ফিচার্ড বিশ্ব

নীরবতা ভাঙলেন ফার্স্টলেডি ওলেনা, রাশিয়ার গণহত্যার নিন্দা

ইউক্রেনের ফার্স্টলেডি ওলেনা জেলেনস্কা

নীরবতা ভাঙলেন ফার্স্টলেডি ওলেনা, রাশিয়ার গণহত্যার নিন্দা

চারদিকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। চোখের নিমেষে মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে সুরম্য অট্টালিকা। অভিজাত শহর এখন ধ্বংসস্তূপ। পুড়ে যাওয়া ছাইভষ্মের ভিতর পোড়া লাশ। শিশুর লাশ। বৃদ্ধের লাশ। কোন যুবতী বধুর লাশ। এমন লাশের ভাগাড় যেন ইউক্রেন।

এসব দৃশ্য দেখে এবার নিজেকে সামলে রাখতে পারেননি ইউক্রেনের ফার্স্টলেডি ওলেনা জেলেনস্কা (৪৪)। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি প্রথম মুখ খুললেন। আবেগঘন বিবৃতি দিয়েছেন। রাশিয়া তার  দেশে সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে। এ অভিযোগ এনে ঘৃণা ভরে রাশিয়ার নিন্দা জানিয়েছেন ওলেনা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

মারা যাওয়া, আহত হওয়া শিশুদের বিষয়ে ফোকাস করেছেন ওলেনা জেলেনস্কা। বোমা হামলায় মারা গেছে, এমন তিনটি শিশুর নাম উল্লেখ করেছেন। ওলেনা বলেন, ইউক্রেন শান্তি চায়। তাই বলে তার সীমান্ত ও পরিচয়ের পক্ষে অটুট থাকবে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তার স্বামী ভোলোদিমির জেলেনস্কি। তারা দু’জন বর্তমানে কোথায় অবস্থান করছেন তা অজ্ঞাত। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে নিশ্চয়ই তারা নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখান থেকে যুদ্ধকৌশল, যুদ্ধের নীতি প্রনয়ণ করছেন। রণক্ষেত্রে যোদ্ধাদের শক্তি যোগাচ্ছেন। বিশ্বের কাছে তুলে ধরছেন পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার পরিবার রয়েছে রাশিয়ান বাহিনীর টার্গেটে।

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ওয়েবসাইটে ইংরেজিতে লেখা একটি খোলা চিঠি পোস্ট করেছেন ওলেনা। এতে বলেছেন, সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য অসংখ্য অনুরোধ পেয়েছেন। ওলেনা বলেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এই আগ্রাসন বিশ্বাস করা অসম্ভব। আমার দেশ ছিল শান্তিপূর্ণ। আমাদের শহর, গ্রামগুলো ছিল প্রাণোচ্ছল। প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেনের বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানো হচ্ছে। তবে রাশিয়া দাবি করে তারা ইউক্রেনের ভিতরে বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। ওলেনা লিখেছেন, এই আগ্রাসনের সম্ভবত সবচেয়ে এবং হৃদয়বিদারক বিষয় হলো শিশুদের হতাহত হওয়া। মাত্র আট বছর বয়সী অ্যালিস মারা গেছে ওখতিরকা’র রাস্তায়। এক নিকটআত্মীয় তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তাকে সেই সুযোগ না দিয়ে বিদায় নিয়েছে অ্যালিস। অথবা ধরুন কিয়েভের পলিনার কথা। বোমা হামলায় পিতামাতার সঙ্গে মারা গেছে সে। ধ্বংসস্তূপে মাথায় আঘাত পেয়েছে ১৪ বছর বয়সী আরসেনিয়ে। তাকে রক্ষা করা যেত। কিন্তু হামলার কারণে যথাসময়ে তার কাছে পৌঁছাতে পারেনি এম্বুলেন্স।

ওলেনা লিখেছেন, রাশিয়া যখন বলে তারা বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে না, তখন প্রথমেই আমি এইসব নিহত শিশুদের নাম উচ্চারণ করবো।

ওলেনা জেলেনস্কা আরও লিখেছেন, কয়েক সপ্তাহে কয়েক ডজন শিশুর জন্ম হয়েছে। তারা কখনোই শান্তি কি জিনিস জানে না। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ইউক্রেন, এর জনগণ ও তাদের দেশপ্রেমকে ছোট করে দেখছেন। ওলেনা লিখেছেন, ক্রেমলিন থেকে প্রপ্রাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে যে, ইউক্রেনের মানুষ তাদেরকে রক্ষক হিসেবে সম্মানীত করতে ফুল হাতে স্বাগত জানাবে। কিন্তু তাদেরকে হাতবোমা দিয়ে লজ্জিত করা হয়েছে। সমর্থন দেয়ার জন্য বিশ্ববাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ওলেনা। পাশাপাশি আকাশসীমাকে বন্ধ করে দিতে আহ্বান জানিয়েছে পশ্চিমাদের প্রতি। বলেছেন, তাহলেই আমরা আমাদের যুদ্ধকে ম্যানেজ করবো।

দেশটির এই জনপ্রিয় ফার্স্টলেডি একটি আবেগঘন বিবৃতি দিয়ে শেষ করেছেন লেখা। তিনি মিডিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, দয়া করে সত্য লিখুন। আমরা যদি পুতিনকে থামাতে না পারি তাহলে বিশ্বে আমাদের কারো জন্য কোনো নিরাপদ স্থান থাকবে না। পুতিন পারমাণবিক যুদ্ধ শুরুর হুমকি দিয়েছেন। এই যুদ্ধে আমরাই বিজয়ী হবো, আমাদের ঐক্যের কারণে। ইউক্রেনের প্রতি আমাদের ঐক্যবদ্ধ ভালবাসার কারণে।

ওলেনা জেলেনস্কা চলচ্চিত্রের সাবেক একজন স্ক্রিনরাইটার। বিদেশে তার আছে হাই প্রোফাইল। বেশ কিছু দেশ সফরে স্বামীর সঙ্গী হয়েছিলেন তিনি। স্কুলে উন্নততর খাবার পরিবেশনের প্রচারণার জন্য তিনি ইউক্রেনে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। বিশ্বজুড়ে ইউক্রেনের ভাষা ছড়িয়ে দেয়াকে উৎসাহিত করার জন্যও তিনি জনপ্রিয়।

 




সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন