জন্মের মাসেই চলে গেলেন ইসহাকভাই
অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ইসহাক কাজল আমাদের সবার প্রিয় ইসহাকভাই। বেশ কিছুদিন যাবৎ দূরারোগ্য রোগে ভোগছিলেন। কিন্তু খুব আত্নপ্রত্যয়ী ছিলেন। গতমাসে যখন তার সাথে আলাপ হয়, ফেব্রুয়ারীতে প্রকাশিতব্য তার বইটি নিয়ে আমার সাথে কথা বলেন।তিনি সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন।কজন লোক পারে মফস্বলে থেকে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিতে। খুব সাহসী, আত্মবিশ্বাসী, সহজ, সরল, সৎ, অমায়িক,জনদরদী, স্পষ্টবক্তা মানুষ ছিলেন। খুব কাছ থেকেই তাকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। ৯১ সাল থেকে ৯৯ সাল দুজন শ্রীমঙ্গলে খুব কাছাকাছি থাকতাম। এই কবছর খুব কম দিনই গেছে যে আমাদের দেখা হয়নি। আমি ছিলাম তার রথের সারথি । সাংবাদিকতার মৌলিক অনেক বিষয় তার কাছ থেকে শেখেছি।শহরে বসে এখান সেখান থেকে তথ্য নিয়ে নিউজ লেখার প্রথায় বিশ্বাসী ছিলেন না ইসহাকভাই। খবর যত ছোট্ট ও গৌণই হোক না কেন, ঘটনাস্থলে তাকে যেতেই হবে, যেভাবেই হোক। এখনকার মত এত অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা তখন ছিল না। খবর সংগ্রহ করে মৌলভীবাজার গিয়ে ফোন করে পত্রিকায় নিউজ পাঠাতে হতো, তখন ফ্যাক্স, ইমেইল, মোবাইল ফোন ছিল না। ইসহাকভাই ও আমি প্রায় প্রতি রবিবারই চলে যেতাম প্রত্যন্ত কোন চা বাগানে বা গ্রামে সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরীর কাজে। আমাদের অস্থায়ী অফিস ছিল “ইত্যাদি” সন্ধ্যার পর আমরা নিউজ সংগ্রহ করে এখানে বসে নিউজ লিখে পত্রিকা অফিসে পাঠাতাম। মনে পড়ে ইত্যাদির সত্ত্বাধিকারী মুজিবুর রহমান রেনুর কথা যিনি সবার কাছে মামু বলে পরিচিত। তার দোকানের ভিতরের একটি রুমে বসে আমরা অর্থাৎ সাংবাদিকরা আড্ডা দিতাম, হই হুল্লোর করতাম কিন্তু কোনদিনই তার মুখে বিরক্তির কোন চিহ্ণ দেখিনি, সব সময়ই তার হাস্যোজ্জল মুখ। এমন উদার মনের মানুষ এখন পাওয়া আসলেই খুব কঠিন। সেই রেনুমামাই নিউইয়র্ক থেকে আজ দুপুরে ইসহাকভাইয়ের সেই দু:সংবাদটি দিলেন। ইসহাকভাইয়ের সাংবাদিকতার শুরু সিলেটে ১৯৭৮ সালে। সিলেটের সিলেটকন্ঠ, যুগভেরী, জালালাবাদ, রানার, জালালাবাদীসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন। এরপর পারিবারিক প্রয়োজনে শ্রীমঙ্গল চলে আসেন। দীর্ঘ ১০ বছর তিনি বাংলাবাজার পত্রিকার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ চা বাগান অধ্যুষিত একটি এলাকা। চা বাগান এলাকায় রয়েছে একটি বিরাট অবহেলিত, অনগ্রসর চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী, যাদের দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণার পাঁচালীর কথা ছিল শহুরে মানুষের অজানা। পত্রপত্রিকায় চা বাগানের বাবু, সাহেবদের মেদবহুল হাস্যোজ্জল চেহারার ছবি মাঝেমধ্যে দেখা গেলেও সেইসব তামাটে মানুষদের ছবি খুব একটা দেখা যায় না। ঢাকা থেকে পত্রপত্রিকার সাংবাদিকরা ম্যানেজার সাহেবদের মেহমান হয়ে চা বাগানে এসে সবুজের চাদরে ঢাকা শীতল চা বাগানকে নিয়ে সংবাদ না লিখে কবিতা লিখেন কারণ চা বাগানের সবুজ তাদেরে কবিমনা করে দেয়। যাদের রক্তে, ঘামে, শ্রমে চা বাগান সবুজ সেইসব তৃণমূল পর্যায়ের মানুষরা সবসময়ই আড়ালে থেকে যায়। ইসহাকভাই ও আমি সে ধারাটা ভাঙ্গার চেষ্টা করি। ইসহাকভাই ২০০০ সালে লন্ডন চলে যান, সেখানে সাপ্তাহিক জনমত পত্রিকায় যোগদান করেন। তিনি বামপন্হী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ইতিমধ্যে তার বেশ কিছু গ্রন্হ প্রকাশিত হয়েছে। এবারের গ্রন্হমেলায়ও তার বই প্রকাশের কথা রয়েছে। ইসহাকভাই যেখানেই থাকেন ভাল থাকবেন।
আরও পড়ুনঃ