কিউইদের উড়িয়ে আরো উঁচুতে
এই প্রথম টানা তিন টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল বাংলাদেশ
নিউজিল্যান্ড : ১৯.৩ ওভারে ৯৩
বাংলাদেশ : ১৯.১ ওভারে ৯৬/৪
ফল : বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
সাইদুজ্জামান ।। সিরিজের আগে মিরপুরের উইকেট ১৫০-১৬০ রানের মনে হয়েছিল মাহমুদ উল্লাহর। কিন্তু সেই তিনি গতকাল উইনিং স্ট্রোক খেলেছেন ম্যাচের ৫ বল আগে। যদিও টার্গেট ছিল মোটে ৯৪ রান। এতে বাংলাদেশ দলের একমাত্র লক্ষ্যও পূরণ হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার পর নিউজিল্যান্ড সিরিজও জেতা হয়ে গেছে। আগামীকাল অনুষ্ঠেয় শেষ ম্যাচে ব্যবধানটাই শুধু নিশ্চিত হবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তাসমান সাগরের ওপারের অস্ট্রেলিয়ার মতো কিউইদের ভাগ্যেও ৪-১ লেখা আছে!
টি-টোয়েন্টির প্রচলন হতেই ক্রিকেট শুদ্ধবাদী সমাজে ‘গেল’ ‘গেল’ রব উঠেছিল। যেমনটা ‘পাবজি’, ‘ফ্রি ফায়ার’ টাইপ অনলাইন গেমস নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকমহল। কে জানে কোনো এক দিন হয়তো অনলাইন গেমিংয়ের উৎপাত গা-সওয়া হয়ে যাবে সনাতনি অভিভাবকদের। শুদ্ধবাদীরাও যেমনটি টি-টোয়েন্টির ধামাকা ক্রিকেটে এক ধরনের রোমাঞ্চ খুঁজে পেতে শুরু করেছেন, যার অন্যতম কারণ যুগের সঙ্গে তাল মেলানো।
এক ধরনের রোমাঞ্চ তো আছে। মুহুর্মুহু গ্যালারিতে বল আছড়ে পড়া, ডিজের ঝংকার মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি মজাদার ক্রিকেট। কিন্তু মিরপুরে শুধু ডিজেই একা যান্ত্রিক গলা ফাটিয়ে গেল! করোনার কারণে মাঠে দর্শক নেই। দূরের একটি উঁচু দালানে টাইগার শোয়েবসহ গোটা তিরিশেক দর্শক, যাঁরা যেকোনো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ দলের উচ্চকিত সমর্থক। আর প্রেসিডেন্ট বক্সের এক সারি ভিআইপি দর্শকের ডিজের সুরে ঢেউ তোলা শোভন নয়। মাহমুদ নিজেও জয়সূচক বাউন্ডারির পর আনন্দে বাতাসে ঘুষি মারতে গিয়েও যেন মারলেন না।
যে দলটির বিপক্ষে এবারই প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়, সঙ্গে সিরিজও; এত বড় উপলক্ষেও অধিনায়কের সংযত থাকার বোধগম্য কারণ একটাই হতে পারে—মিরপুরের টি-টোয়েন্টি অনুপযোগী উইকেট। সিরিজের এখনো একটি ম্যাচ বাকি। তাতেই নিউজিল্যান্ড দুইবার আর বাংলাদেশ একবার অলআউট হয়েছে এক শ রানের নিচে। গতকাল ৯৩ রানের বাধা টপকাতে গিয়েও স্বাগতিকদের নাভিশ্বাস ওঠা দেখে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আসক্ত যে কেউ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারেন।
ডিপ্রেশনে বাংলাদেশ দলও চলে যেত হয়তো, যদি দলকে কাঁধে করে শেষ ল্যাপ অতিক্রম করা মাহমুদকে স্টাম্পিংয়ের সুযোগটা হাতছাড়া না করতেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম লাথাম। মিরপুরের উইকেট সকাল থেকেই এমন খেয়ালি যে এই ২২ গজে কোনো ব্যাটসম্যানকেই সেট মনে হয় না। ৪৩ রানে অপরাজিত থাকা বাংলাদেশ অধিনায়ক তাঁর ৪৮ বল স্থায়ী ইনিংসে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ দেওয়া ছাড়াও ধোঁকা খেয়েছেন বারকয়েক।
বাকিদের অবস্থা তথৈবচ। মারেন কিন্তু ব্যাটে-বলে ঠিকভাবে হয় না। বল কোনোটা ধীরে আসে তো পরেরটা পিছলে দ্রুত ব্যাট পেরিয়ে যায়। বলের ওঠানামা তো মিরপুরে নিয়মিত ব্যাপার। তাই অসহায় ব্যাটসম্যানকুল সুইপ শটকেই রান তোলার টোটকা মেনেছেন। এতে সাফল্যের গল্পের সঙ্গে আছে ট্র্যাজিক ঘটনাও। আগের ম্যাচে ধীরগতির ব্যাটিংয়ের কারণে সমালোচিত মুশফিকুর রহিম সুইপ শট খুব ভালো খেলেন। কিন্তু লেন্থে গোলমাল করে এজাজ প্যাটেলের বলে বোল্ড হয়েছেন কোনো রান না করেই। এক শর নিচের গন্তব্যও হঠাৎ কঠিন হয়ে যায় মুশফিকের বিদায়ে। ২ বল আগে যে নিউজিল্যান্ডের এই বাঁহাতি স্পিনারকেই ডাউন দ্য উইকেটে চালাতে গিয়ে স্টাম্পড হয়েছেন সাকিব আল হাসান। মুশফিকের বিদায়ে ৩২ রান তুলতেই ৩ উইকেট নেই বাংলাদেশের। আবহাওয়ার পূর্বাভাস তখন চোখ রাঙাচ্ছে—মাহমুদকে তুলতে পারলে নিউজিল্যান্ড আপারহ্যান্ড নিয়ে নেবে।
কিউই স্পিনার কোল ম্যাকঞ্চিকে সুইপ শটে ছক্কা মেরে আশ্বস্ত করেছেন মাহমুদ। আর অপর প্রান্ত থেকে তাঁকে ভরসা দিয়েছেন ওপেনার নাঈম শেখ। চতুর্থ উইকেটে এই দুজনের ৩৫ রানের জুটিই এক ম্যাচ বাকি থাকতে বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের জিয়নকাঠি। তাই নাঈমের রান আউটে ওলটপালট হয়নি ম্যাচের গতিপথ। ম্যাকঞ্চিকেই লং অন আর মিড উইকেটের মাঝখান দিয়ে মারা মাহমুদের জয়সূচক বাউন্ডারি অবধারিতই ছিল।
অবশ্য জয়ের পথটা বিকেলেই তৈরি করে দিয়েছিলেন নাসুম আহমেদ। মাত্র ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। এটা তাঁর ক্যারিয়ারসেরা। আগেরটা খুব বেশি দিন আগে নয়। ৩ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই মিরপুরেই ১৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন নাসুম। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা নিউজিল্যান্ড ওপেনার রাচিন রবীন্দ্রকে হারায় প্রথম ওভারেই—বোলার নাসুম। তবে উত্সুক টিভি দর্শকরা সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ থেকেই যাঁর অনন্য একটি কীর্তি গড়ার অপেক্ষায়, সেই সাকিবের প্রথম ওভারের একটি বল রিভার্স সুইপে সীমানার বাইরে আছড়ে ফেলেন ফিন অ্যালেন। ওই ওভারে ১০ রান দেওয়া বাঁহাতি অলরাউন্ডার ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে উইকেটহীন থাকেন টানা দ্বিতীয় ম্যাচ, তাতে এই ফরম্যাটে লাসিথ মালিঙ্গার সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারের রেকর্ডে ভাগ বসানোর অপেক্ষা আরো বাড়ল সাকিবের। অবশ্য নাসুমের পর সন্দেহাতীতভাবে বাংলাদেশের সেরা বোলার মুস্তাফিজুর রহমানের ১২ রানে ৪ উইকেট দৃষ্টিসীমার বাইরে যেতে দেয়নি নিউজিল্যান্ডকে। এই চার শিকারের একটি আবার দুর্দান্ত ফিরতি ক্যাচে। বাংলাদেশি স্পিনারদের ঘূর্ণি আর মুস্তাফিজের কাটারের যন্ত্রণা সয়েও এক নিউজিল্যান্ডার দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন, উইল ইয়াং। বিরুদ্ধ স্রোতে সাঁতরে এই কিউই মিডল অর্ডার ৪৮ বলে করেন ৪৬ রান। নিরপেক্ষ দর্শকের কাছে পুরো ম্যাচে ইয়াংয়ের ইনিংসটির কদর বেশি মনে হতেই পারে।
তবে দিনশেষে জয়ই শেষ কথা। তাই বাংলাদেশ অধিনায়কের অপরাজিত ৪৩ মহামূল্য। সফল সমাপ্তির সিনেমায় নায়কের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন নাঈম, মুস্তাফিজ পার্শ্বনায়ক। আর নায়ক নাসুম, ম্যাচ অ্যাডজুডিকেটরদের বিচারেও তা-ই।
-কালেরকন্ঠ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান