বিশ্ব

কাবুলে ‘কেয়ামত’ বদলার হুমকি আমেরিকার

কাবুলে ‘কেয়ামত’ বদলার হুমকি আমেরিকার

ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ। কানফাটানো শব্দ। চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মানুষের মাথার খুলি বা বিচ্ছিন্ন হাত। কেউ রাস্তায় আহত অবস্থায় কাতরাচ্ছে, কেউ বা প্রিয়জনকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নালায় রক্ত মিশে পানি হয়ে উঠেছে রক্তে রঞ্জিত। গত বৃহসপতিবার কাবুল বিমানবন্দরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর পরিস্থিতির এমন বর্ণনা দিয়েছেন ভাগ্যজোরে বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শীরা। পর পর দুটি শক্তিশালী বোমায় কেঁপে ওঠে আফগানিস্তানের রাজধানী শহরটি।

এতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১১০ জন। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। নিহতের মধ্যে রয়েছে ১৩ মার্কিন সেনাও। আফগানদের উদ্ধার করতে যাওয়াই কাল হলো তাদের। এমন বর্বর হামলায় হতভম্ব পুরো বিশ্ব। তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে বিশ্ব নেতাদের কাছ থেকেও। হামলার দায় স্বীকার করেছে জিহাদি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট-খোরাসান। এরইমধ্যে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বদলা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

এদিন প্রথম হামলা হয় কাবুল বিমানবন্দরের অ্যাবি গেটকে লক্ষ্য করে। সেখানে সে সময় মার্কিন এবং বৃটিশ সেনাবাহিনী স্থানীয় লোকজনদের বিমানবন্দরে প্রবেশের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছিলেন। বোমা বিস্ফোরিত হওয়ার পরই সেখানে গুলি ছুড়তে শুরু করে আরেক হামলাকারী। আফগান সাংবাদিক বিলাল সারওয়ে জানিয়েছেন, প্রথম হামলার সময়ে অন্তত ২ জন সন্ত্রাসী অংশ নেয়। এরমধ্যে একজন আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। আর অন্যজন বন্দুক দিয়ে গুলি ছুড়তে শুরু করে। এর কয়েক মিনিট পরেই বিমানবন্দরের কাছে একটি হোটেলে দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ঘটে। সেখানে বৃটিশ কর্মকর্তারা বৃটেনে ভ্রমণ প্রত্যাশী আফগানদের বিভিন্ন দাপ্তরিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছিলেন। আগে থেকেই এমন একটি হামলার আশঙ্কা থাকলেও মানুষ দেশ ছাড়তে মরিয়া থাকায় সেখানে জড়ো হয়েছিলেন।

চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ: কাবুল বিমানবন্দরের ওই হামলার ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। হামলার পর চারদিকে শুধু লাশ পড়ে ছিল। বার্তা সংস্থা এএফপিকে একজন জানান, কাছেই এক নালায় লাশ, মাংসপিণ্ড এবং মানুষকে ছুড়ে ফেলা হয়েছে। আরেকজন জানান, বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পর সেখানে পুরো ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। গেট থেকে জনতাকে সরাতে তালেবান আকাশে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন বলেন, আমি আহত বাচ্চাকে হাতে নিয়ে এক ব্যক্তিকে ছুটতে দেখেছি। প্রত্যক্ষদর্শী নিজেও পরিবার নিয়ে বিমানে করে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু হামলার পর নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সব কাগজপত্র ফেলে দেন তিনি। বলেন, আমি বিমানবন্দরে আর যাব না। দেশত্যাগ আর ভিসা নিপাত যাক।

ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জিহাদিরা যে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় তা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। বিস্ফোরণের সময় সেখানে প্রায় পাঁচশ’ মানুষ উপস্থিত ছিল বলে জানান তারা। যারা বেঁচে যান তারাই পরে হতাহতদের স্ট্রেচারে করে সরিয়ে নিতে সাহায্য করেন। সেখানে থাকা সবার পোশাকই রক্তে ভেজা ছিল।

