দেশের সংবাদ

কমলগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়ে নেবে

ঈদের টানা ছুটিতে দর্শনীয় স্থানে
কমলগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়ে নেবে

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি অপরূপ মনোরম সবুজঘেরা চা বাগান বেষ্টিত পর্যটন সমৃদ্ধময় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা এই উপজেলায় মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে সর্বাধিক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। আর এই স্থানগুলো দেখতে দেশ বিদেশের ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা ঘুরতে আসেন। ঈদের ছুটিতে ঘুরে বেড়াতে অনেকেই বেছে নিয়েছেন কমলগঞ্জকে। এর মধ্যে পর্যটন নগরীর শহরের বাইরের হোটেল রিসোর্টগুলোর ৮০ ভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।
পর্যটন ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনাময় এই উপজেলায় ২০টিরও বেশি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রভাত, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, পদ্মছড়া লেক, বণ্যপপ্রাণীর অভয়ারণ্য রাজকান্দি বন, শমসেরনগর বিমানবন্দর, প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক লক্ষীনারায়ন দিঘী, ২০০ বছরের প্রাচীন ছয়চিরী দিঘী, শমসেরনগর বাগীছড়া লেক, আলীনগর পদ্মলেক, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড, অপরূপ শোভামন্ডিত উচু নিচু পাহাড়বেস্টিত সারিবদ্ধ চা বাগানসহ বাংলাদেশের বৃহৎ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মণিপুরী সম্প্রদায়, প্রকৃতির পূজারী খাসিয়া নৃ-গোষ্ঠীসহ গারো, সাঁওতাল, মুসলিম মণিপুরী, টিপরা ও গারোদের নিরাপদ আবাসস্থলসহ বিভিন্ন ভাষাভাষীর নিরাপদ আবাসস্থল এই কমলগঞ্জ উপজেলায়। পাহাড়ের সাথে মিতালী করতে এসব পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে শুধু দেশি পর্যটকই নয়, বিদেশি পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে। ইতোমধ্যে বন বিভাগের রেস্টহাউজের পাশাপাশি হীড বাংলাদেশের রেস্টহাউজসহ অন্যান্য রেস্টহাউস ও হোটেলগুলোর রুম অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যটক পুলিশের পাশাপাশি কমলগঞ্জ থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এবার অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সাথে সদ্য আবিস্কৃত নতুন সংযোজন ফিকল জলধারা যে কোনো পর্যটকের দৃষ্টি কেড়ে নেবে। তাই তো পবিত্র ঈদুল ফিতরে এসব
আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপার লীলাভূমি কমলগঞ্জের বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে দর্শণীয় ও আকর্ষণীয়। বাংলাদেশের সাতটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও দশটি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে লাউয়াছড়া অন্যতম। এই বনের পরিচিতি শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় এটি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একটি পর্যটন কেন্দ্র। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে সুন্দরবনের পরেই লাউয়াছড়ার অবস্থান। চিরহরিৎ এ বনাঞ্চল বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকেরকের নিরাপদ আবাসস্থল। এছাড়াও নানা ধরণের দূর্লভ প্রাণী, কীটপতঙ্গ আর গাছপালার জন্য এ অরণ্য বিখ্যাত। ১৯৯৬ সালে পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত এই বনের প্রায় ১২৫০ হেক্টর এলাকাকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করাহয়। এ উপজেলায় পাহাড়ি উঁচুনিচু টিলার উপর সবুজ চা বাগানবেষ্টিত, জাতীয় ফুল দুর্লভ বেগুনি শাপলার আধিপত্য আপনাকে আনন্দের বাড়তি মাত্রা যুক্ত করবে পদ্মকন্যা মাধবপুর লেক। কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর চা বাগানে নয়নাভিরাম মনোরম দৃশ্য মাধবপুর লেক ভ্রমণ পিপাষু মানুষের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। তার পাশেই পদ্মছড়া লেক। মাধবপুর লেকের দৃশ্য উপভোগ করে বেরিয়ে এসে একই রাস্তায় প্রায় ১০ কিমি যাওয়ার পরই বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি
হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ। চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকে। কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে রাজকান্দি বন রেঞ্জের কুরমা বনবিট এলাকার প্রায় ১০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে দৃষ্টিনন্দন হামহাম জলপ্রপাত। স্থানীয় পাহাড়ি অধিবাসীরা এ জলপ্রপাতের ধ্বনিকে হামহাম বলে। এ বনের ভেতরেই রয়েছে সম্প্রতি আবিস্কৃত ফিকল ঝরণা। বনের কুরমা খাসিয়া পুঞ্জির পাশেই দৃষ্টি নন্দন এ ঝরনার অবস্থান। সেখানে সরাসরি যানবাহন নিয়ে পৌঁছার ব্যবস্থা নেই। বাসে এবং সিএনজি যোগে কুরমা চেকপোস্ট যাওয়ার পর বাকি পথ হেঁটে যেতে হয় হামহাম জলপ্রপাত ও ফিকল ঝরণায়। কুরমা চেকপোস্ট থেকে হামহাম যাওয়ার পথে ত্রিপুরা আদিবাসী পল্লী ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা তৈলংবাড়ী কলাবন বস্তি পাবেন। হামহাম জলপ্রপাতে ভ্রমণ করতে পুরো একদিনের প্রয়োজন।
এ ছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময়ে গড়ে ওঠা একটি বিশালাকার বিমানবন্দর রয়েছে শমশেরনগরে। বর্তমানে এখানে রিক্রুট ট্রেনিং স্কুল করায় প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত হলেও এ এলাকা সংলগ্ন স্থানেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন একটি বধ্যভূমি। এ উপজেলার আরেকটি আকর্ষণীয় স্পট হচ্ছে ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী দূর্গম পাহাড়ি এলাকা ডবলছড়া খাসিয়াপল্লী। যদি ডবলছড়া খাসিয়াপল্লী যেতে পাহাড়ি উঁচু-নিচু প্রায় ১২ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাড়ি দিতে হয়। তবে পথিমধ্যে শমশেরনগর চা বাগানের দুটি প্রাকৃতিক হ্রদ, একটি গলফ মাঠ ও ক্যামেলিয়া ডানকান হাসপাতাল যে কোনো পর্যটকের নজর কাড়বে। ডবলছড়া খাসিয়া পল্লীতে ‘আড়াইশ’ ফুট উপরের হেডম্যান বা মন্ত্রীর
বাংলোটি দেখতে খুবই সুন্দর। এ ছাড়াও ভ্রমণের জন্য রয়েছে- কমলগঞ্জে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের নীরব সাক্ষী বধ্যভূমি, ব্রিটিশদের শোষণের প্রতীক তিলকপুর নীলকুটি, ঘটনাবহুল মাগুরছড়া গ্যাসফিল্ড, মণিপুরী, টিপরা, খাসিয়া, গারোসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আবাসভূমি।
লেখক ও গবেষক আহমদ সিরাজ বলেন, পর্যটন সমৃদ্ধময় এলাকা কমলগঞ্জকে পুরোভাবে দেখা হলে বাংলাদেশে অর্ধেককে দেখা হয়ে যায়। কমলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি প্রকৃতি প্রেমি পিন্টু দেবনাথ জানান, কমলগঞ্জ এমন একটি উপজেলা, যে উপজেলায় সবকিছু রয়েছে শুধু মাত্র পর্যটক ভ্রমণ পিপাসুর জন্য। এই উপজেলা এলে মনে প্রশান্তি জাগে। প্রকৃতির সাথে মিতালীপণা করে কাটিয়ে দেয়া যায়। বিগত সময়ে করোনার প্রাদুর্ভাব থাকলে পর্যটন এলাকা শূন্য ছিল। করোনার পর থেকে আবারও মুখরিত হয়েছে। তাই এবারের ঈদে সর্বাধিক পর্যটকদের ঢল নামবে বলে আশা করা যায়। তাই তো পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ। কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়াদৌস হাসান বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা প্রস্তুত। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাআশেকুল হক বলেন, প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে পর্যটকদের জন্য।

 

 

 


এসএস/সিএ

 


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন