কমিউনিটি নেতা মনজুরুল ইসলাম মনজু’র মৃত্যুতে শোকগাথা ।।
শোকাহত। মনজুরুল ইসলাম মনজু ভাইয়ের মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোকাহত। গত পরশু ফোন করে মহানন্দে বললেন দাদা আমিতো মেয়ের বাবা হয়ে গেলাম। বলুন আপনাকে কি করে মিষ্টি পাঠাই। উনার স্ত্রী বললেন দাদা বেবি কে নিয়ে বাড়ী ফেরার পর থেকেই আপনার মনজু ভাই বলছেন দাদাকে জানিয়েছো কি না। আমি মেয়ে হয়েছে এবং উনি মেয়েকে দেখে যেতে পেরেছেন জেনে খুব আনন্দিত হলাম এবং বললাম এর মধ্যেই বাসায় এসে আপনাকে দেখে এবং মিষ্টি খেয়ে যাবো।
মনজু ভাই ক্যানসারে আক্রান্ত হবার পর থেকেই উনার সাথে যোগাযোগ। আমাদের হসপিটালেই উনার চিকিৎসা চলছিলো। তিনি ইংরেজী বলতে এবং বুঝতে পারতেন। কিন্তু ডাক্তারের বুঝতে অসুবিধা হতো বলে প্রথম থেকেই দুভাষীর কাজ করেছি। উনার ফাইলে আমার নাম এবং ফোন নাম্বার লিখা ছিলো। উনার জীবনের আয়ু আর মাত্র ৩ থেকে ৬ মাস আছে এ কথাগুলো আমাকেই বলতে হয়েছিলো। মনে পরে সেই দিনের কথা। দাদা বলেই হাত চেপে বলেছিলেন একি বলেন দাদা। আমার দুই ছেলে এবং অন্তসত্ত্বা স্ত্রীর কি হবে। কে ওদের দেখাশুনা করবে। চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছিলো। উনার আর ক্যানসারের চিকিৎসা নেই। পেলিয়েটিব কেয়ার ইউনিটে পাঠাবে। উনাকে পেলিয়েটিব কেয়ার সম্পর্কে বুঝিয়ে বললাম। সব কিছু শুনে বললেন যে কয়দিন আছি আমি যাতে পরিবারের সাথে থাকতে পারি তার ব্যবস্হা করে দিন দাদা আর আপনি একটু পরে আবার আসবেন, আমার স্ত্রী আসলে উনাকে বুঝিয়ে বলবেন তবে ৩ থেকে ৬ মাসের কথা বলবেন না। আমিও তাই করলাম। তবে পরবর্তিতে উনার অনুরোধে সব কিছু খুলে বললাম।
আমি ডাক্তার এবং সোস্যাল ওয়ার্কারের সাথে কথা বলে উনার বাসায় যাবার এবং বাকীটা সময় বাসায় থাকার ব্যবস্হা করে দেই এবং তার পরই তিনি বাসায় চলে যান। সম্ভবত এটি ৩/৪ মাস আগের ঘটনা। এই ৩/৪ মাসে তিনি শুধু একবার হসপিটালে এসে কয়েক দিন ছিলেন। বাকীটা সময় তিনি পরিবারের সাথেই ছিলেন। সিএলএসসি থেকে নার্স এসে দেখাশুনা করতো।
প্রায় সপ্তাহেই আমাদের কথা হতো। আমি খোঁজ নিয়ে জানতাম কি করছেন। বলতেন দাদা আল্লাহর মেহেরবানীতে ভাল আছি। আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি। দোয়া করবেন। মনে অনেক মনোবল ছিলো। সাহস ছিলো। আমি জিজ্ঞেস করতাম পেইনের ঔষধ খেয়েছেন কি না। বলতেন প্রয়োজন হলে খাই দাদা। পেইন কম হলে খাই না।
মনজু ভাই স্ত্রী, দুই ছেলে এবং ছয় দিনের একটি মেয়ে রেখে পরপারে চলে গেলেন গতকাল রাতে। আজ সকালে ফেইস বুকে খবরটি দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।
মনজু ভাইয়ের স্ত্রী আমাকে বড় ভাই বলে মনে করেন। ফোন করলাম। ফোন ধরে শুধু কান্না আর কান্না। কি দিয়ে শান্তনা দিবো বুঝতে পারছি না। কান্না করে বললেন দাদা আপনার মনজু ভাই আমার বুকে মাথা রেখেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। দুই মিনিট আগেও ভাল ছিলেন। বাথরুমে যাবেন বলাতে আমি নিয়ে গেলাম। বাথরুম শেষ করেই মাথাটা আমার বুকে রেখেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন। পবিত্র কলিমা পড়ে মুখে পানি দিলাম আর তখনই আপনার মনজু ভাই চীর বিদায় নিলেন।
মাত্র ৪১ বৎসর বয়সে চলে গেলেন মনজু ভাই। পরম করুনাময়ের কাছে উনার জান্নাতুল ফেরদৌস এবং আত্মার শান্তি কামনা করছি।
শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
-মন্ট্রিয়লের সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব, কমিউনিটি নেতা মনজুরুল ইসলাম মনজু’র মৃত্যুতে শোকগাথা লেখাটি শক্তিব্রত হালদার মানু-এর ফেসবুক থেকে নেওয়া এবং তা পুনঃপ্রকাশিত হলো।-সম্পাদক