‘এ যেন কেয়ামত’: কাবুলের মানুষের জন্য বিস্ফোরণ অপরিচিত কিছু না। তারপরও গত বৃহসপতিবারের এই হামলা সবাইকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলার জন্য যথেষ্ট ছিল। সেখানে উপস্থিত ছিল এমন মানুষরা ওই ঘটনাকে তুলনা করেছেন কেয়ামতের সঙ্গে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার এক সাবেক কর্মী। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ ভিসাধারী এই ব্যক্তি হামলার সময় সেখানেই ছিলেন।

তিনি জানান, ওদিন সকালেই বিমানবন্দরের গেটে লাইনে দাঁড়ান। তার সঙ্গে ছিল আরও কয়েক হাজার মানুষ। গেট পাস করতে পারলেই তিনি আফগানিস্তান ছাড়তে পারবেন। টানা ১০ ঘণ্টা তাকে অ্যাবি গেটের কাছে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তবে তার গেট পাসের সময় হওয়ার আগেই সেখানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছিল কেউ আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরিয়ে নিয়েছে। কিছুক্ষণের জন্য আমি ভেবেছিলাম, আমার কানের পর্দা ফেটে গেছে এবং আমি আমার শ্রবণশক্তি হারিয়েছি। এরপরই তিনি সবথেকে ভয়াবহ অংশটির বর্ণনা দেন। বলেন, আমি দেখলাম আকাশে ছিন্নবিচ্ছিন্ন মানুষের নানা অংশ ছিটকে যাচ্ছে, যেন টর্নেডো শহরের মাঝ থেকে প্লাস্টিক ব্যাগ উড়িয়ে নিচ্ছে। বিস্ফোরণের পর সেখানে অসংখ্য মরদেহ দেখলাম, মানুষের বিচ্ছিন্ন অংশ দেখলাম। বৃদ্ধ, আহত মানুষের কাতরানো দেখলাম। শিশুরা আতঙ্কে পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল। তার ভাষায়, এই জীবনে হয়তো কেয়ামত দেখা হবে না কিন্তু কাবুল বিমানবন্দরে আমি যা দেখেছি সেটা কেয়ামতের মতোই ছিল।

২০০১ সালে তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর দেশজুড়ে সন্ত্রাসী হামলা একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়। যতভাবে সম্ভব ততভাবেই হামলা চালিয়ে গেছে তালেবান, আল-কায়েদা। শেষ দিকে এসে যুক্ত হয়েছে ইসলামিক স্টেটও। গত বৃহসপতিবারের হামলাটিও তাদেরই চালানো। গত ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানের মানুষ এসব হামলার সঙ্গে পরিচিত। হামলা হলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আসতো এবং মরদেহগুলোকে ব্যাগে ভরে নিয়ে যেতো। আহতদের হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করতো। এই দৃশ্য কাবুলবাসীর জন্য সাধারণ বিষয় ছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবারের হামলার পর ভিন্ন দৃশ্য দেখতে হয় তাদের।

রয়টার্সকে বর্ণনা দেয়া এক কর্মী বলেন, হামলার পরে কেউ ছিল না যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। কেউ আসেনি আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে বা নিহতদের সৎকারের ব্যবস্থা করতে। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর স্বাভাবিক প্রক্রিয়াগুলোও আর চলছে না সেখানে। সেখানে থাকা বেঁচে যাওয়ারাই শেষে হতাহতদের একটা গতি করার চেষ্টা করেছেন। ওই ব্যক্তি আরও জানান, মরদেহগুলো পাশের নালায় ফেলে দিতে হয়েছে। পুরো নালা রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিল। আহতরা রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছিলেন। তার দাবি, শারীরিকভাবে আমি হয়তো ঠিক আছি। কিন্তু আমার মনে হয় না যে মানসিক আঘাত আমি পেয়েছি তাতে কখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো।

