ফিচার্ড বিশ্ব

চারদিকে শুধু আতঙ্ক বিভীষিকা আফগানিস্তান সংকট

২৪ ঘণ্টার মধ্যে শেষ হচ্ছে পশ্চিমাদের অভিযান

চারদিকে শুধু আতঙ্ক বিভীষিকা আফগানিস্তান সংকট

। কাবুলের বিমানবন্দরে আবার আইএসের হামলা । মার্কিন অভিযানে জঙ্গির বদলে এক পরিবারের ১০ জন নিহত ।

জাহাঙ্গীর সুর ।। আশা দেখিয়ে, বহুদূর টেনে এনে, শেষমেষ আফগানদের আপদসাগরে ফেলে একে একে চলে গেল পশ্চিমা পরাশক্তিরা। যে বিষ তুলতে ওঝা হিসেবে বিশ বছর আগে আফগানিস্তানে আবির্ভাব ঘটেছিল আমেরিকান আগ্রাসনের, সেই তালেবানের ছল কিংবা ছোবলে আজই অবসান হচ্ছে মার্কিন অভিযান।
কথিত দোহা শান্তি চুক্তি অনুযায়ী, আজ ৩১ আগস্টের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ দলের সেনারাও কাবুল ছেড়ে ঘরে ফিরে যাবেন। কিন্তু আফগানিস্তানের জন্য কী ভবিষ্যৎ রেখে যাচ্ছেন তারা? বিশেষত, পশ্চিমা সেনাাবহিনী ও গণমাধ্যমশূন্য আফগানিস্তানে কাল থেকে প্রথম কয়েকটা দিন পরিস্থিতি ঠিক কেমন থাকবে সে বিষয়ে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত টানতে পারছেন না অধ্যাপক পিটার গ্রেস্টে। অস্ট্রেলিয়ার দি ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের এই ইউনেস্কো চেয়ার গতকাল ইমেইলে এই
প্রতিবেদকের সঙ্গে তার আলাপ হয়।
ভয় আছে, আবার আফগানিস্তান সন্ত্রাসী ও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠবে। এরই মধ্যে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) স্থানীয় শাখা বর্বর বোমা হামলায় পৌনে দুইশ লোক হত্যা করেছে, গতকালও তারা পাঁচটি রকেট হামলা করেছে কাবুলে। আবার বিদায়বেলাতেও জঙ্গি নিধনের নামে কাবুলে রবিবার ছয় শিশুসহ একই পরিবারের ১০ জনকে হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রাজনীতি ও ধর্মীয় ধারণা নিয়ে যুদ্ধে যাদের কোনো মন নেই, সেই সব সাধারণ আফগান নাগরিকের অবস্থা বোধকরি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো, ‘হতাশ হয়ে যেদিকে চাহি/ কোথাও কোনো উপায় নাহি,/ মানুষরূপে দাঁড়ায় বিভীষিকা।’
কাতারের রাজধানীতে তালেবানের সঙ্গে শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্বয়ং ট্রাম্প। কিন্তু বিরোধীমনা হওয়া সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতায় এসে ট্রাম্পের সেই নীতিতেই অনড় থাকেন। দোহা চুক্তি মেনে তিনি প্রথমে বলেছিলেন, ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে তালেবান-সমর্থিত আল কায়েদার হামলার বিশ বছর পূর্তির আগেই সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেবে ওয়াশিংটন। পরে তিনি জানান, ৩১ আগস্টের মধ্যেই সেনাদের ঘরে ফিরিয়ে নিতে চান তিনি।
এই ঘোষণার পর আফগানিস্তানের ৩৪ প্রদেশের দুই তৃতীয়াংশের বেশি একে একে দখল করে ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুলও কব্জা করে তালেবান। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ তালেবান প্রথম দফায় তাদের দুঃশাসন চালায়।
এবার, অন্তত গতকাল পর্যন্ত, তালেবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা আগের মতো আর অত কট্টর থাকবে না। উদারতার স্বাক্ষর হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ও বিদেশিদের সহযোগিতা করা সবাইকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে। নারী অধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ব্যাপারেও ‘মুক্তমনা’ হওয়ার অঙ্গীকার করেছে, অবশ্য সেই অধিকার ও স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক নয়, শরিয়াভিত্তিক হবে বলে জানিয়েছে।
কিন্তু কাল যখন আর পশ্চিমারা থাকবে না, তখন কী ঘটবে- এ নিয়ে নানা সংশয় আর আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। তীব্র, অনিয়ন্ত্রিত ও বহুমুখী জঙ্গি হামলায় জর্জরিত হবে কাবুল? কেন্দ্রীয় রাজধানী এবং সারা দেশে তালেবান সদস্যরা এই সময়ে কী করবেন? হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কি জিম্মি সংকট তৈরি হবে? গণতন্ত্রকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলকারী গোষ্ঠী তালেবান কি সহসা কোনো ধরনের সরকারের ঘোষণা দিতে পারবে? আমেরিকা এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা কি আরেকটি সামরিক আক্রমণের জন্য আফগানিস্তানে ফিরে যেতে পারে?
‘এগুলো গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসা। এগুলো নিয়ে ভাবা দরকার’, এই প্রতিবেদককে বলেছেন অধ্যাপক গ্রেস্টে, যিনি নব্বইয়ের দশকে বিবিসির তরুণ সাংবাদিক হিসেবে আফগানিস্তানে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘অনেকদিন আগের কথা, আমি আফগানিস্তানে ছিলাম। তালেবান ও দেশটি নিয়ে আমার জানাশোনা ও অভিজ্ঞতা আছে। ফলে, মনে হতেই পারে যে, বড় ধরনের কৌশলগত বিষয়ে আমার প্রভাবদায়ক অভিমত আছে। সত্যি বলতে কি, আমি ঠিক বলতে পারছি না, সামনের দিনগুলোয় [আফগানিস্তানে] কী ঘটতে যাচ্ছে।’
তবে, কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনদের সাময়িকী কনট্যাক্ট-এ অধ্যাপক গ্রেস্টে লিখেছেন, ‘ক্ষমতা দখল করা আর ক্ষমতা ধরে রাখা এক কথা নয়।’ তিনি মনে করেন, তালেবান সম্ভবত ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে না।
বিবিসি বলছে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়তে পারেন তালেবানের নেতারা। আবার আইএসের স্থানীয় শাখা ইসলামিক স্টেট-খোরাসান (আইএস-কে) ও বিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে দমনে তারা কতটা পারদর্শী, সে পরীক্ষাও দিতে হবে তালেবানকে। এছাড়া, অর্থনীতি সচল রাখার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনের স্বীকৃতি আদায় করাও তাদের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।
বন্দুক কিংবা বোমা, গুলি কিংবা বারুদ- অস্ত্রের দোষ নেই। দোষ যত ক্ষমতালোভী মানুষের, তার অকল্যাণকর কর্মের। আফগানিস্তান আজও সেই বিভীষিকা-বলয় থেকে বেরুতে পারল না। উপরন্তু, তারা নতুন করে আরও বেশি গভীর সংঘাত আরও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে পড়ে গেল।

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন