লেখালেখি

কোভিড সেনা —এ ঋণ শোধ হবে না

এলকোহল-গার্গেলের-বিপদ

 

কোভিড সেনা—এ ঋণ শোধ হবে না

দেশের  বা দেশপ্রেমের কিছু গান আছে, আমার কাছে এগুলো হৃদয়ের ভেতর থেকে উঠা আসা একেকটি  প্রার্থনা সংগীত। এক নদী রক্ত পেরিয়ে গানটি যখন শুনি, দেশপ্রেমের অভিকর্ষে বিলীন হয়ে যেতে ইচ্ছে করে জন্মভূমির মাঝে।

রাষ্ট্র, জাতি, মানবসভ্যতার কঠিন এই  দুঃসময়ের সামনে দাড়িয়ে বাংলাদেশের ডাক্তার  আর  স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্দেশে বলতে ইচ্ছে  হচ্ছে  “মৃত্যুর মুখোমুখি  দাঁড়িয়ে সতের কোটি মানুষের জীবনের সন্ধান আনলে যারা, সে দানের মহিমা কোন দিন ম্লান হবে না। —- হয়তো বা ইতিহাসে তোমাদের নাম লেখা রবে না—-  হে  বিজয়ী বীর কোভিড সেনা, তোমাদের এই ঋণ কোনদিন শোধ হবে না।  শুধু কি বাংলাদেশে, সমগ্র বিশ্ব, মানবসভ্যতা কৃতজ্ঞতায় নত হয়ে আছে ডাক্তার  আর  স্বাস্থ্যকর্মীদের এত এত ত্যাগ আর অবিরাম লড়াইয়ের কাছে। স্যালুট তোমাদের, এই স্যালুট আত্মত্যাগী আর লড়াইরত বিশ্বের  সকল ডাক্তার আর স্বাস্থ্যকর্মীদের  জন্যে।

বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি দিনে দিনে অবনতি হবে এটি অপ্রত্যাশিত ছিলনা। সময় পেয়েও পিপিই  সংগ্রহে, প্রবাসীদের আইসোলেশনের পদক্ষেপে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার খেসারততো দিতেই হবে।  জনগণের বিভিন্ন সেক্টরের দায়িত্বহীনতার মধ্যে ডাক্তার সমাজ, স্বাস্থ্যসেবার কর্মী সমাজ  ১০০%  দায়িত্বশীল হবে এরকম আশা করা অন্যায়।  করোনা যুদ্ধে এরা আমাদের কোভিড সেনা,  জাতির  ক্রান্তিলগ্নে   ডাক্তার  আর  স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যাপারে আমাদের আচরণ আরও দায়িত্বশীল, সংবেদনশীল আর মায়াময় হওয়া উচিত।  কয়েকজন  ডাক্তারের সাময়িক  বরখাস্তের পক্ষে, বিপক্ষে অনেক বক্তব্য এসেছে। গভীর বিশ্লেষণ না করেই আমার মনে হয়েছে এরকম অবস্থায় এটি বাড়াবাড়ি।   চিকিৎসকদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে আমার কাছে মনে হয়েছিল অভিভাবকের শাসন, মনে হচ্ছে  অতি উৎসাহী কেউ কেউ এই  সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে। এ ধরণের একশনে ন্যায় বিচারের স্বার্থে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রাথমিক পদক্ষেপ, সম্ভবত এসবের তোয়াক্কা করা হয়নি।

শঙ্কা, ভয় আর মৃত্যুর মিছিলে ভারাক্রান্ত আজকের বিশ্ব। জনপ্রিয় কন্টাজিওন সিনেমাটিসহ  ভাইরাস নিয়ে বেশ কয়েকটি বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র দেখার  সুযোগ হয়েছে।  সিনেমাটিক ঐসব পরিস্থিতি আজতক অর্জিত প্রযুক্তির অগ্রগতিকে অগ্রাহ্য করে  আমাদের এই  প্রজন্মকেই আরও বেশী ভীতি, নির্মমতা আর গণকবরের ভয়াবহতা মোকাবিলা করতে বাধ্য করবে, ভাবিনি কোনদিন। অথচ বিশ্ব ইতিহাসের এই আশঙ্কিত এপিসোডটি  যেন আজ  টিভি বা সিনেমার পর্দা থেকে নেমে এসে আমাদের ড্রয়িং রুমে, ঘরে ভেতরে কিংবা বাইরে  বিস্মিত  বাস্তবতার আলিঙ্গনে অস্থির করে রেখেছে  আমাদের পুরো বিশ্বব্যাপী; ধর্ম, বর্ণ, ধনী-গরীব নির্বিশেষে।