প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা জো বাইডেনের: কাবুল বিমানবন্দরে বোমা হামলার প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ হামলার জন্য তিনি ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রভিন্স (আইএসকেপি)-কে দায়ী করেছেন। সংগঠনটিও দায় স্বীকার করেছে। পেন্টাগন বলেছে, গত বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল বিমানবন্দরে এক জটিল (কমপ্লেক্স) হামলা হয়েছে। এতে বহু মানুষ নিহত হয়েছে। সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে বাইডেন বলেন, আমরা তোমাদের দেখে নেবো। এর জন্য মূল্য দিতে হবে তোমাদের। আমার কমান্ডের অধীনে প্রতিজন মানুষকে রক্ষা করবো আমাদের স্বার্থে। তিনি হামলাকারীদের আলাদা আলাদা করে চিহ্নিত করারও অঙ্গীকার করেন। বলেন, আমরা ক্ষমা করবো না, আমরা ভুলবো না। আমরা তোমাদের খুঁজে বের করবো এবং এজন্য তোমাদের চরম মূল্য দিতে হবে।

এক দশকের মধ্যে মার্কিন বাহিনীর ওপর সবথেকে বড় হামলা: আফগানিস্তানে মার্কিন সেনারা আছে ২০ বছর ধরে। এরমধ্যে অসংখ্য ভয়াবহ হামলার মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। তবে কাবুল বিমানবন্দরের হামলা ছিল মার্কিন বাহিনীর জন্য গত এক দশকের মধ্যে সবথেকে বেশি রক্তাক্ত। এরআগে ২০১১ সালের ৬ই আগস্ট তালেবানের হামলায় মার্কিন হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ৩০ সেনা নিহত হয়েছিলেন। এরপর কাবুল বিমানবন্দরে ১৩ সেনা হারানোই মার্কিন বাহিনীর জন্য সবথেকে মর্মান্তিক ঘটনা। হামলায় এক ডজনেরও বেশি মার্কিন সেনা আহত হয়েছেন। একইসঙ্গে তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তির পরে এটাই প্রথম কোনো মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা আফগানিস্তানে।

তোপের মুখে বাইডেন: এ ঘটনা নিয়ে এরইমধ্যে তোপের মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের অনেকেই তার পদত্যাগ দাবি করেছেন। আবার অনেকেই করেছেন তার অভিশংসন দাবি। বাইডেনের সমালোচনায় যুক্ত হয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও। মিলিশিয়াদের হাতে কাবুলের পতনের পর থেকেই বাইডেনের সমালোচনা করছেন ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবারের হামলাকে তিনি ট্র্যাজেডি বলে আখ্যায়িত করেন। বলেন, এ ধরনের বিয়োগান্ত ঘটনা কখনোই ঘটতে দেয়া উচিত হয়নি। এই হামলায় তাদের মর্মপীড়া আরও গভীর হয়েছে। এই হামলা ঠেকানো উচিত ছিল।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরির রিপাবলিকান সিনেটর জস হাউলি বলেন, এ ঘটনার জন্য বাইডেন দায়ী। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে বাইডেনের নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা বা ইচ্ছা কোনোটাই নেই। তার অবশ্যই পদত্যাগ করা উচিত। মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্য এলিস স্টেফানিক এক টুইটে লিখেছেন, বাইডেনের হাত রক্তে রঞ্জিত। এই ভয়াবহ জাতীয় নিরাপত্তা ও মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা শুধু বাইডেনের দুর্বল ও অক্ষম নেতৃত্বের ফল। তিনি ‘কমান্ডার ইন চিফ’ হওয়ার অযোগ্য। প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাকার্থি বলেন, জীবন রক্ষার জন্য কংগ্রেসের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়।

এদিকে সমালোচনার জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন বাইডেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের করা চুক্তি বাস্তবায়ন করতে গিয়েই তাকে ৩১শে আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

তীব্র নিন্দা কানাডার প্রধানমন্ত্রীর: বৃহস্পতিবার কাবুলে হামিদ কারজাই বিমানবন্দরে ভয়াবহ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। বলেছেন, হায়েনাদের মতো এই হামলায় অনেক নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এসব মানুষ দেশ ছেড়ে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ছিলেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন উদ্ধার অভিযান পরিচালনায় সহায়তাকারীরাও। এর মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্রের সার্ভিস সদস্য ও মেডিকেল স্টাফরা। ট্রুডো বলেন, আফগান জনগণ এবং এই কাণ্ডজ্ঞানহীন হামলায় আক্রান্ত সবার প্রতি আমাদের সহানুভূতি। যারা নিহত হয়েছেন, তাদের প্রতি ও তাদের পরিবারের প্রতি আমাদের শোক। যারা আহত হয়েছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। উল্লেখ্য, এরই মধ্যে আফগানিস্তান থেকে উদ্ধার অভিযান সম্পন্ন করেছে কানাডা। তবে এখনো আফগানিস্তানে কি পরিমাণ কানাডিয়ান আছেন, তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। আগামী মাসে কানাডায় নতুন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ট্রুডো। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি কানাডায় ২০ হাজার আফগানকে আশ্রয় দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

অব্যাহত থাকবে সেনা প্রত্যাহার: প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, আফগানিস্তানে জিহাদী হামলা সত্ত্বেও কাবুল থেকে লোকজনকে মার্কিন বিমানে করে সরিয়ে নেয়ার অভিযান অব্যাহত থাকবে। বাইডেনের ভাষায়, আমাদেরকে এই অভিযান সম্পন্ন করতেই হবে এবং আমরা তা করবো। গত ১৫ই আগস্ট কাবুল তালেবানের দখলে চলে যাওয়ার পর সেখান থেকে এখন পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ৩১শে আগস্টের মধ্যে সকল মার্কিন সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে যাবে। তবে অনেক আফগানই ওই সময়ের মধ্যে দেশ ছাড়তে বিমানবন্দরে ছুটে আসছেন। বাইডেন এই অভিযান সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, আমরা সন্ত্রাসীদের কারণে পিছ পা হবো না।

যদিও বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ওই হামলার কারণে ৩১শে আগস্ট সময়সীমার মধ্যে মার্কিনীদের প্রত্যাহারের অভিযান বেশ জটিল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে কাবুল বিমানবন্দরের মাটিতে ৫,৮০০ মার্কিন সৈন্য এবং আরও ১,০০০ বৃটিশ সৈন্য রয়েছেন। এখন পর্যন্ত আফগানিস্তান থেকে ১ লাখ ৪ হাজার বেসামরিক নাগরিককে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৬৬,০০০ জনকে যুক্তরাষ্ট্রে এবং ৩৭,০০০ জনকে বিভিন্ন মিত্র এবং অংশীদার দেশে পাঠানো হয়েছে। প্রায় ৫,০০০ মানুষ বিমানবন্দরে এখনো অপেক্ষা করছেন এবং আরও অনেকে তল্লাশি চৌকি পার হওয়ার চেষ্টা করছেন। কানাডা, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস এবং ডেনমার্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইতিমধ্যে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।
এদিকে, তুরস্কও ঘোষণা করেছে যে, তারা তাদের সৈন্যদের সরিয়ে নেবে। তুর্কি বাহিনী ৬ বছর ধরে কাবুল বিমানবন্দরকে তালেবানের কাছ থেকে নিরাপদ রেখেছে। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এই সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি সভায় সভাপতিত্ব করেন। ওই বৈঠকে তিনি বলেন, বৃটেন তাদের লোকজন সরিয়ে নেয়ার ফ্লাইট চালু রাখবে।

আবারও সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা: ভয়াবহ হামলার একদিন পরেই আবার আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য গত বৃহস্পতিবার থেকেই তারা উদ্ধার অভিযান জোরালো করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাকেনজি বলেছেন, মার্কিন কমান্ডারদের সতর্ক রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিমানবন্দরের দিকে রকেট বা যানবাহন থেকে বোমা ছোড়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে। মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক কামান্ডার মাইক জ্যাকসন জানান, এ রকম হামলা হবে তা সকলেই জানতেন। তার ধারণা আইসিস-খোরাসান দেশত্যাগী মানুষের ওপর ‘নিশ্চিতভাবে’ আরেকটি হামলা চালাবে। তাদের হাতে অস্ত্র ও সরঞ্জাম আছে এবং তাদের ঐ এলাকায় হামলা চালানোর সক্ষমতা আছে। তাদের লক্ষ্যবস্তু হলো নিরস্ত্র মানুষ যারা দেশ ছাড়তে মরিয়া। এদিকে রাশিয়া আবারও জিহাদি হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। ক্রেমলিন থেকে জানানো হয়েছে, এখনো বিপদের সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং ইসলামিক স্টেট আফগানিস্তানকে অস্থিতিশীল করতে সক্রিয় রয়েছে। প্রতিবেশি দেশগুলোতে যাতে জিহাদিরা প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য কাজ করে যাচ্ছে রুশ গোয়েন্দারা। এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।

বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া: কাবুল বিমানবন্দরের ভয়াবহ জিহাদি হামলা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। সব থেকে কড়া প্রতিবাদ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ১৩ মার্কিন সেনা হত্যার প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি এই হামলা নিয়ে নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও জোট। ন্যাটোর মহাসচিব স্টলটেনবার্গ এ নিয়ে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেন। টুইটারে দেয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, আমি এই নৃশংস হামলার কঠিন নিন্দা জানাই। ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইলো। আমাদের এখন সবার আগে লক্ষ্য হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব মানুষদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া।

হামলার পর বৃটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের টুইটার থেকে জানানো হয় যে, কোনো বৃটিশ সেনাসদস্য বা কর্মকর্তা এই হামলায় হতাহত হননি। হামলা নিয়ে গতকাল শুক্রবার বিশেষ বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি এই হামলাকে ‘বর্বরতা’ বলে আখ্যায়িত করেন। জনসন বলেন, বৃটিশ উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এই হামলাই প্রমাণ করে এই উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা কতটা জরুরি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কাবুল বিমানবন্দরে হামলা নিয়ে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসীদের দোসরদের বিরুদ্ধে বিশ্বের যে এক হয়ে কাজ করা উচিত তাই আবারও প্রমাণ করলো এই হামলা। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অসিম ইফতেখার এই হামলাকে জঘন্য কর্মকাণ্ড বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি হামলার নিন্দা ও হতাহতের পরিবারের প্রতি শোক জানান।

শুক্রবারেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নাফটালি বেনেটের। কাবুল বিমানবন্দরের হামলা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীও। টুইটারে তিনি মার্কিন সেনাদের নিহত হওয়া নিয়ে শোক জানান। তিনি লিখেছেন, ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সকল কঠিন সময়ে পাশে আছে। যুক্তরাষ্ট্রও সবসময় ইসরাইলের পাশে ছিল। ইউরোপীয় দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নও এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন টুইটারে এই হামলাকে কাপুরুচিত এবং বর্বর বলে আখ্যায়িত করেন। সঙ্গে উল্লেখ করেন, কাবুল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য যা যা দরকার তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আফগানিস্তানসহ সমগ্র বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ থামাতে আন্তর্জাতিক মহলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

হামলার নিন্দা জানিয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনো জটিল ও ভঙ্গুর। এক বিস্ফোরণ নিয়ে চীন হতভম্ব। এছাড়া এই হামলার আরও নিন্দা জানিয়েছে কাতার, জর্ডান, বাহরাইন, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স, সেপন, তুরস্ক, ইতালি, সুইডেন, নরওয়ে, চেক প্রজাতন্ত্র ও ইউক্রেন।

-মানবজমিন

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন