প্রবাসের সংবাদ ফিচার্ড

প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক পৌঁছেছেন।। কোভিডের মধ্যেও জমজমাট জ্যাকসন হাইট্স

প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম। ছবি: ফোকাস বাংলা

প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক পৌঁছেছেন।। কোভিডের মধ্যেও জমজমাট জ্যাকসন হাইট্স

নিউ ইয়র্ক থেকে শিতাংশু গুহ।।  প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে এসে পৌঁছেছেন। তাঁকে আমেরিকায় সু-স্বাগতম। জেএফকে বিমান বন্দরে যথারীতি আওয়ামী লীগের ‘সাদর অভ্যর্থনা’ এবং বিএনপি’র ‘প্রতিবাদ’ ছিলো। ভাবছিলাম করোনা’র কারণে হয়তো এয়ারপোর্টে ‘বিক্ষোভ’ সংস্কৃতি বন্ধ হয়েছে, তা হয়নি, কথায় বলে ‘স্বভাব যায়না মরলে-’। এমনিতে বিমান-বন্দরে প্রধানমন্ত্রীর ‘সম্বর্ধনা নেয়া’ বা ‘বিক্ষোভ দেখার’ সুযোগ নেই, আর এবার কোভিড-১৯’র কারণে সেটা অসম্ভব, তবু কর্মীদের ইচ্ছে নেত্রীকে দূর থেকে দেখা। নেত্রী আসছেন জেনে ক’দিন থেকে নিউইয়র্কে সাঁজ সাঁজ রব উঠেছে।

বাঙ্গালী অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জমজমাট আড্ডা। অভিমানে যাঁরা দূরে সরে ছিলেন তাঁরাও এখন ভীড় জমাচ্ছেন। হাজার হোক নেত্রী আসছেন। শনিবার জ্যাকসন হাইটসে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র মধ্যেকার হৈ-হুল্লোড় আয়ত্বের বাইরে চলে যায়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে, দুই-তিনবার পুলিশ আসে, পরে অবস্থান নেয়, কেউ গ্রেফতার হ’ননি। সন্ধ্যা ৮টার দিকে ডাইভার্সিটি প্লাজায় প্রায় একই জায়গায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমাবেশ ডাকে, সংখ্যায় আওয়ামী লীগাররা বেশি থাকায় বিএনপি সুবিধা করতে পারেনি। একটু-আধটু ধাক্কা-ধাক্কি হয়, বিএনপি সরে যায়। আওয়ামী লীগ সেখানে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সভা করে, শ্লোগান উঠে, ‘হৈ হৈ রৈ রৈ বিএনপি-জামাত গেলো কই’?

সেখানে দু’জন শ্বেতাঙ্গ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা আমার সাথে কথা বলেন। জানতে চান, ‘হোয়াট ইজ গোয়িং অন’”? বললাম, আমাদের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে আসছেন, তাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপি’র সমর্থকরা জড়ো হয়েছেন। একজন বললেন, একদলের ব্যানার আছে ‘বিএনপি’, অন্যদলের ব্যানার নেই? বললাম, হয়তো ওঁদের ব্যানার এখুনি এসে পড়বে, একটু পরে ব্যানার এসেও পরে। জিজ্ঞাসা করলো, ধাক্কাধাক্কি কেন? বললাম, আওয়ামী লীগ তাঁদের নেত্রী আসছেন এতে আনন্দিত, উচ্ছসিত; বিএনপি প্রতিবাদ করছে। একজন তখন বললেন, দুই প্রতিদ্ধন্ধী দল সামনা-সামনি, অথচ মারামারি হলোনা, বাংলাদেশ ভালো; ভারত-পাকিস্তান, শ্রীলংকা হলে হাতাহাতি হয়ে যেতো। ভদ্রলোক আমাকে খুশি করার জন্যে একথা বললেন কিনা জানিনা, তবে তাঁরা আরো কিছুক্ষন সেখানে ছিলেন, এবং পরিস্থিতি শান্ত হলে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নেন।

এরপর ৭৩স্ট্রীটে দীর্ঘক্ষণ ধরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। ডুয়ান রীড চৌরাস্তার মোড়ে বেশ কিছুক্ষন  উভয় পক্ষের মধ্যে শ্লোগান-পাল্টা শ্লোগান, ধাক্কা-ধাক্কি, গালাগালি চলে। কিছুটা মারপিটের অবস্থাও সৃষ্টি হয়। পুলিশ এসময় তৎপর ছিলো, ফলে বড় কোন ঘটনা ঘটেনি। বিএনপি শ্লোগান দেয়, ‘শেখ হাসিনার গদিতে আগুন জ্বালাও একসাথে-’, ‘স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখবো’ ইত্যাদি। আওয়ামী লীগ শ্লোগান দেয়, জয়বাংলা, শেখ হাসিনা জিন্দাবাদ, এতিমের টাকা চোর, গো ব্যাক পাকিস্তান। বেশ কিছু আপত্তিকর শ্লোগান উঠে যা অনভিপ্রেত। তবে বিএনপি ‘গো ব্যাক ইন্ডিয়া’ শ্লোগানের জবাবে আওয়ামী লীগ ‘গো ব্যাক পাকিস্তান’ শ্লোগান দেয়। এসময় পুলিশ দুই দলকে ‘দে আর গভর্নমেন্ট পার্টি, এন্ড দে আর এন্টি-গভর্নমেন্ট’ বলে মন্তব্য করতে শোনা যায়।

রাত ১১টার পর ডাইভার্সিটি প্লাজায় সময় টিভি’র সাংবাদিকের ওপর কিছু লোক চড়াও হয়, কারণ তিনি ইতিপূর্বে ক’জন সম্ভাব্য সেক্রেটারি প্রার্থীর ইন্টারভিউ প্রকাশ করেন, তাদের মধ্যে একজন রাজাকারের ভাই আছেন। এককর্মী চিৎকার করে বলেন, ‘তিনি রাজাকার, শেখ হাসিনা তাঁকে বহিস্কার করেছেন, আপনি তাঁকে ক্যান্ডিডেট বানান কি করে? আওয়ামী লীগের ক’জনা কর্মী তখন সময় টিভি’র সাংবাদিককে আলগে রাখেন। জন্মভূমি সম্পাদক পাশ থেকে বলেন, আমরা কিন্তু সাংবাদিক, সাংবাদিকের পক্ষেই থাকবো। আওয়ামী লীগের কমিটি হবে কিনা তা কেউ জানেন না, কিন্তু প্রার্থীরা তাঁদের প্রার্থিতা ঘোষণা করতে ব্যস্ত রয়েছেন। এ সপ্তাহের পত্রিকাগুলোতে ‘স্বাগত, বিক্ষোভ, স্মারকলিপি ইত্যাদি বিজ্ঞাপন থাকবে। এতসব কর্মকান্ডের মধ্যেও কিন্তু আওয়ামী লীগের বিভক্তি কারো চোখ এড়ায়নি।

রবিবার জ্যাকসন হাইটস অপেক্ষাকৃত শান্ত ছিলো। তবে মানুষজন ছিলো প্রচুর। ছাত্রলীগ, যুবলীগের প্রচুর ইয়ং ছেলেপেলে ৭৩স্ট্রীট জমিয়ে রাখে। শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী অনেক কম, তাই জ্যাকসন হাইট্সে তাদের আনাগোনা কম। এয়ারপোর্টে তেমন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ভীড় ছিলো প্রচুর, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের লোক কম ছিলো। বিএনপি সেই পুরানো শ্লোগান দেয়। আওয়ামী লীগ ‘জয়বাংলা’, ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা-স্বাগতম’ ইত্যাদি শ্লোগান দেয়। প্রধানমন্ত্রী যতদিন নিউইয়র্কে আছেন, জ্যাকসন হাইট্সে ভীড় থাকবে। যদিও কারো সাথে ‘ইন-পার্সন’ দেখা-সাক্ষাৎ নেই, তবু কর্মীরা খুশি, একজন বললেন, আমরা চাই নেত্রী সুস্থ থাকুন, আমাদের থেকে তিনি করোনা আক্রান্ত হ’ন তা চাইনা, এবার না হোক, আগামীতে দেখা হবে’।# [email protected];

 

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন