ফিচার্ড বিশ্ব

কেন মোদি ও ভারতীয় শীর্ষ নেতারা একা একা থাকেন?

কেন-মোদি-ও-ভারতীয়-শীর্ষ-নেতারা-একা-একা-থাকেন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানাতে হোয়াইট হাউসের লাল গালিচায় উপস্থিত ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার স্ত্রী জিল বাইডেন। বিশ্বের একাধিক ক্যামেরার নজর ছিলো দুই রাষ্ট্রনেতার দিকে।

আমেরিকায় পরিবারকেন্দ্রিক ইমেজ প্রায়ই রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়বস্তু। কিন্তু ভারতে, অনেক শীর্ষ নেতা বিশেষ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। যাতে তার এবং দেশের মাঝে অন্য কোনো প্রশ্ন না আসতে পারে।

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের রাজনীতিবিদরা ১.৪ বিলিয়ন মানুষের চাহিদা পূরণে ব্যস্ত থাকেন, যার জেরে তাদের রাতের ঘুম যাবার জোগাড়। মোদি রাতে মাত্র চার ঘণ্টা ঘুমান, তার সহযোগীরাই একথা বলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদি ২০১৯ সালে নির্বাচনে পুনরায় জয়ী হওয়ার পরে বলেছিলেন, ”আমার প্রতিটি মুহূর্ত, আমার শরীরের প্রতিটি অংশ শুধুমাত্র আমার দেশবাসীর জন্য।” একাকী রাজনৈতিক ভক্তি প্রকাশের জন্য ভারত একটি অদ্ভুত জায়গা বলে মনে হতে পারে। এখানে, আবার পরিবার ব্যক্তির আগে আসে এবং সাজানো বিয়ে পরিবারগুলিকে একত্রিত করে রাখে। রাজবংশীয় পরিবারগুলি রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়ে গেছে: একটি সমীক্ষা অনুসারে, ভারতের সংসদের নতুন সদস্যদের প্রায় এক তৃতীয়াংশের নির্বাচনী অফিসে বা বিশিষ্ট দলীয় পদে কোনো না কোনো আত্মীয় রয়েছে।

কিন্তু সরকারি দুর্নীতিতে ক্লান্ত একটি দেশে আইন প্রণেতারা নিজেদের এবং তাদের পরিবারকে সমৃদ্ধ করছেন। তাদের সন্তানদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করছেন।

অনেক ভোটার আবার বিশ্বাস করেন, যে রাজনীতিবিদরা একা থাকেন তারা নাকি কম চুরি করেন। সাংবাদিক ও লেখক অজয় ​​বোসের মতে “জনগণের উপলব্ধি হল একক রাজনীতিবিদদের কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। তারা জনগণের উদ্দেশে নিয়োজিত।”
বোস বলেছেন, ”অনেক তরুণ ভারতীয়র ওপর বিয়ে করার জন্য তীব্র চাপ আসে। কিন্তু একজন একক ব্যক্তিকে স্বার্থপর বলে মনে করা হয় না, এমন একজন ব্যক্তি যিনি ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাকে দেবতা বা দেবীর স্থানে বসানো হয়।” অবিবাহিত রাজনীতিবিদদের দলে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শীর্ষ রাজনীতিবিদ মমতা ব্যানার্জি, যিনি আবার নরেন্দ্র মোদির শক্তিশালী প্রতিপক্ষ।

মমতা ব্যানার্জি নাকি রাতে মাত্র ৩ ঘণ্টা ঘুমান। অন্যদের মধ্যে রয়েছে ওড়িশা রাজ্যের প্রভাবশালী মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক; যোগী আদিত্যনাথ-এই হিন্দু সন্ন্যাসী যিনি ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশ পরিচালনা করেন এবং তাকে মোদির সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হয়। রয়েছেন মায়াবতী, নিম্নবর্ণের ভারতীয়দের জন্য অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক সংগঠনের নেত্রী। বোস, যিনি মায়াবতীর জীবনী লিখেছেন, তিনি একজায়গায় বলেছেন, মায়াবতী তার শোবার ঘরে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করেন এবং নাইটগাউনেই আমলাদের অভ্যর্থনা জানান। তাদের আগে, অবশ্যই, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর নাম বলতে হয়, যিনি ১৩ বছর বয়সে একটি সাজানো বিয়ে করার পরে এবং চারটি সন্তানের জন্মের পর সংসার ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। বৃটেনের কাছ থেকে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে নিজেকে নিমজ্জিত করেছিলেন।

একজন রাজনৈতিক ভাষ্যকার এবং সম্পাদক নীরজা চৌধুরীর মতে, ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কেউই মোদির চেয়ে বেশি কার্যকরভাবে নিজের একাকিত্বকে কাজে লাগাতে পারেননি। তার দলটি যত্ন সহকারে সেই চিত্রটিই মানুষের সামনে তুলে ধরেছে।

চৌধুরী বলছেন, ”বিমানের সিঁড়িতে বা আন্ডারপাসের উদ্বোধনে, বুলেট ট্রেনে বসে আপনি কেবল মোদিকেই ফ্রেমে খুঁজে পাবেন। ” এর পেছনে রাজনৈতিক বার্তা হলো, ”আমি আপনার জন্য আছি। আমি আপনাদের যত্ন নেব।” আজ বাহাত্তরের মোদি প্রধানমন্ত্রীর বিস্তীর্ণ বাসভবনে একা থাকেন। তার কাজ তার অস্তিত্বের পরিচয়। তবে তার জীবন কাহিনী এত সহজ নয়। যখন তিনি কিশোর ছিলেন, তিনি একটি সাজানো বিয়ে, সাজানো সংসার ছেড়ে বেরিয়ে এসে আধ্যাত্মিকতার সন্ধানে হিমালয় চলে যান। তিনি একটি ডানপন্থী হিন্দু সংগঠনের সংস্পর্শে আসেন এবং একজন প্রচারক হয়ে ওঠেন। ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে, যখন তিনি রাষ্ট্রীয় পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন তখন তিনি তার বৈবাহিক জীবন সম্পর্কিত নির্বাচনী প্রশ্নপত্রের একটি জায়গা খালি রেখেছিলেন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তার প্রথম দৌড়ের সময়ই, তিনি প্রকাশ করেছিলেন যে তিনি বিবাহিত ছিলেন, সর্বদা নিজেকে সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন একটি মানুষ হিসাবে চিত্রিত করে এসেছেন। তিনি তার স্ত্রীর সাথে থাকতেন না বলে বিশ্বাস করা হয়। ২০১৯ সালে একজন বলিউড অভিনেতার সাথে একটি সাক্ষাৎকারে মোদি বলেছিলেন যে, তিনি অল্প বয়সে তার পরিবার থেকে নিজেকে “বিচ্ছিন্ন” করেছিলেন এবং জীবনের সমস্ত আনন্দ ত্যাগ করতে শিখেছিলেন।

অনেক ভোটার মোদির এই ইমেজ দ্বারা অভিভূত- একজন প্রভাবশালী নেতা যিনি আবার আধ্যাত্মিক গুরুও, পরিবার এবং বিবাহের সমস্ত বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন। পার্নিত ঘুমানের মতো নয়াদিল্লির অনেক ট্যাক্সি চালকও আজ মনে করেন “দেশই হল মোদিজির পরিবার।” মোদি নিজেও এই ধারণাটিই তুলে ধরেছেন দেশবাসীর কাছে। ২০১৪ সালে একটি নির্বাচনী সমাবেশে তিনি বলেছিলেন, “আমার কোনো পরিবার নেই। আমি দুর্নীতির মাধ্যমে কাকে লাভবান করার চেষ্টা করব?”

কিছু ভারতীয় মোদির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে একক থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সন্ধ্যা লেইমা। যিনি ভারতের উত্তর-পূর্বে একটি সংস্থার সাথে কাজ করেন যা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি কর্মসূচির প্রচারের জন্য ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়।

লেইমা বলেছেন -” “আমি ৪০ ছুঁয়েছি এবং অবিবাহিত থাকতে চাই। মোদির মতো, আমি দেশের জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করতে চাই।”

সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস / মানবজমিন
লেখক : সুহাসিনী রাজ

CBNA24 অনলাইন ডেস্ক (এফএইচ/বিডি)

আমাদের ফেসবুক পেজে যেতে ক্লিক করুন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে যেতে ক্লিক করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন