ষোল আনা

করোনায় আলোচিত দশ শব্দ

করোনায় আলোচিত দশ শব্দ

করোনায় আলোচিত দশ শব্দ

বিদায়ী এ বছর পুরোটা জুড়েই আলোচিত করোনা। এই বছরে মানুষ নতুন নতুন কিছু শব্দের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে। আগে এই শব্দগুলো খুব বেশি আলোচিত ছিল না। উল্লেখযোগ্য এমন কিছু শব্দ সারাক্ষণ-এর পাঠকের জন্য তুলে ধরা হয়েছে।

লকডাউন

কলিন্স ডিকশনারি ইতিমধ্যে ‘লকডাউন’কে ২০২০ সালে সর্বাধিক ব্যবহৃত শব্দ হিসাবে ঘোষণা করেছে। এই অভিধানটি লকডাউনকে, ‘ভ্রমণ, সামাজিক যোগাযোগ এবং জনবহুল জায়গাতে যাওয়ার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ’ হিসাবে সজ্ঞায়িত করেছে। এটি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার জন্য এবং নিজের ও অন্যদের সুরক্ষার জন্য বিশ্বজুড়ে দেশগুলিতে আরোপিত বিধিনিষেধ বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। এই লকডাউনের সময়, মানুষের বাইরে বেড়োনো নিষেধ ছিল, একমাত্র জরুরি পণ্য কেনার জন্যই বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে অনুমতি ছিল শুধুমাত্র পরিবারের একজনের জন্য।

মাস্ক

মাস্কের ব্যবহার আগেও ছিল। তবে করোনার সময়ে মাস্কের ব্যবহার অনেক গুণ বেড়ে গেছে। কারণ করোনা প্রতিরোধে মাস্ককে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকার নো মাস্ক নো সার্ভিস ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ মাস্ক ব্যবহার না করলে সেবা প্রদান করা হবে না। মাস্ক ব্যবহার না করলে শাস্তির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এসব কারণে মাস্ক অনেক বেশি আলোচিত হয়েছে।

মহামারি

জনপ্রিয় আমেরিকান অভিধান মেরিয়াম ওয়েবস্টার ‘মহামারি’-কে ২০২০ সালের বছরের সেরা শব্দ হিসাবে ঘোষণা করেছে। ‘প্যানডেমিক’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ও গ্রিক শব্দ ‘প্যানডেমোস’ থেকে, যার অর্থ, ‘সাধারণ জনগণ’। এটাকে পরে ভেঙে ‘প্যান’ শব্দের অর্থ ‘অল’ এবং ‘ডেমোস’ শব্দের অর্থ ‘মানুষ’ করা হয়। এই শব্দটি একটি অসুস্থতা, যার প্রভাব বিরাটভাবে জনসংখ্যার ওপর পড়ে, যা ছড়িয়ে পড়ে সম্প্রদায় থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে- বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে। প্রসঙ্গত, গত ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও করোনা ভাইরাসকে প্যানডেমিক বা মহামারি হিসাবে ঘোষণা করার পর এই শব্দটি জরুরি সুনির্দিষ্টতা গ্রহণ করেছে এই বছর। যখন আমেরিকায় এই ভাইরাসে প্রথম মৃত্যু এবং জাহাজে এই প্রকোপ দেখা দেয় তখন এই শব্দের ব্যবহারের প্রবণতা শুরু হয়।

কোয়ারেন্টাইন

২০২০ সালের সেরা শব্দ হিসাবে কেমব্রিজ অভিধান বেছে নিয়েছে ‘কোয়ারেন্টাইন’কে। এই শব্দটি তাদের অভিধানে সবচেয়ে বেশি খোঁজা হয়েছে। এই শব্দের অর্থের সঙ্গে মিল রয়েছে আইসোলেশনের এবং এ বছর এই শব্দটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়েছে। তবে আইসোলেশনের বিপরীত, কোয়ারেন্টাইনের অর্থ হল বিচ্ছিন্ন ও সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে অন্য কেউ এসে যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়ে তার জন্য সেই ব্যক্তির চলাচলের ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা। কোয়ারেন্টাইন জারি করা হয় এমন ব্যক্তির ওপর, যিনি কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত, তার থেকে এই রোগ যাতে অন্যদের ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য তাকে আলাদা করে রাখা। ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশ কোয়ারেন্টাইন সুবিধার বন্দোবস্ত করেছিল যাতে ওই অঞ্চলের মধ্যে কারা প্রবেশ করছে তা পর্যবেক্ষণ করতে পারে।

উপসর্গহীন

শব্দটি ব্যবহার করা হয় কোভিড-১৯ রোগের নীরব বাহকদের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ কোনও ব্যক্তির উপসর্গ ছাড়াই করোনা ভাইরাস রোগটি হয়েছে। কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে, উপসর্গহীন ব্যক্তির জ্বর, শুকনো কাশি, গলা ব্যাথা, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা বা শরীরে কোনও ব্যাথার মতো উপসর্গ দেখা যায় না করোনা টেস্ট পজিটিভ আসার পরও। কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র ব্যক্তির ‘প্রিসিম্পটোমেটিক’ হতে পারে এবং কিছুদিনের মধ্যেই করোনা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। মানুষ এই উপসর্গবিহীনদের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, কারণ তারা যদি পাশ দিয়েও যান অথবা কাছে এসে কথা বলেন, তবে তিনি যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তা বোঝা যাবে না, যে কারণে অ্যাসিম্পটোমেটিক শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার হয়।

পিপিই

পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই), একটি বিশেষ ধরনের পোশাক যেটি স্বাস্থ্য কর্মী ও চিকিৎসকদের মারণ ভাইরাসের সংস্পর্শ ও এয়ার বোন কণা থেকে রক্ষা করবে। পিপিই এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যেটি সাধারণ পোশাকে শরীরের যে সব অংশ, যেমন নাক, মুখ, চোখ, হাত ও পা বেরিয়ে থাকে, তা এই পিপিই পোশাকে সম্পূর্ণভাবে ঢাকা পড়ে যাবে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় হু গ্লাভস, মেডিক্যাল মাস্ক, গগলস, ফেস শিল্ড, গাউন, রেস্পিরেটর এবং অ্যাপ্রনসহ পিপিই কিটের তালিকা করে দেয়। এটি বিশেষ করে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত মানুষদের জন্যই তৈরি করা, যারা করোনা ভাইরাস রোগীর কাছে এসে চিকিৎসার কাজে সহায়তা করছেন।

হোম অফিস

হোম অফিস বা ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’। শব্দটি করোনার কারণে বেশ আলোচিত। অফিস বাদে দূর থেকে কাজ করাকে বর্ণনা করা হয়েছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম হিসাবে। এই ধারণাটি করোনা ভাইরাস রোগের প্রকোপের পর পরই জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের সুরক্ষিত রাখতে বাড়িতে বসেই কাজ করতে বলেছে। এই ব্যাপারটি এখন এতটাই ফলদায়ক হয়ে গিয়েছে যে অনেক সংস্থাই হয়ত করোনা পরবর্তী সময়েও বাড়ি বসে কাজ বা ওয়ার্ক ফ্রম হোমকে বেশি অগ্রাধিকার দেবে।

সামাজিক দূরত্ব

সামাজিক দূরত্ব আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি শব্দ যা সাধারণত কোভিড-১৯ যুগে সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার হয়েছিল ১৯৫৭ সালে এবং তখন এটাকে বর্ণনা করে বলা হয়েছিল, যে কোনও ভাইরাসের সংস্পর্শে না আসার জন্য সামাজিক দূরত্ব প্রয়োজন। এ বছর এটি প্রযোজ্য হয়েছে কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে। করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে দূরে বা এই সময় মানুষের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সব কাজ করতে হবে। কারণ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে সামাজিক দূরত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

হ্যান্ড স্যানিটাইজার

এটি এমন একটি পদার্থ বা পণ্য যা জীবাণু হ্রাস করতে বা নির্মূল করতে ব্যবহৃত হয়। এই শব্দটি করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকায় উল্লেখ করার পরে হাত ধোওয়া এবং নিয়মিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছে। জনসাধারণকে প্রায় ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া বা অ্যালকোহল ভিত্তিক হ্যান্ড রাব বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

অক্সিমিটার

করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা জানাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সারা বছরই অক্সিমিটার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রোগীদের অক্সিজেন স্যাচুরেশান জানার জন্য হাসপাতালে এটি অহরহ ব্যবহার করা হয়। তবে করোনার এই সময়ে অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও অক্সিজেন মাপার এই ছোট যন্ত্রটি কিনেছেন।

-সারাক্ষণ


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন