প্রবাসের সংবাদ

নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের সারি সারি লাশ! মৃত্যুর মিছিলে অসহায়

নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মিছিলে প্রবাসীরা। বিভিন্ন মাধ্যম, ফেসবুক থেকে সংগৃহিত আরও অসংখ্য ছবি দৃষ্টির অন্তরালে

 

নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের সারি সারি লাশ! মৃত্যুর মিছিলে অসহায় । যুক্তরাষ্ট্রের শহরে শহরে মৃত্যুর মিছিল। সারি সারি লাশ। স্বজন আছে, স্বজন নেই। মৃত্যুর মিছিলে অসহায়। মৃত্যুর পরও একই ঘরের পরিবার পরিজন কেউই দেখতে পারছেননা প্রিয় স্বজনকে। কী ভয়ানক অসহায় এই মৃত্যুপুরীতে।  করোনাভাইরাসে নিউইয়র্কে গতকাল ও আজ বেশ ক’জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। এদের মধ্যে এক নারী রয়েছেন। তিনি অরূপ শ্যাম চৌধুরী বাপ্পা’র স্ত্রী এবং প্রয়াত শিল্পী সুবীর নন্দীর শ্যালিকা কবিতা শ্যাম চৌধুরী চন্দ্রা। ব্রঙ্কসে স্বপন রহমান, কুইন্সে মালেকুজ্জামান মানিক (৫৬), এম এ রউফ, ব্রুকলীনে রফিকউদ্দিন এবং ওয়াজি উল্লাহ, নিউইয়র্ক ব্রকলিন বসবাস করতেন মোস্তাক আহমেদ এক সপ্তাহ আগে সহধর্মিনী কে হারালেন, গতকাল তিনি নিজেও হেরে গেলেন করোনার কাছে, চলে গেলেন‌ না ফেরার দেশে, করোনার কাছে হেরে গেলেন স্বামী-স্ত্রী দুজনই,  গিয়াস উদ্দিনের যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে, ব্রুকলীনে করোনায় নিহত রফিকউদ্দিন, নিউইয়র্কে মারা যাওয়া প্রবাসী মোস্তাফিজুর রহমান, আরিফ তালুকদার, মোঃ সফাত খান ( সুফি মিয়া)  মনিরুল হুদা ও ব্রুকলীনের রফিকউদ্দিন। এভাবেই শুধু নাম জানা- অজানা প্রবাসীদের  বহর বেড়েই চলছে।

প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে এ পর্যন্ত নিউইয়র্কে ৬৫ বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রে মোট প্রাণ হারিয়েছেন ৬৫ জন। তাদের মধ্যে ১১ জন নারী। নারীদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী যার মৃত্যু হয়েছে, তিনি নিউইয়র্কের বাসিন্দা ছিলেন। ২৫ বছর বয়সী ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। সবচেয়ে বেশি ৮৩ বছর বয়সী যার মৃত্যু হয়েছে, তিনিও নিউইয়র্কের বাসিন্দা ছিলেন। নিউইয়র্কে অপ্রতিরোধ্য এবং অবিশ্বাস্যভাবে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। নগরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত প্রায় প্রতিটি পরিবারের কোন স্বজন বা চেনা মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত। আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচারে অনেকেই অজানা আতঙ্কে ভুগছেন।কোন কোন পরিবারের সকলেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। নিউইয়র্কে এমনও কোন বিল্ডিং রয়েছে যা পুরো বিল্ডিং-এর প্রতিটি এপার্টমেন্টে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনাতে যে ৬৫ জন বাঙালী মারা গেছেন এদের প্রথম পর্যায়ে  অধিকাংশই আক্রান্ত হয়েছেন ধর্মীয়স্থান থেকে।

নিউইয়র্কের বাসিন্দাঅনেকেই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঘরে ফিরছেন, অনেকে কোন চিকিৎসা ছাড়াই ঘরেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এসব সংবাদের বাইরে মৃত্যুর খবর বেশি প্রচারিত হওয়ায় আতঙ্কের মাত্রা বেড়ে গেছে। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে অনেকেই ফিরে আসলেও নিউইয়র্কে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। কে,কখন, কিভাবে আক্রান্ত হবেন কেউ বুঝে উঠতে পারছেন না। ৫৪ পুরুষের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে মারা গেছেন একজন চিকিৎসক (৩০)। এদিকে নিউইয়র্কে বাংলাদেশির মধ্যে করোনায় কতজন আক্রান্ত হয়েছেন, তার সঠিক কোনো তথ্য নেই। ধারণা করা হচ্ছে, এর সংখ্যা কয়েকশ’ বা তারও বেশি। আক্রান্ত অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও আতঙ্ক যেন আর ছাড়ছেনা। অনেকেই আইসিইউতে রয়েছেন এবং তাদের মধ্যে বেশ ক’জনের অবস্থা সংকটাপন্ন। এভাবেই সিটিতে প্রবাসীদের লাশের মিছিল ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিভিন্ন হাসপাতালের আইসিইউতে রয়েছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি।

প্রতিদিনই এসব মৃত্যর মিছিল অপ্রতিরোধ্যভাবে বেড়েই চলছে। করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর কারণে স্বজনরা পর্যন্ত মরদেহ দেখার সুযোগ হচ্চেনা শধু নীরবে কাঁদছেন। আবার প্রবাসীদের মধ্যে অনেকেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সহজে প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না। কেউ কেউ আক্রান্ত হবার পরও ঘরের ভিতরেই বন্দি হয়ে আছেন হাসপাতালে যেতে চাচ্ছেননা। পুরো হাসপাতালগুলোই যেনো মুত্যুপুরী সারি সারি লাশ।

 

 

সিবিএনএ/এসএস


সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 − two =