গতকাল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছোট ভাই যে মন্ট্রিয়লে থাকে সপরিবারে, ফোন করল  ভীষণ মন খারাপ করে। দেশে ওর মা কাশি, জ্বরে ভুগছে, ওর ছোট ভাই ডাক্তার অধ্যাপক, কোভিড যুদ্ধে একজন সৈনিক, দিনমান নিয়োজিত  এমন এক  যুদ্ধে,  যে যুদ্ধের শত্রু  রাইবো নিউক্লিক এসিডের  মামুলি গঠন প্রক্রিয়ার তৈরি কিন্তু আপাতত প্রবল পরাক্রমশালী এক ঘাতক যাকে চোখেও দেখা যায় না। দেশের প্রিয়জনদের এই  সংবাদে আমাদের অভিবাসী জীবন কতোটা এলোমেলো  হয়ে যায়  ঐ ছোট ভাইটির  পরিবারের বর্তমান অবস্থা তার একটি উদাহরণ মাত্র। আমরা  প্রার্থনা করব  এটি যেন  নিছকই সাধারন ঠাণ্ডা লাগা হয়।

বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর খোঁজ নিলে দেখা যাবে একেকটি পরিবার অনেকগুলো ডাক্তারের  যোগানদাতা। ভাইবোন কিংবা কাজিনদের মধ্যে এদিক ওদিক মিলিয়ে অসংখ্য ডাক্তারের সমাহার।  পুরো পরিবারকে উদ্বিগ্ন রেখে, কিছুটা অরক্ষিত রেখে এরা সবাই যুদ্ধের ময়দানে। এদের কেউ কেউ চিকিৎসার বর্ধিত দায়িত্বে বাইরে নিয়োজিত গণসচেতনা ক্যাম্পেইনে। লড়ছে সবাই, দিনরাত্রি। এদের নিয়ে উদ্বিগ্ন পুরো পরিবার, এদের উদ্বেগ অগ্রাহ্য করার কোন সুযোগ নেই। পিপিই  নিয়ে অব্যবস্থাপনা শুধু নয়, স্বাস্থ্যকর্মীদের খাদ্য সরবরাহের সাম্প্রতিক অব্যবস্থাপনা এদের মনোবলে  বিরূপ প্রভাব ফেলবে।  পশ্চিমা বিশ্বে  ডাক্তার আর স্বাস্থ্যকর্মীরা যেভাবে লড়ছেন,  মানবতার  যে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড তৈরি হয়ে গেছে, আমাদের ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীরাও সেই পথে  হাঁটবার চেষ্টা করছেন পশ্চিমাদের চেয়ে অনেক বেশী অরক্ষিত অবস্থানে থেকে। যুদ্ধে যাবার  শ্রেষ্ঠ সময় যাদের, তাঁদের যুদ্ধে যাবার গড়িমসিতে  অর্থাৎ একদল ইন্টার্নি  ডাক্তারের  আচরণ সহ বিচ্ছিন্ন  কিছু ঘটনা হয়তো আছে, তবে এই বিচ্ছিন্ন  ঘটনাগুলো  ব্যাতিক্রম এবং এই ব্যাতিক্রমের পেছনেও ঘটনা থাকে, যাতে ভিন্ন চিত্রের দেখা মিলতে পারে। সামগ্রিকভাবে চিকিৎসক সহ সর্বস্তরের স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নিয়োজিত কোভিড-১৯ এর লড়াইয়ে, এ যেন এক অচেনা গন্তব্য।হাসপাতালের ফ্লোর কিংবা বাথরুম পরিষ্কার করে যে পরিছন্নকর্মীরা, পিপিই ব্যবহারের  উনাদেরকে ধরা হয় সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা গ্রুপ এবং এই পরিস্থিতিতে  একবারও কি আমরা ভেবে দেখেছি কতোটা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে আছেন উনারা  এবং এদের পরিবার?

সম্মুখ সমরে লিপ্ত ডাক্তার থেকে শুরু করে সকল স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীরা আমাদের কোভিড  সেনানী আর এই সেনাদের মনোবল রক্ষায়, সুরক্ষায়, নিরাপদে রাখার জন্যে রাষ্ট্রের সক্ষমতার চূড়ান্ত প্রয়োগে আর  জনগণের ভালবাসায় সিক্ত করে মায়ার জালে জড়িয়ে রাখার অঙ্গীকারে শুরু হওক আমাদের বাংলা নববর্ষ ১৪২৭।

বাংলা নববর্ষ ১৪২৭ সালের শুভেচ্ছাসহ অভিবাদন কোভিড যোদ্ধাদের।  তোমাদের এই ঋণ কোনদিন শোধ হবে না—–।

সিবিএনএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 4 =