প্রবাসের সংবাদ

কানাডায় প্রতি ঘন্টায় বাড়ছে – লকডাউন নিউইয়র্ক

লকডাউন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, New York

করোনাভাইরাস :কানাডায় প্রতি ঘন্টায় বাড়ছে – লকডাউন নিউইয়র্ক ।।  নিউইয়র্ক ২জন বাংলাদেশীর মৃত্যু ।।ইতালিতে করোনা আক্রান্ত প্রথম বাংলাদেশির মৃত্যু ।।ভালো নেই পাকিস্তান, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ।।করোনা আতঙ্কে বাড়ছে বিভেদ, কমছে মানবিকতা ।।বাংলাদেশেপোশাক খাতে  একের পর এক স্থগিত হচ্ছে অর্ডার ।।১০০০০ ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা ।। কানাডায় প্রতি ঘন্টায় রোগির সংখ্যা বাড়ছে। 

কানাডায় প্রতি ঘন্টায় বাড়ছে – লকডাউন নিউইয়র্ক

কানাডায় প্রতি ঘন্টায় বাড়ছে লকডাউন নিউইয়র্ক  ।। করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন নিউইয়র্ক অর্থাৎ লকডাউন করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহর। গত এক সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী করোনভাইরাস থেকে মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শুক্রবার সকালে নিউইয়র্কের রাজ্য গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো ‘লকডাউন লকডাউন নিউইয়র্ক’ এর নির্দেশ ঘোষণা দেন। এ নির্দেশনা স্থানীয় সময় রোববার রাত ৮টা থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। আদেশ লঙ্ঘনকারীদের জরিমানা গুনতে হবে।

নিউইয়র্ক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বলেন, রাজ্যের সকল কর্মীকে প্রয়োজনীয় সকল ধরণের সেবা দেওয়া হবে। প্রত্যেকে বাড়িতে নিরাপদে থাকুন এবং সরকারি আইন মানুন। যদি কেউ “লকডাউন নিউইয়র্ক” আইন মেনে না চলেন তাহলে তাদের জরিমানা গুণতে হবে। ২জন বাংলাদেশীর মৃত্যু ঘটেছে আরো   ১২ জনের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন।

কানাডায় প্রতি ঘন্টায় বাড়ছে রোগির সংখ্যা আতঙ্কে সারা দেশ

কানাডার গ্লোবাল নিউজের মাধ্যমে জানা গেছে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত সংক্রামিত রোগির সংখ্যা এক হাজারের উপরে চলে গেছে যা প্রতি ঘন্টায় সংখ্যা বেড়েই চলছে।  ব্রিটিশ কলম্বিয়া, অন্টারিও এবং আলবার্টায়  সবচেয়ে বেশি ।  শুক্রবার অবধি বিসিতে ৩৪৮, অন্টারিওতে ৩১১, আলবার্টায় ১৯৫, ক্যুইবেকে ১৩৯,  সাস্কুচান ৮, প্রিন্স এড্ওয়ার্ড অ্যায়াল্যান্ড ১, নিউফান্ডল্যান্ড এন্ড ল্যাবরেডর ১, আক্রান্ত রয়েছেন। ১২ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন।  সর্বমোট ১০৪৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন । করোনা ভাইরাসে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিসিতে ৮, আলবার্টা ১ অন্টারিও ২ এবং ক্যুইবেকে ১জনের মৃত্যু হয়েছে।

ইতালিতে করোনা আক্রান্ত প্রথম বাংলাদেশির মৃত্যু

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতালির মিলানে গোলাম মাওলা (৬০) নামে এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এটি ইতালিতে এই রোগে প্রথম কোনো বাংলাদেশির মৃত্যু।

করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণ করা গোলাম মাওলার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী।

মরণব্যাধি করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ইতালিতে। গত  ২৪ ঘণ্টায় ৬২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ইতালিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪ হাজার ৩২ জনে। এছাড়াও কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৯৮৬ জন। এ নিয়ে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ২১ জন।

ইউরোপের দেশটিতে এখনও ৩৭ হাজার ৮৬০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদের মধ্যে অন্তত ২ হাজার ৬৫৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন প্রায় ৫ হাজার ১২৯ জন।

করোনা আতঙ্কে বাড়ছে বিভেদ, কমছে মানবিকতা

অনিতা চৌধুরী, কলকাতা প্রতিনিধি

করোনাভাইরাসের আতঙ্কে মানুষ যে কিভাবে নিজের মনুষ্যত্ব হারাচ্ছেন তার প্রমাণ পেয়েছেন কলকাতার অদূরে চুঁচুড়ার বাসিন্দা এক অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার। গ্রামে চিরকাল মাথা উঁচু করে থাকতেন ওই ইঞ্জিনিয়ার। কারণ তার ছেলে ভারতের বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে পাশ করে ইতালিতে পিএইচডি করতে যান। আর সেই ছেলে বাসায় ফিরেন ৯ মার্চ। এরপর থেকে যেন পাল্টে গেল চিত্র।

এয়ারপোর্টে তাকে স্ক্রিনিং হয়েছিল। গ্রামের হাসপাতালেও স্ক্রিনিং করা হয় ইতালি থেকে ফেরার কারণে। তার কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু গতকাল জ্বর আসে, শুরু হয় গলা ব্যাথাও। ওই ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ওই সময় সবাই আমাকে বললেন ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে। গ্রামের কেউ এগিয়ে আসেননি আমার ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। স্কুটারে করে আমি একা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তিনি বলেন, পাশের বাসার এক ভদ্রলোককে যখন অনুরোধ করা হয়, গাড়ি করে ছেলেকে হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য, উনি বলেন করোনার ভয় আছে। আমি পারবো না।

ইতালি থেকে ফেরার পরে তার ছেলের করোনর টেস্ট করা হয়। কিন্তু তার শরীরে করোনা পাওয়া যায়নি। তবুও গ্রামের মানুষ কোনো সাহায্য করেননি। গতকাল আবারো তার পরীক্ষা হয়। তাতেও করোনা পাওয়া যায়নি।

শুধু এই একটি ঘটনা নয়, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই রকম অনেক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে যাতে প্রমাণিত হয় আতঙ্ক মানুষের বিজ্ঞানমনস্কতা আর মনুষ্যত্বকে গ্রাস করেছে।
উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে কিছু মানুষ প্রতিবাদ করেন; যখন আসাম থেকে ওই অঞ্চলের কিছু বাসিন্দা ফেরত আসেন। তাদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় তাদের গ্রামে এবং পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তারা নিজেদের বাসায় যান।

গতরাতে নদীয়ার শান্তিপুরে ৪৫ জন শ্রমিক পুনে থেকে ফিরে নিজেদের গ্রামে যাওয়ার সময় এক বিচিত্র সমস্যার সম্মুখীন হয়। কিছু গ্রামবাসী তাদের রাস্তা আটকান এবং বলেন আগে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। কারণ তারা মহারাষ্ট্র থেকে আসছেন এবং সেখানে কিছু মানুষের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ওই শ্রমিকের দল বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেন তারা কেউ জ্বরে আক্রান্ত নয় এবং ট্রেনে আসার সময় বেশ কয়েক জায়গায় থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাদের পরীক্ষা হয়। কিন্তু সারারাত আটকে রাখা হয় ওই শ্রমিকদের।

শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হসপিটালের এক কর্মকর্তা জানান, শুধু এই ৪৫ জন নয়, আরো প্রায় একশো মানুষকে জোর করে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসেন লোকজন। তাদের কারো মধ্যে আমরা করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো উপসর্গ পায়নি। তার মতে, আতঙ্কে মানুষ বাড়াবাড়ি করছেন এবং অন্যদের মধ্যে সেই আতঙ্ক ছড়িয়ে সমাজে এক অশান্তির পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন।

তিনি বলেন, সব গ্রামে স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মচারীরা আছেন। পঞ্চায়েতের কর্মচারীরা আছেন। তারা নজর রাখছেন যারা বাইরে থেকে আসে তাদের ওপরে। সাধারণ মানুষ নিজেদের সুস্থ রাখুন। অযথা আতঙ্ক ছড়াবেন না।

কলকাতার এক সমাজবিজ্ঞানী বলেন, এই ঘটনাগুলো খুব দুঃখজনক। এসব ঘটনা আরেকবার প্রমাণ করে মানুষ অশিক্ষার কারণে কতটা স্বার্থপরের মতো আচরণ করছে। এই পরিস্থিতি খুব উদ্বেগের। সরকারের পক্ষ থেকে মানুষকে বোঝানো উচিত যে, আতঙ্ক দিয়ে করোনাভাইরাস ঠেকানো যাবে না। এই লড়াই লড়তে হবে সচেতনতা দিয়ে।

ভালো নেই পাকিস্তান, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা

করোনার সময়ে ভালো নেই পাকিস্তান। দেশটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। শেষ পাওয়া তথ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০। বিশ্বজুড়ে মহামারি নভেল করোনাভাইরাসে পাকিস্তানে এরই মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

গত বুধবার প্রথম দু’জনের মৃত্যু হয়। আর আজ আরো একজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। প্রথমে আক্রান্তের সংখ্যা কম থাকলেও আজ শুক্রবার পাকিস্তানে সব থেকে বেশি আক্রান্তের খবর মেলে। বৃহস্পতিবার দেশটির বালুচিস্তানে এক লাফে আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ থেকে বেড়ে ৮১ হয়ে গেছে। একই অবস্থা পঞ্জাব প্রদেশেও। সেখানেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ডন পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই প্রদেশে বৃহস্পতিবার আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ থেকে এক লাফে হয়ে যায় ৭৮। পাকিস্তানের সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সিন্ধ প্রদেশের। আক্রান্ত ২৪৫ জন। খাইবার-পাখতুয়ানে আক্রান্ত ২৩ এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিয়ে আক্রান্ত ২৪। দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদের পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো। সেখানে আক্রান্ত এখনো পর্যন্ত দু’জন।

এদিকে, করোনা ঠেকাতে পাকিস্তান দু’সপ্তাহের জন্য ভারত-পাকিস্তানের ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ইমরান খান সরকার সব রকমের প্রস্তুতি নিয়েছে করোনা মোকাবেলায়।

পশ্চিম পাকিস্তানে ইরান ও আফগানিস্তান সীমান্তও সিল করে দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান সরকারের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শদাতা জাফর মির্জা জানিয়েছেন, পাকিস্তানের চিকিৎসকরা চীনের চিকিৎসকদের থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

পাকিস্তানের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী নুর উল হক কোয়াদরি জানিয়েছেন, করোনা মোকাবেলায় হজ যাত্রা স্থগিত করার পাশাপাশি সব মসজিদে জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

 বাংলাদেশেপোশাক খাতে  একের পর এক স্থগিত হচ্ছে অর্ডার

করোনা ভাইরাসের কারণে একের পর এক অর্ডার স্থগিত করেছে পোশাক খাতের তিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে এইচঅ্যান্ডএম, টেসকো ও এমঅ্যান্ডএসের মতো বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছে। এছাড়া আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো লকডাউন ঘোষণা করছে। ভাইরাসটির কারণে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। জার্মানিও ধুঁকছে। আর বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করায় পোশাকের চাহিদাও কমে গিয়েছে। অনেক পোশাকের ব্র্যান্ড তাদের শত শত বিক্রয়কেন্দ্র ঘোষণা দিয়ে বন্ধ রেখেছে।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্যমতে, ২০ প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১ কোটি ৭২ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যতের ক্রয়াদেশও বাতিল করছে। তবে ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠান চলমান ক্রয়াদেশ বাতিল করে দিচ্ছে। ইউরোপের ক্রেতারাই মূলত ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারাও সেই পথে হাঁটতে পারেন বলে সূত্র জানায়।

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক  বলেন, শুধুমাত্র দুই-তিনটি প্রতিষ্ঠান নয়, বেশিরভাগ ক্রেতারা ক্রয় আদেশ স্থগিত করছে। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের কাছ থেকে চলমান ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিলের খবর আসছে। শিগগিরই সংগঠনের পক্ষ থেকে স্থগিত হওয়া ক্রেতাদের একটি তালিকা তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, এমন সময়ে অর্ডার বাতিল হচ্ছে যখন সামনে ঈদ। এ অবস্থায় তৈরি পোশাক খাত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বলতে পারছি না।

এদিকে পোশাক রপ্তানির বড় বাজার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় আরো ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, একের পর এক চলমান ক্রয়াদেশ স্থগিত করছে ক্রেতারা। বাতিলের সংখ্যাও বাড়ছে। নতুন ক্রয়াদেশও আসছে না। এমনটা চলতে থাকলে কারখানা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

আরেক উদ্যোক্তা বলেন, ক্রেতারা একের পর এক ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিল করছে। নতুন ক্রয়াদেশ দিচ্ছে না। অবস্থা যে পর্যায়ে যাচ্ছে, তাতে বড় কারখানায় দুই মাস পর কোনো কাজ থাকবে না। ছোট ও মাঝারি কারখানা তার আগেই বসে যাবে।

করোনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিজেদের সদস্যের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশের তথ্য নিচ্ছে পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।

বিজিএমইএ’র বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, সর্বশেষ ৪ ঘণ্টায় বিজিএমইএর সদস্য ২০ প্রতিষ্ঠানের ১ কোটি ৭২ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। স্থগিত হয়েছে ১৩ লাখ ৩৮ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশ। ২০ প্রতিষ্ঠানের কারখানাগুলোর মধ্যে আছে আমান গ্রাফিকস অ্যান্ড ডিজাইনস, এসকোয়্যার নিট কম্পোজিট, আমান নিটিং, খানটেক্স ফ্যাশনস লিমিটেড, মেহনাজ স্টাইলস অ্যান্ড ক্রাফট, বিটপি, ডেকো লিগ্যাসি গ্রুপ, এসএফ ডেনিম, ভার্সেটাইল অ্যাটায়ার, অ্যামেজিং ফ্যাশনস, শাইনেস্ট অ্যাপারেলস, এপেক্স হোল্ডিংস, রুমানা ফ্যাশন, স্কাইলাইন গার্মেন্টস, ক্রসওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ, নিট এশিয়া, তুর্কি ফ্যাশনস, কে গার্মেন্টস, সালেক টেক্সটাইল, আলটিমেট ফ্যাশন, ডেনিম এশিয়া, মোটেক্স এপিএস ও মোটেক্স ফ্যাশন।

জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলো বাংলাদেশি পোশাকের বড় বাজার। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে ৬১.৯১ শতাংশ বা ২ হাজার ১১৩ কোটি ডলারের পোশাকের গন্তব্য ছিল ইইউভুক্ত দেশ। আর যুক্তরাষ্ট্রে গেছে ৬১৩ কোটি ডলারের পোশাক।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ইউরোপের ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত আমাদের সদস্য কারখানার ৭৩ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ স্থগিত করছে। আশঙ্কা করছি, সেটি ১ কোটি ডলারে চলে যাবে। আমার পোল্যান্ডের এক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান দু’দফার রফতানি আদেশ বাতিল করেছে। এরমধ্যে একটি আদেশ ছিল ২ লাখ ২০ হাজার ডলারের। আরেকটি আদেশ ছিল ২ লাখ ডলারের। তিনি জানান, করোনার কারণে এখন প্রতিদিন, প্রতি ঘণ্টায় রপ্তানি আদেশ বাতিল বা স্থগিতের মেইল পাচ্ছেন গার্মেন্ট মালিকরা।

এদিকে শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনের আন্তর্জাতিক জোট ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন (সিসিসি) পোশাকশ্রমিকের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার ওপর করোনা ভাইরাসের প্রভাব সীমিত পর্যায়ে রাখতে ক্রেতাদের জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে সিসিসি বলেছে, করোনার কারণে বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ ও চাহিদা কমে যাওয়ায় ক্রেতারা ক্রয়াদেশ হ্রাস করতে থাকলে অনেক কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ হতে পারে। সেই পরিস্থিতিতে শ্রমিকের মজুরি নিয়মিত পরিশোধের বিষয়টি ক্রেতাদের নিশ্চিত করতে হবে।

১০০০০ ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা, লকডাউন নিউইয়র্ক!

অনিম আরাফাত

করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা ১০০০০ ছাড়িয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষদিকে ভাইরাসটি চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এটি ছড়িয়েছে মোট ১৭৮টি রাষ্ট্র ও অঞ্চলে। শুক্রবার পর্যন্ত করোনায় বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছেন আড়াই লাখ মানুষ। এরমধ্যে সমপূর্র্ণ সেরে উঠেছেন ৮৮,৪৮৮ জন ও এখনো চিকিৎসাধীন আছেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ। গত ১১ই মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাসকে বিশ্ব মহামারী ঘোষণা করে। এ প্রতিবেদন লেখার পূর্বের ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন নতুন করে ২৬,১৩৯ জন এবং প্রাণ হারিয়েছেন ১,১০৩ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন ৩৬.১ শতাংশ।

এখনো চিকিৎসাধীন আছেন ৫৯.৮ শতাংশ। অপরদিকে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর হার ৪.১ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে ৭০ টি দেশে করোনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে বৃহসপতিবার করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর জানিয়েছে, পেরু, মেক্সিকো, রাশিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও তিউনেশিয়া। এখন পর্যন্ত যত মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছে তারমধ্যে একক রাষ্ট্র হিসেবে সবার ওপরে রয়েছে চীন। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৮০ হাজার মানুষ। দেশটিতে করোনা সংক্রমণে মারা গেছেন ৩২৪৮ জন। তবে সেখানে আক্রান্তদের প্রায় সবাই সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের হার শূন্যে নামিয়ে এনেছে চীন। উহান ছাড়তে শুরু করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বিভিন্ন বাধানিষেধ তুলে দেয়া হচ্ছে। ফলে চীনে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরে আসছে দ্রুত।

অপরদিকে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকে চীনের বাইরে দ্রুত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। শুক্রবার পর্যন্ত মোট আক্রান্তের ৬৭ শতাংশই চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরের যার সংখ্যা ১ লাখ ৬৪ হাজারের কিছু বেশি। গত এক সপ্তাহে যত মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ৯৯.৮ শতাংশই চীনের বাইরের দেশগুলোতে। অর্থাৎ করোনা ঝুঁকি থেকে চীন নিজেকে মুক্ত করলেও পুরো বিশ্ব এখন আরো বড় সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
চীনের বাইরে করোনা ভাইরাস বিস্তারের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ইউরোপের দেশ ইতালি। দেশটিতে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪১ হাজারের বেশি মানুষ। প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪০৫ জন। এরমধ্যে বৃহসপতিবার একদিনেই মারা গেছেন ৪২৭ জন। এতে করে মৃতের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে গেছে দেশটি। ইতালি ছাড়াও ইউরোপের অন্য দেশগুলোতেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাস। শুক্রবার পর্যন্ত জার্মানিতে ১৫,২৩০, সেপনে ১৮,০৭৭, ফ্রান্সে ১০,৯৯৫, বৃটেনে ৩২৬৯ ও সুইজারল্যান্ডে ৪২২২ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।

প্রথমদিকে সংক্রমণ ধীর গতিতে হলেও গত এক সপ্তাহে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ১৩,৮৮০ জন এবং প্রাণ হারিয়েছেন ২০০ মার্কিনি। এছাড়া এশিয়ার দেশ ইরান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাপক করোনা সংক্রমণ হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৮৬৬২ জন। তবে দেশটি গত কয়েক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। অপরদিকে ইরানে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১৮,০৪৭ জন মানুষ। এরমধ্যে মারা গেছেন ১২৮৪ জন। সেখানে প্রতি ঘণ্টায় আক্রান্ত হচ্ছেন অর্ধশতাধিক মানুষ এবং প্রতি ১০ মিনিটে প্রাণ হারাচ্ছেন একজন। করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যই। সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার ও ইরাকে দ্রুত বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সংক্রমণ থামাতে দেশগুলোতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে মসজিদ। অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে সৌদির বেশ কয়েকটি অঞ্চল।

দক্ষিণ এশিয়ায় সবথেকে ভয়াবহ অবস্থা পাকিস্তানের। ২০ কোটি মানুষের দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫০০। পাকিস্তানে করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৩ জন। প্রতিবেশি ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৯৮ জন। সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৪ জন। শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে আক্রান্ত হয়েছে যথাক্রমে ৫৯ ও ২০ জন। এছাড়া, নেপালে একজন ও ভুটানে দুইজন আক্রান্ত হয়েছেন করোনা ভাইরাসে।

 



সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × three =