অবিশ্বাস্য হলেও সত্য ফিচার্ড

বছর বছর আকারে বাড়ে, কাটলে মেলে গাছের মতো চক্র! রোমানিয়ায় ছড়িয়ে অসংখ্য ‘জীবন্ত পাথর’

বছর বছর আকারে বাড়ে, কাটলে মেলে গাছের মতো চক্র! রোমানিয়ায় ছড়িয়ে অসংখ্য ‘জীবন্ত পাথর’

পাথরের ক্ষয় হতে পারে। সেগুলি কী ভাবে বৃদ্ধি পায়? তবে কি এই পাথরগুলিতে প্রাণ রয়েছে? স্থানীয়দের অন্তত তেমনই দাবি। এমনও হয় না কি?

এক-একটির বয়স নাকি ৬০ লক্ষ বছর। কোনওটিকে হাতের মুঠোয় বন্দি করা যায়। কোনটি উচ্চতায় সাড়ে ৪ মিটার। দেখতে যেন পাথুরে বুদবুদ। রোমানিয়া জুড়ে এ ধরনের অসংখ্য পাথর ছ়ড়িয়ে রয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, বুদবুদের মতো দেখতে এই পাথরগুলি প্রতি হাজার বছরে সর্বোচ্চ ২ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। কারও আবার দাবি, প্রতি ১২০০ বছরে ৪-৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায় এগুলি।

এত বছর ধরে বৃষ্টির জল পড়ার জেরে নাকি পাথরের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে। পাথরের ক্ষয় হতে পারে। সেগুলি কী ভাবে বৃদ্ধি পায়? তবে কি এই পাথরগুলিতে প্রাণ রয়েছে? স্থানীয়দের অন্তত তেমনই দাবি। এমনও হয় নাকি? এমনতরো নানা প্রশ্ন নিয়ে পাথরগুলি দেখতে রোমানিয়ায় ভিড় করেন পর্যটকেরা।

রোমানিয়ার এই পাথরগুলির একটি গালভরা নামে রয়েছে। এক-একটি পাথরকে ‘ট্রোভ্যান্ট’ নামে ডাকা হয়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটি হল জার্মান শব্দ ‘স্যান্ডস্টাইনকনক্রেশনেন’-এর সমনাম। যার অর্থ সিমেন্ট দিয়ে জোড়া বালুকণা।

কসটেস্টি নামে রোমানিয়ায় একটি ছোট গ্রামে মূলত এ ধরনের অংসখ্য পাথর দেখতে পাওয়া যায়। সে দেশের রাজধানী বুখারেস্ট থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই গ্রামটি। ওই গ্রামের পাশাপাশি রোমানিয়ার অন্তত ২০টি জায়গাতেও এমন পাথর ছড়িয়ে রয়েছে।

Image of Trovants stones of Romania

জিয়োলজিক্যাল ইনস্টিটিউট অফ রোমানিয়ার সঙ্গে যুক্ত মিরসিয়া টিকলিয়ানু ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘মেল অনলাইন’কে বলেন, ‘‘রোমানিয়ায় নানা বয়সের ট্রোভ্যান্ট রয়েছে। মাটি থেকে এগুলির উৎপত্তি হয়নি। প্রাকৃতিক কারণে বিভিন্ন ভৌগোলিক সময় এগুলি তৈরি হয়ে গিয়েছে। কতগুলিকে আবার বালির খাদেও দেখা যায়।’’

Image of Trovants stones of Romania

টিকলিয়ানু আরও বলেন, ‘‘রোমানি প্রায় গোলাকার বা অর্ধবৃত্তাকার এই ট্রোভ্যান্টগুলি আসলে বালুকণার আস্তরণে ঢাকা বেলেপাথর। যা পাথরের উপরে ঢাকনার মতো আস্তরণ তৈরি করেছে। য়ার ভৌগোলিক সাহিত্যে সর্বপ্রথম ‘ট্রোভ্যান্ট’ শব্দের ব্যবহার দেখা গিয়েছিল।’’

বৈজ্ঞানিকদের দাবি, প্রায় ৬০ লক্ষ বছর আগে ভূমিকম্পের জেরে ট্রোভ্যান্টগুলি তৈরি হয়েছিল। বছরের পর বছর ধরে তার উপর বালি, পাথরের আস্তরণ জমা পড়েছে। সেগুলিকে আঠার মতো জুড়ে রেখেছে চুনাপাথরের আস্তরণ।

Image of Trovants stones of Romania

বৈজ্ঞানিকদের আরও দাবি, শত সহস্র বছর ধরে ভারী বৃষ্টির জেরে ট্রোভ্যান্টের উপরিভাগের আস্তরণ ভেদ করে জল ঢুকে গিয়েছে। ধীরে ধীরে তা পাথরগুলির উপরে জমা হতে শুরু করেছে। যদিও এই প্রক্রিয়াটি ঠিক কী ভাবে হয়, তা বিশদে জানাননি তাঁরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃষ্টির জলে থাকা খনিজ পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়ায় ট্রোভ্যান্টের ভিতর অত্যধিক চাপ তৈরি হয়। যার জেরে পাথরগুলি ফুলেফেঁপে বহু গুণ হয়ে ওঠে। যেন সেগুলির বৃদ্ধি হয়েছে।

পাথরগুলিকে কাটার পর এর মধ্যে গাছের গুঁড়ির মতো বৃত্তাকার রিং দেখা গিয়েছে। সেগুলির প্রতিটিই পাথরগুলির বয়স জানান দেয়।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ট্রোভ্যান্টগুলির চেহারায় বদল দেখা গিয়েছে। বৈজ্ঞানিকদের মতে, এগুলিকে সে অর্থে ‘জীবন্ত’ বলা যায় না। তবে স্থানীয় বা পর্যটকেরা এগুলিকে ‘জীবন্ত’ বলেই বর্ণনা দেন।

Image of Trovants stones of Romania

রোমানিয়ার কার্পাথিয়ান এলাকায় এমন অসংখ্য পাথরের দেখা মিললেও ট্রোভ্যান্টগুলি দেখতে কসটেস্টি গ্রামেই কেন ভিড় হয়?

আসলে ওই গ্রামের ট্রোভ্যান্টগুলি রোমানিয়ার অন্যান্য জায়গার পাথরের তুলনায় আকারে বড়। কোনওটি গোলাকার, কোনওটির আবার আকৃতি ডিম্বাকার। অনেকগুলি পাথরের পাশে আবার সেটির ‘যমজ’ ট্রোভ্যান্ট দেখা যায়।

কসটেস্টি গ্রামের ট্রোভ্যান্টগুলির আরও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বৃহদাকার পাথরগুলির পাশে ছোট আকারের পাথরও চোখে পড়ে। সেই পাথরগুলির গায়ে ছোট ছোট গোলাকার কাঁটার মতো অজস্র অংশ দেখা যায়।

Image of Trovants stones of Romania

বড়সড় ট্রোভ্যান্টের পাশে পড়ে থাকা এ ধরনের ছোট আকারের পাথরগুলির গায়ে যেন অসংখ্য বালুকণা, নুড়ি আটকে রয়েছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

-আনন্দবাজার থেকে

সংবাদটি শেয়ার করুন