সোশ্যাল মিডিয়া

এ শোক, এ কান্না কি করে সহ্য করি!

এ শোক, এ কান্না কি করে সহ্য করি!

 

এ শোক, এ কান্না কি করে সহ্য করি! ফরিদপুর মধুখালির সন্তান, খুব অল্প বয়সেই দেশ ছেড়েছিলো ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে। বসতি গড়েছিলো স্বপ্নের শহর নিউইয়র্কে। নিজে ভালো থাকবে, বাবা মা ভাইবোন আত্নীয়স্বজন সবাইকে ভালো রাখবে, এই বিদেশ বিভুঁইয়ে নিজের বলিষ্ঠ দুখানি হাত দিয়ে কায়িক পরিশ্রমের অর্থ দিয়ে। করেও ছিলো তাই বিজিত, বহুদিনের স্বপ্ন তার প্রায় ছুই ছুই। কাজের ফাকে ছুটি নিয়ে দেশে ছুটে গিয়ে বিয়ে করেছিলো কয়েক বছর আগে, নিজে গিয়ে বউ নিয়ে এসেছিলো গত বছর, নিউইয়র্ক শহরের এপার্টমেন্টে নিজেই বধু বরন করেছিলো বিজিত। মা বোন বৌদিরা তো দেশে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে জীবনের নতুন মানুষটিকে চিনিয়েছিল নিউইয়র্ক শহর। হঠাৎ করে দেশ ছেড়ে অপরিচিত শহরের সবকিছু চেনা জানার আগেই কোল জুড়ে আসলো সন্তান এক বছরের মধ্যেই। সবকিছু ভুলে স্বামী স্ত্রী দুজন মিলে বিভোর হয়ে সন্তানের সান্নিধ্যে, ভালোবাসায়। কাজের ফাকে ফাকেও বিজিত ফোন করে বাসায় দুষ্ট ছেলেটির গলার স্বর শোনবার জন্য। কিন্তু এতো সুখের মাঝে হঠাৎ করে ঘরে এসে ঢুকলে করোনার নষ্ট বিষ! ছোবল মারলো তাকে, মাথা ব্যাথা, জ্বর কাসি নিয়ে হাসপাতালে গেলো বিজিত মার্চের শেষ সপ্তাহে, নিরব নিশ্চুপ স্ত্রী কোলের সন্তান নিয়ে পরে গেলেন কোয়ারান্টাইনের বেড়াজালে। একলা শুধু একাই, এই নির্জন ঘরে। পরিচিত অপরিচিত কেউ আসেনা, আসতেও পারেনা কোন কুশল বার্তা নিয়ে। এই গভীর বিপদের সময়ে প্রিয়জন কেউ নাই তার পাশে একটু মাথায় হাত দিয়ে সান্ত্বনা দেবার। হাসপাতালেও যেতে পারেনা বিজিতকে দেখতে, ওর প্রিয় সন্তানকে একবার দেখাতে। আবার হাসপাতাল অথরিটি থেকেও পায়না কোন বিস্তারিত সংবাদ। কি অবস্থায় তার স্বামী বিজিত? দিনরাত এক হলো তার কাছে, ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন খেয়ে না খেয়েই বন্দি ঘরের মধ্যে বসে রইলেন কোলের সন্তানকে কোলে নিয়ে বিজিতের কোন ভালো খবরের আশায়!হঠাৎ করেই একদিন দুপুরে কল পেলেন আটলান্টা থেকে তার প্রিয় ননদ আরতির। মুখ ফুটে কিছুইতেই বলতে পারছিলোনা আরতি তাদের মহা সর্বনাশের কথা। কথার ফাকে শুধু বললো “” তোমাকে এখন শক্ত হতে হবে বৌদি, ভেঙ্গে পরার সময় নেই তোমার “” ফোন রাখলো আরতি হঠাৎ করে। যা বুঝবার তা অল্পতেই বুঝে নিলেন বিজিতের স্ত্রী। শক্ত হয়ে গেলো তার সারা দেহ।স্থীর হয়ে গেলো মন। নির্জন ঘরে একাকী তাকালেন চারিদিকে, কেউ নেই কিছু নেই। শুধু আছে বিজিতের ভালোবাসার ছোয়া ঘর জুড়ে। আস্তে আস্তে উঠে দাড়ালো বিজিতের সহধর্মিণী, স্থির চোখে তাকালেন ঘুমন্ত সন্তানের দিকে। নিশ্চিন্তে ঘুমাছে নিস্পাপ এক বছর বয়সী ছেলেটা। বুঝতেও পারলো তার প্রিয় বাবা আজ নেই। হঠাৎ করে ফোন বেজে উঠলো তার, ফোন হাতে নিয়েই দেখলো হাসপাতালের কল, ধরলো না বিজিতের প্রিয়তমা। আস্তে আস্তে ঘুমন্ত সন্তানকে কোলে তুলে নিলেন, জড়িয়ে ধরলেন বুকে শক্ত করে।অপেক্ষা করলেন শান্তভাবে হাসপাতাল অথরিটি কলের। রিং হলো ফোনের, এক হাতে ফোন ধরলো কানের কাছে,আর এক হাতে শক্ত করে সন্তানকে চেপে রাখলো বুকের মধ্যে, স্থির মনে শুনলের ফোনে তার সর্বনাশের কথা। স্বপ্ন সংসার ভেংগে যাবার কথা। কপাল থেকে লাল সিঁদুরের টিপ মুছে যাবার কথা, শুধু হাসপাতাল অথরিটিকে ধন্যবাদ জানালো বিজিতকে সেবা করার জন্য। ফোন রেখে হঠাৎ করেই কান্নায় ভেংগে পরলো সে। একাকী নির্জন ঘরে কান্নার শব্দ প্রতিধ্বনি হয়ে তার কানেই ফিরে আসলো। মায়ের আর্তচিৎকারের শব্দে হঠাৎ ঘুম ভেংগে যাওয়া সন্তানটিও ভয়ে কেঁদে উঠলো। দুজনেই কাঁদলো চিৎকার করে, প্রাণ খুলে, কেউ বাস্তব নির্মমতা বুঝে, কেউ কিছু না বুঝেই! দুইদিন পরে নিউইয়র্ক শহরের মর্গ অথরিটি এলো বিজিতের শেষকৃত্যের অনুমতি নিতে। অনুমতি দিলো বিজিতের স্ত্রী উদাসীন ভাবে কিন্তু আজও জানতে পারলো না কবে হবে, কোথায় হবে তার স্বামীর শেষ যাত্রা। বন্দী ঘরে কোয়ারেনটাইমে মধ্যে দিন কাটাচ্ছে একাকী নির্জনে নিরবে বনবাসে বিজিতের স্ত্রী। আশা তার, ভরসা তার মুক্ত হবে সে একদিন কোলোর সন্তান সহ এই অভিশপ্ত সর্বনাশা ভাইরাসের ছোয়া থেকে। খুলবে তার ঘরের দরজা, দেখবে এক চিলতে বাইরের আলো! হয়তো কেউ এগিয়ে এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সান্ত্বনা দিবে, এইটুকুই চায় আজ বিজিতের স্ত্রী, এইটুকুই আজ তার পরম পাওনা এই নিষ্ঠুর নির্মম পৃথিবীর কাছে। বিজিতের হতভাগিনী স্ত্রী, সন্তান ভালো থাকুক, ধীরে ধীরে মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠুক সে, বড় হোক তার কোলের সন্তান। এই আর্শীবাদ করি আমরা সবাই। আমরা সবাই ভালো থাকি, সুস্থ থাকি, দুরে থাকি বহুদূরে এই নিরব ঘাতকের নষ্ট দুষিত বিষ থেকে, এই কামনা করি…..এ শোক, এ কান্না কি করে সহ্য করি!

-ভাস্কর চন্দ-এর ফেস বুক থেকে

 

সিবিএনএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen + eighteen =