কি জানেন?
যখন আমাদের ঈদ। আমাদের উৎসব তখন যদি এই ঘটনা ঘটতো? আপনি আতঙ্কে নীল হয়ে বসে থাকলেন মসজিদে যেতে পারলেন না, পারলেন না নামাজ পড়তে কেমন লাগতো আপনার? আপনার মসজিদ যদি কেউ ভাঙ্গে, আপনার ধর্ম যদি কেউ পায়ে মাড়ায় কেমন লাগে আপনার? এমনই লাগে সবার। কেবল আপনার জোর বেশি, আপনারা সংখ্যায় বেশি বলে এই তাণ্ডব আপনাদের দুর্বলের উপর?
একজনের শাস্তি কি আপনি পুরো সম্প্রদায়, পুরো দেশকে দিত পারেন? জানেন ও কি সেই ঘটনা কোন হিন্দু ঘটিয়েছে নাকি আপনারই কোনো ভাই, যে তার নিজের আখের গোছাতে চায় মন্দির পোড়ার আগুনে? আমি আল্লাহ রসূল বিশ্বাস করি তারপরও আমাকে আপনারা নাম দেন নাস্তিক। আপনারা কোন আস্তিক যারা আল্লাহর নির্দেশটাও মানেন না। জানেনও না কি বলা হয়েছে ধর্মে? এই দেশ স্বাধীন দেশ। এই দেশ সবার। তারপরই কেনো ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়? দেশে কি যুদ্ধ চলছে? বুঝতে পারেন আপনি কত বড় ত্রাস? কোন সন্ত্রাসী কি আসলেও কোনো ধর্মের রক্ষক? আপনি রক্ষক ধর্মের?
আমি এই দেশ দেখতে চাইনি। আমি স্বাধীনতার ৫০ বছর পর হায়েনাদের তাণ্ডব দেখতে চাইনি। আমি দেখতে চেয়েছি দিন গড়ালে হায়েনাদের চেহারা প্রকাশ্য হয়েছে। তাদের চেহেরা, যারা ধর্মের নামে ধর্ম পোড়ায় কিন্তু নিজেরা স্রষ্টাকে ডাকে না এক বেলা। আমি দেখত চাই, তাদের চেহারা। এখনই চাই। কারণ এই সব চেহারা রয়ে গেছে সবার মুঠোতে।
এসএস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন