দেশের সংবাদ ফিচার্ড

বাংলাদেশে তেলের দাম নজিরবিহীন বৃদ্ধির আসল কারণ কী?

বাংলাদেশে-তেলের-দাম

বাংলাদেশে তেলের দাম নজিরবিহীন বাড়ানোর জন্য সরকার বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য, পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বা বিপিসি’র লোকসান কমানো এবং পাচার হওয়ার আশঙ্কার কথা জানালেও বিশ্লেষকরা বলছেন প্রকৃত অর্থে ঋণ দাতা গোষ্ঠীগুলোর সাথে বৈঠকের আগে সংস্কারে সদিচ্ছা প্রকাশের অংশ হিসেবেই এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে সরকার।

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ থেকে প্রায় সাড়ে চারশো কোটি ডলার ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু এ সংস্থা থেকে ঋণের প্রধানতম শর্তই হলো জ্বালানি খাত থেকে ভর্তুকি তুলে নেয়া।

এখন বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, সরকার যে ঋণ চেয়েছে সংস্থাটির কাছ থেকে তা নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগেই তেলের দাম বাড়িয়ে তাদের শর্ত পূরণ করে নিলো।

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা যে ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে তার বড় অংশই জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের জন্য। গত মাসে আইএমএফ’র একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসেছিলো এবং সে সময় সরকারকে এ ভর্তুকি কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছিলো।

গবেষক ও অর্থনীতিবিদ ডঃ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, সরকার দাতা সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিতে যাচ্ছে এবং সে কারণেই ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে তেলের দাম এতটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার।

আইএমএফ-এর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলছেন, “জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো ছিলো অপরিহার্য। সরকার আইএমএফ এর সাথে আলোচনার আগেই হয়তো একটি বার্তা দিয়েছে যে এ বিষয়ে তারা খু্ব সিরিয়াস। তবে একবারে এতটা দাম না বাড়িয়ে আগে থেকে ধীরে ধীরে বাড়ালে মানুষকে এ ধাক্কা সইতে হতো না।”

 

৭ বছর লাভের পর এখন কেন লোকসানের কথা বলছে বিপিসি

বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বা বিপিসি গত ছয় মাসে (ফেব্রুয়ারি ২২ থেকে জুলাই ২০২২ পর্যন্ত) জ্বালানি তেল বিক্রয়ে ৮০১৪.৫১ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। এর আগেও দীর্ঘকাল এ প্রতিষ্ঠানটি লোকসান দিয়ে আসছিলো।

যদিও ২০১৪ সাল থেকেই লোকসানের বৃত্ত ভেঙ্গে লাভের দিকে এগুতে শুরু করে বিপিসি। কিন্তু সে লাভের সুফলও ভোক্তারা খুব একটা পায়নি।

বিশ্ব বাজারে তেলের দাম নজিরবিহীন কমে আসায় ২০১৪-১৫ অর্থ বছর থেকে ২০২০-২১ সাল পর্যন্ত সাত বছরে জ্বালানি তেল বিক্রি করেই সংস্থাটি মুনাফা করেছিলো প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা।

যদিও ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই মুনাফা ক্রমশ কমতে থাকে। কিন্তু সাত বছর মুনাফার পর এখন দাম বিশ্ব বাজারে বেড়ে যাওয়াকে সামাল দিতে পারলোনা কেন এই সংস্থাটি সেটি একটি বড় প্রশ্ন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাত বছর লাভ করলেও বিপিসি তার লাভের অর্থ পরবর্তী সংকটকালে ব্যবহারের জন্য হাতে রাখতে পারেনি সরকারেরই একটি নতুন আইনের কারণে।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলছেন, ২০২০ সালে পাবলিক সেক্টর কর্পোরেশন সম্পর্কে নতুন আইনে বলা হয়েছিলো যে তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারকে জমা দিতে হবে। সে কারণে বিপিসি তার লাভের বিপুল পরিমাণ টাকা সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে।

“ওই অর্থ তখন সরকার নিয়ে না নিলে এখন বিশ্ব বাজারে দাম বাড়ার কারণে বাড়তি ব্যয় যা হচ্ছে সেটা বিপিসি সামাল দিতে পারতো,”।

তিনি বলেন, এখন যেমন আবার তেলের মূল্য দেখিয়ে বিদ্যুতের দামও বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হবে, অথচ বিদ্যুৎ খাতের বড় দায় হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ অর্থাৎ বসে থাকা কেন্দ্রগুলোকেও যে অর্থ সরকারকে দিতে হচ্ছে সেটি।

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অবশ্য বলেছেন, বিপিসির লাভের টাকা দিয়ে জ্বালানি খাতের উন্নয়নমূলক কাজেই ব্যয় করা হয়েছে, যার মধ্যে আছে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইন নির্মাণ ও রিফাইনারি নির্মাণের মতো কাজ।\

 

বিশ্ববাজারে তেলের দাম: আসলে কতটা বেশি

করোনার পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার হবার পটভূমিতে একদিকে যেমন আমদানি অনেক বেড়ে যায় তেমনি বাড়তে থাকে জ্বালানি তেলের দামও।

আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেল প্রতি ২০-২৭ ডলারের জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে বাড়তে ১২০ ডলারের মতো হয়ে এখন আবার কমে ৯৪ ডলারে এসেছে।

 

রিজার্ভ কমার সাথে সম্পর্ক আছে?

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় দুই বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত ৪০ বিলিয়ন বা চার হাজার কোটি ডলারের নীচে নেমে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া তথ্যে এখন রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে। এই পরিমাণ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।

আবার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় প্রয়োজন বা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে শুরু করলে অর্থনীতি নিয়েই সংকট শুরু হয়।

অন্যদিকে শুরু হয় ডলার সংকট এবং কয়েকমাস ধরে ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতেও সমস্যায় পড়ছেন আমদানিকারকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করে ও জ্বালানি সাশ্রয়েও নেয় নানা পদক্ষেপ।

তবে সরকারের সমালোচকরা অনেকেই বলছেন যে দুর্নীতি ও মেগা প্রজেক্ট অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের কারণে সরকার অর্থ সংকটে পড়েছে বলেই জ্বালানি তেলের দাম লাগামহীন বাড়িয়েছে।

তাদের মতে, মূলত রিজার্ভে পর্যাপ্ত ডলার নেই বলেই এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে।

গোলাম মোয়াজ্জেম অবশ্য বলছেন, জ্বালানি খাতের দাম বৃদ্ধির কোন প্রভাব রিজার্ভে পড়ার সুযোগ নেই। তবে সরকারের রাজস্ব বাড়বে যা সরকারকে স্বস্তি দেবে।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা

এফএইচ/বিডি


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন