সাহিত্য ও কবিতা

কেমন আছো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড?

কেমন আছো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড?
 জীব জন্তু, পশু পাখিকে মেরে ধরে, নদী নালা অবাদে দখল করে, চারপাশে ময়লা আর্বজনার স্তুপ করে, মানবজাতি যে সর্বনাশ করেছে। তার হিসেব এখন মানবজাতি মৃত্যুর মিছিল দিয়ে দিবে!
‘চিরদিন কাহারও সমান যায় না’!
মানবজাতি ভুলেই গিয়েছিলো এই পৃথিবীটা শুধু তাদের একার নয়!
আরও নানান জাতের মানুষ ছিল সব কটাকে মেরে ফেলেছে হিংস্র ও লোভী মানবজাতি! ক্ষমতার লোভ এতটাই ছিল তাদের! তারা ছাড়া অন্য কেউ রাজত্ব করতে পারবে না!
জীব, জন্তু, পশু-পাখি, নদী, নালা, গাছ গাছালী, ধ্বংস করে, তাদের (চামড়া, হাঁড়, দাঁত, লোম) দিয়ে কোট, ব্যাগ, জুতা, চিড়ুনি, গহনাসহ আর কত কিছু বানিয়েছে পুঁজিবাদী মানবজাতি! গাছ গাছালী ধ্বংস করে বিভিন্ন রকমের আসবাপত্র বানিয়েছে! ক্ষমতা, লোভ, আর পুঁজিবাদের বৃত্ত এখানেই থেমে থাকেনি; মানবজাতি খুনোখুনি বর্বরতা করে নিজেদেরকে শ্রেষ্ট মানবজাতি সাজিয়েছে!
কিন্তু চিরন্তন সত্য প্রকৃতি তার প্রতিশোধ ঠিক কড়ায়গণ্ডায় ফিরিয়ে দেয়। “তারি নাম প্রকৃতি যার কাছে কোন অজুহাত নেই”।
এখন লক্ষ করে দেখুন, বিগত প্রায় দশ (১০) হাজার বছর আগ থেকে আজ অব্দি যে প্রাণীকূল ও পরিবেশকে ধ্বংস করে শ্রেষ্ট মানবজাতি সেজে ছিলেন, তারাই আজ মুক্ত আকাশের নিচে আপন আনন্দে জীবন যাপন করছে এবং শ্রেষ্ট মানবজাতিকে নাকাবন্দি করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।
জীবনে ততটাই বড় হওয়া উচিত মাটিতে পা রেখে যতটুকু আকাশ ছোঁয়া যায়। মানবজাতি ইতিহাস ভুলে যায়! আজকাল মাটিতে পা রাখতে তাদের অনিহা! মানবজাতি ইতিহাস ভুলে গেলে কী হলো প্রকৃতি তার হিসেব ঠিক কষে রাখে।
মানুষের ধারণা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও অনেক বৈচিত্র্যময় প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। তা ঠিক, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে শুধু প্রাণীকূল নয় অনেক কিছুই বদলায়। তাই বলে শাক দিয়ে মাছ ডেকে আর কত মশাই! বলাই বাহুল্য জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বৈচিত্র্যময় প্রাণীর যত বিলুপ্তি ঘটছে তার থেকে ঢের বিলুপ্তি ঘটেছে মানুষের কর্মকান্ডে! আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের প্রাণীকূল বিলুপ্তির পিছনে মানুষের ভূমিকা সব থেকে বেশি।
ডাইনোসরের পরেও পৃথিবীতে প্রাচীন অদ্ভুত প্রাণীদের কোন্ কমতি ছিল না। মানুষের উন্নতির সাথে সাথে, বিশেষ করে হোমো সেপিয়েন্স নামক মনুষ্য প্রজাতির কল্যাণে গোটা বিশ্বজুড়ে একে একে এই বিশাল প্রাণীগুলো বিলুপ্ত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মনে হতে পারে মানুষ আর এমন কী ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে! কিন্তু প্রাণীজগৎতের খাদ্যশৃংখল অত্যন্ত নাজুক এবং পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া এই বিরাট প্রাণীগুলো প্রকৃতিগতভাবেই সংখ্যায় কম ছিল, জন্মহারও ছিল অত্যন্ত ধীরগতির। একটি তৃণভোজী প্রাণীর মৃত্যুর সাথে সাথে তার মাংসের ওপরে নির্ভরশীল মাংসাশী শিকারীর জীবনেও প্রভাব পড়ে। এই রকম আরো অসংখ উদাহরণ রয়েছে।
করোনা ভাইরাস (কোভিড ১৯) রোগে সভ্য দেশ, উন্নত আধুনিক দেশ, তাদেরই চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞরা হিমশিম খাচ্ছেন কিছু চিকিৎসক মারাও গিয়েছেন! সেখানে ভারতীয় উপমহাদেশগুলোকে নিয়ে আতংকিত না হওয়ার কোন কারণ নেই। বিশেষ করে ঘনবসতির দেশ বাংলাদেশ যেখানে সু-শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা খুব কম। মূর্খতা, কুসংস্কারাচ্ছন্নতা আষ্টেপৃষ্টে লেপ্টে আছে! সেই দেশ যদি একবার চীন, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, আমেরিকার মত অবস্থা হয় তা হইলে পুরো বাংলাদেশ মৃত্যুপুরী হয়ে উঠবে।
এই রকম মহামারিতে যাহারা ধর্মের বয়ান দিচ্ছেন তাদের বলছি- আপনাদের বিশ্বাস আপনার কাছে রাখুন। ধর্ম ব্যাপারটাই হলো ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিশ্বাস। আর যাই করুন অন্ততপক্ষে ধর্মের বিশ্বাস দিয়ে বিজ্ঞান’কে পরিমাপ করবেন না!
আশা করছি এই ভাইরাসের সাথে মোকাবেলা করতে গিয়ে অনুমান করতে পারছেন কোন ধর্ম কিংবা ধর্মগ্রন্থের বদৌলতে নয় সমাধান হলে কেবল এই বিজ্ঞানীদের দ্বারাই হবে। এবং তখন সর্বমহলই উপলব্ধি করতে পারবেন এবং একি সাথে দীর্ঘশ্বাস ফানুস করে ভাববেন মন্দির – মসজিদ নয় আরো বেশি হাসপাতাল, আরো বেশি গবেষণাগার, আরো বেশি শিক্ষাব্যয় প্রয়োজন ছিল মানবজাতির জন্য। করোনার প্রকোপ দেখে সারা বিশ্ব যখন বুঝতে পারলো সস্তা আবেগ ও অলৌকিক বিশ্বাস মানুষকে বাঁচাতে পারবে না! ধর্মকে নিয়ে ব্যবসা করা ও ধর্মের নামে মানুষে মানুষে বিভাজন সৃষ্টি করা শ্রেণিগুলো এখন নিশ্চয়ই  বুঝতে পেরেছেন বিজ্ঞানই মুক্তি।।
মানুষ বেঁচে থাকুক। সকলের মঙ্গল হউক।
সতর্ক থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
-পিকলু প্রিয় । লেখক, ফ্রিল্যান্স সংবাদকর্মী,  দোহা, কাতার। 
সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − eleven =