দিল্লির দাঙ্গা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়
ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতে দাঙ্গা-হাঙ্গামার কোন ঘটনা ঘটলে এই হাঙ্গামার জন্য হিন্দুরা দায়ী এমন একটি বদ্ধমূল ধারনা প্রচলিত।সম্প্রতি দিল্লির ঘটনাও সেদিকেই ইঙ্গিত করছে।দাঙ্গায় মৃতের যে সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতি তাতে প্রতিয়মান হয় যে এই দাঙ্গায় হিন্দুরাই বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং মিডিয়া যেভাবে শুধু মুসলিম অসহায় পরিবারগুলোর ক্ষয়ক্ষতি মৃত্যু নিয়ে হৈচৈ করছে তাতে মনে হবে এই দাঙ্গা হিন্দুরা করেছে।অথচ প্রকৃতপক্ষে এই দাঙ্গায় হিন্দু মন্দির, ঘরবাড়ি, দোকান-পাট ক্ষয়ক্ষতির যে বিবরন বেরিয়েছে এবং মৃত্যুর যে সংখ্যা তাতে এই ঘটনা যে এক তরফা হয়েছে এমনটা বলা যাবে না।কিন্তু প্রতি মুহুর্তের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মিডিয়া মনে করিয়ে দিচ্ছে এই দাঙ্গার পিছনে হিন্দুত্ববাদীদের হাত রয়েছে।এতে কিন্তু হিতে বিপরীত হচ্ছে।কারন দাঙ্গায় অভিযুক্তরা মানুষিকভাবে চাঙ্গা হচ্ছে এইজন্য যে তারা দাঙ্গা করেও রেহাই পেয়ে যাচ্ছে অপর দিকে যারা এই দাঙ্গায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের মনে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হচ্ছে।এই করেই ভারতে আজ মেরুকরণের রাজনীতি চাঙ্গা হয়েছে এবং এই রাজনীতি ভারতে চুড়ান্ত সফল হবে এবং বিজেপি তাদের অঙ্গীকার ভালভাবেই সম্পন্ন করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে।বিজেপি দাঙ্গাবাজ গুজরাটে দাঙ্গা করেছে।এ নিয়ে সারা দেশে বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের প্রচার প্রোপাগাণ্ডার শেষ ছিলনা।কিন্তু বিজেপিকে কিন্তু আটকানো যায়নি।কারন গুজরাটে কেন দাঙ্গা হয়েছিল সেই কারনটি কিন্তু বিরোধীরা চাপা দিয়ে রাখতে পারেনি।২০০২ সনের ২৭ ফেব্রুয়ারি সবরমতী এক্সপ্রেসের একটি কামড়ায় মুসলিমরা পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল।সেই কামড়ায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ৫৯ জন করসেবক তীর্থযাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল।এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় ঘটেছিল গুজরাট দাঙ্গা।এই ঘটনায় বিরোধীরা যত বিজেপিকে কোনঠাসা করার চেষ্টা করেছে বিজেপির ভাবমূর্তি তত জনগনের নিকট উজ্জ্বল হয়েছে।তখনো বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং মিডিয়া বিজেপিকে অভিযুক্ত করতে চেয়েছিল কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো।দিল্লির ক্ষেত্রেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে।শাহিনবাগ যে একটি সম্প্রদায়কে তোষামোদির জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে সময় তার জবাব দেবে।ভারতের জনগন এখন অনেক সচেতন।মিথ্যা প্রচারনার জবাব তারা সময় মতো দিয়ে দেবে।কারন নাগরিকত্ব আইন কোন মুসলমানের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার আইন নয়।৭২ বছরের তোষামোদির রাজনীতির অবসানে একটু সময়তো লাগবেই।এই দাঙ্গা নুতন কোন বিষয় নয়।ভারত উপমহাদেশে দাঙ্গার ইতিহাস একমাত্র মুসলমানদেরই রয়েছে।এর ধারাবাহিকতায়ই দিল্লির দাঙ্গা।
দাঙ্গা নিয়ে তুল্যমূল্য বিচার করার আমি কেউ নই কিন্তু দাঙ্গা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি আর মর্মেমর্মে অনুভব করেছি এর ভয়াবহতা।দাঙ্গার বীভৎসতায় বাস্তচ্যুত অসংখ্য মানুষের হাহাকার আজও ভুলতে পারিনি।নাগরিকত্ব না থাকার মধ্যে যে একটা গভীর বিষাদ অশ্রুসজল বেদনা করুন অসহায়ত্ব আশ্রয়হীনতার দুর্বিষহ জ্বালা বুকের গভীরে দ্বন্ধ,ক্ষরন,প্রশ্ন দেখা দেয় তা দাঙ্গার বীভৎসতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
ভারতে হিন্দুরা সংখ্যাগুরু তাই তারা কিছুতেই অত্যাচারিত হতে পারেনা মুসলিমরা পারে।এমন একটি ধারণা রয়েছে। অসহিষ্ণুতার দোহাই দিয়ে হিন্দু নির্যাতন,মন্দির ভাঙ্গা,
সন্তানহারা মায়ের কান্না নির্লজ্জভাবে এড়িয়ে যেতে চায়।সম্প্রীতি মানে তোষণ
নয়।সম্প্রীতি মানে পারষ্পরিক সম্মান।যারা দিল্লির দাঙ্গার ঘটনাকে ধর্ম নিরপেক্ষতার উপর আঘাত মনে করেন তারা যে সেকুলারিজমের কথা বলেন তারই লাশ দিল্লির নর্দমায় পরে রয়েছে।তাই দাঙ্গাবাজদের হাতে
সম্প্রীতি নিরাপদ নয়।আত্মরক্ষার অধিকার সবার আছে।আমরা বসিরহাট
দেখেছি, ধুলাগড় দেখেছি,ক্যানিং দেখেছি,দেগঙ্গা দেখেছি ১৯৪৬ সনে কলকাতা কিলিং,নোয়াখালী দাঙ্গা এ-সবই দেখেছি।কিন্তু এই দাঙ্গাবাজদের কোন পরিবর্তন হয়নি।দেশভাগের আগে ভারতে হিন্দু-মুসলমানের অনুপাত ছিল ৪ঃ১।মোট জনসংখ্যার ১/৪ ভাগ মুসলমান। কিন্তু দাঙ্গার ইতিহাস থেকে জানা যায় যে সংখ্যালঘু হয়েও মুসলমানরা আক্রমণকারীর ভূমিকায় আর হিন্দুরা আক্রান্ত।এর কারন মূলত হিংসা ও হত্যা সম্পর্কে মুসলমান ও হিন্দুদের ধারনার মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক ভাবে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।দাঙ্গা যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন মুসলমান তাকে জেহাদ বলেই মনে করে।বিধর্মী হত্যা পূন্যের আর দাঙ্গায় নিহতের বেহেস্ত লাভ।যারা সচেতন এবং ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে যাদের পড়াশোনা আছে তারা দিল্লির ঘটনাকে জেহাদ হিসাবেই মূল্যায়ন করবেন।অন্যদিকে হিন্দু ধর্ম মানুষকে ধর্মের নিরিখে বিচার করে না।হিন্দু ধর্মে নরহত্যা পাপ।যারজন্য দিল্লির দাঙ্গায় মুসলিমের চেয়ে হিন্দু হতাহতের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। হত্যা অন্যায় কিন্তু আত্মরক্ষা মানুষের স্বাভাবিক ও আইনগত অধিকার।এক্ষেত্রে হিন্দু সে অধিকার প্রয়োগ করেছে মাত্র।
মোগল সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতে মুসলিম রাজত্বের অবসান ঘটেছিল।কিন্তু মুসলমানরা তা মেনে নিতে পারেনি।সিপাহি বিদ্রোহে মুসলমানরা যুগপৎভাবে ইংরেজ ও হিন্দুর বিরুদ্ধে ঘোষণা করেছিল জেহাদ।পরবর্তীতে “ফর্জ”, “ওয়াহাবি” খিলাফত আন্দোলন ছিল হিন্দুর বিরুদ্ধে মুসলমানদের দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন দাঙ্গা।ভারতে মুসলিম শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠার হাতিয়ার ছিল দাঙ্গা যা আজো অব্যাহত আছে।দিল্লি সেই সব ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।।
নারায়ন দেবনাথ এর ফেসবুক থেকে।।
আরও পড়ুনঃ
সর্বশেষ সংবাদ
কানাডার সংবাদ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন