প্রবাসের সংবাদ

করোনা জয়ের গল্প | মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি

করোনা জয়ের গল্প
করোনা জয়ী লন্ডনের আলমাছ খান

করোনা জয়ের গল্প | মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি ।। বিশ্বজুড়ে করোনার তাণ্ডব চলছে। করোনা সংক্রমিত হয়ে বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান বাড়ছে। উদ্ভূত এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে দুনিয়ার ও হিমশিম খাচ্ছে। তবে আশার কথা হলো করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়ে অনেকেই সুস্থ হয়ে উঠছেন।
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আলমাছ খান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি লন্ডনে থাকেন। গত মার্চ মাসে তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে তিনি এখন সম্পুন্ন সুস্থ।

সম্প্রতি টেলিফোনে তিনি তার করোনা জয়ের গল্প বলেছেন।

আলমাছ বলেন, আমার লন্ডনে তিনটি প্রতিষ্ঠান আছে। আমি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত সময় দিতাম। প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিদিন অনেক লোকের যাতায়াত ছিল। গত মার্চ মাসে আমি ফ্রান্সে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ২৭শে মার্চ লন্ডনে আসি। এরপরই আমার গলা ব্যাথা শুরু হয়। বিষয়টিকে আমি বেশি গুরুত্ব দেইনি। পরে অবশ্য গলা ব্যথা কমে যায়। তবে গলা ব্যথা থাকা অবস্থায় আমার পায়ের হাটুতে, হাতের কব্জিতে ব্যাথা অনুভব করি। যখন আমার শরীরে করোনার উপসর্গ আসে তখন আমি ভেবেছি আমার প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য যে কাজকর্ম করি তার জন্য হয়তো এইরকম ব্যাথা হচ্ছে । পরে বুঝতে পারলাম রোগটা আমার গলায় থাকেনি। গলা থেকে ফুসফুসে চলে গেছে। আমার যখন মনে হয়েছে আমার শরীরের করোনার লক্ষণ, তখন আমি এনএইচ-এ কর্মরত খালাতো ভাই ডা. আলী জাহানের পরামর্শে ৯ দিন বাসায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকি। যতদিন আমি কোয়ারেন্টিনে ছিলাম তার পরামর্শ মত লেবুর রস, রং চা খেয়েছি। তারপরও আমার শারীরিক অবনতি ঘটে।

তিনি বলেন, কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় ৮দিনের মাথায় জ্বরসর্দি, ডায়রিয়া, কাশি অনুভব করি। খালাতো ভাইয়ের পরামর্শ মত হাসপাতালে ভর্তির জন্য অ্যাম্বুলেন্স কল করি। অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষ জানায় গাড়ি আসতে চার ঘণ্টা সময় লাগবে। কিন্তু তখন আমার কাছে মনে হয়েছে ৪ ঘণ্টা বাসায় থাকা অসম্ভব হবে। তখন আমি আমার খুব কাছের এক বন্ধুকে ফোন দেই। আমার করোনা পজিটিভ শুনে সেই বন্ধু আমার ফোনে সাড়া দেয়নি। আমার চাচাতো ভাই আমার সাথে একই বাসায় থাকতো। তাকে ডেকে বলি আমার গাড়ি বের করার জন্য। আমার বাসা থেকে হাসাপাতালের দূরত্ব ১কিলোমিটার। তাই আমি নিজেই গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে যাই। সাথে চাচাতো ভাইও গিয়েছিল। হাসপাতালে যাওয়ার পথে আমার চার বার বমি হয়। আমার চাচাতো ভাই আমাকে ধরে জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার সাথে সাথে আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসকরা আমাকে আইসিইউতে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা নমুনা পরীক্ষা করে পরের দিন রেজাল্ট দিলেন আমার করোনা পজেটিভ। খবরটা শুনে মনটা ভেঙ্গে গেল। মনে মনে ভাবছিলাম এখন কেউ আমাকে দেখতেও আসতে পারবে না। আমিও কারো সংস্পর্শে যেতে পারবো না। আল্লাহর দরবারে দোয়া ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। বেচেঁ থাকার আশা প্রায় ছেড়েই দিলাম। অবস্থা খারাপ দেখে আমাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। আইসিইউতে ভয়ে দূরুদ পড়েছি। পরদিন মোবাইল ফোনে ফেইসবুক খুলে দেখি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমার জন্য স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষীরা দোয়া করছেন। সবার দোয়ায় একটু একটু করে সুস্থ হতে লাগলাম। যেন বাঁচার আশা বাড়তে থাকলো। তারপর আইসিইউ থেকে আমাকে ৪ জনের একটি রুমে নেয়া হলো। সেখানে আমি ছাড়া বাকি তিনজনই চোখের সামনে মারা গেলেন। চোখের সামনে তাদের মৃত্যু দেখে রীতিমত ভয় পেয়ে যাই। ভেবেছিলাম আমিও মরে যাবো। ভয়ে চিকিৎসকে বললাম আমাকে এই রুম থেকে অন্য রুমে নেয়ার জন্য। চিকিৎসক ডেভিড সিমকক অনেক ভালো মনের মানুষ ছিলেন। প্রথমদিন থেকে তিনি ও তার টিম আমাকে এমনভাবে চিকিৎসা দিয়েছেন, মনে হয়েছে তিনি আমার খুব আপনজন। সবসময় সাহস দিতেন, মনবল বাড়াতেন। বলতেন, আমি সুস্থ হয়ে যাবো, টেনশন করতে নিষেধ করতেন। আমার জন্য তিনি রুম পরিবর্তনের ব্যবস্থা করে দিলেন। যতদিন হাসপাতালে ছিলাম যেন প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সেবা পেলাম। হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ ছিল খুব।

৬ দিন পর চিকিৎসক ডেভিড সিমকক আমাকে বিনয়ের সুরে বললেন, যদি আমাকে ওষুধ দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়, তাহলে তারা অন্য রোগীর সেবা করতে পারবে। আর কোনো অসুবিধা হলে ফোন দেয়া মাত্র তারা বাসায় চলে যাবে। আমি রাজি হয়ে গেলাম। তিনি এও বললেন বাসায় কিছুদিন থাকলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবো। এখন আমি বাসায় আছি।

তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তির প্রথমদিন আমাকে কোন খাবার দেয়া হয়নি। পরদিন থেকে নরমাল খাবার দেয়া হয়েছে। হাসপাতালে সেবার মান দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। আমার চিকিৎসা ব্যয়ভার সম্পূর্ণ সরকার বহন করেছে।

আলমাছ বলেন, যখন আমার করোনা উপসর্গ ছিল তখন বাসার আরও তিন সদস্য আমার সঙ্গে ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কেউ আক্রান্ত হননি। আমার স্ত্রী ও চাচাতো ভাই সবসময় আমার সেবা করেছে। তারাও আক্রান্ত হননি। অথচ আমার এক বন্ধুর করোনা পজিটিভ হয়েছিলো। চিকিৎসা নিয়ে সে সুস্থ হয়েছে। কিন্তু তার মা তাকে সেবা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি করোনা পজিটিভ হয়ে মারা গেছেন।

তিনি বলেন, যারা এখনও আক্রান্ত হননি তাদের উদ্দেশ্যে আমার বার্তা হলো যদি আপনার করোনা উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে আপনি প্রথমেই কোয়ারেন্টিনে চলে যান । আর চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিন। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হন। সঠিক চিকিৎসা নিলে সুস্থ হয়ে উঠবেন। আমি নিজেও মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। করোনা আক্রান্ত হলে মনবল শক্ত রাখতে হবে। চিকিৎসদের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

– করোনা জয়ের গল্প | মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি মানবজমিন থেকে নেওয়া

 

সিবিএনএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

 

সংবাদটি শেয়ার করুন