দেশের সংবাদ ফিচার্ড

দুর্গাপূজায় সাম্প্রদায়িক হামলা বেশিরভাগ আসামি জামিনে মুক্ত,

দুর্গাপূজায় সাম্প্রদায়িক হামলা বেশিরভাগ আসামি জামিনে মুক্ত, চার্জশিট হয়নি অর্ধেক মামলার

সমীর কুমার দে।। বছর ঘুরে আবারও এলো দুর্গাপূজা। আগামী পহেলা অক্টোবর শুরু হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। গেল বছর দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিনে কুমিল্লার একটি মণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখাকে কেন্দ্র করে অন্তত ১৫টি জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর করা হয় শতাধিক মণ্ডপ ও হিন্দুদের বাড়িঘর। শুধু কুমিল্লা ও চাঁদপুরেই এসব ঘটনায় ৫৬ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এর অর্ধেক মামলায় আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারও হয়েছিল চার শতাধিক আসামি। কিন্তু অধিকাংশ আসামি জামিনে মুক্তি পেয়ে গেছেন। তবে কুমিল্লার মণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার মূল হোতা ইকবাল এখনো করেছে পুলিশ।

ওই সময় দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে ২৬টি মামলার তদন্ত করেছে রা অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার ইত্তেফাককে বলেন, আমরা ২৬টি মামলার মধ্যে ১৪টি মামলার চার্জশিট দাখিল করেছি। একটি মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছি। আর ১১টি মামলা বর্তমানে তদন্তাধীন। প্রতিটি মামলা অত্যন্ত যত্ন করে তথ্য-উপান্তের ওপর ভিত্তি করে আমরা চার্জশিট দিয়েছি।

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, তাদের কাছে যে ২৬টি মামলা ছিল এর মধ্যে কুমিল্লার চারটি, নোয়াখালীর ১১টি, চাঁদপুরের তিনটি, মৌলভীবাজারের দুইটি এবং চট্টগ্রাম ও বাগেরহাটের একটি করে মামলা। এছাড়া কক্সবাজার ও বান্দরবানের চারটি মামলা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের একটি, কুমিল্লার একটি, বান্দরবানের একটি, নোয়াখালীর ৯টি, চাঁদপুরের একটি ও বাগেরহাটের একটি মামলার চার্জশিট দিয়েছে পিবিআই। বান্দরবানের একটি মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। চাঁদপুরের দুইটি ও মৌলভীবাজারের দুইটি মামলা এখনো তদন্তাধীন রয়েছে বলে পিবিআই সূত্রে জানা গেছে।

এই মামলাগুলোতে পিবিআই ১৭২ জনকে গ্রেফতার করেছিল। এর মধ্যে ১২৮ জন জামিনে মুক্তি পেয়ে গেছেন। ৩২ জন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাদের জামিনে মুক্তি দেয়। এ সময় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় কয়েক জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৯ জন মারা যায়।

গত বছর অষ্টমীপূজার দিন ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার নানুয়া দীঘিরপাড়ে পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়া যায়। এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত মানুষ মণ্ডপ ভাঙচুর করে। পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে প্রধান অভিযুক্ত ইকবালকে ২১ অক্টোবর কক্সবাজার থেকে আটক করে পুলিশ। ইকবাল এখন কুমিল্লার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন। এ ঘটনায় কুমিল্লায় মোট ১৩টি মামলা হয়েছিল। গ্রেফতার হয়েছিল ১০৭ জন। এদের অধিকাংশই এখন জামিনে মুক্ত।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান  বলেন, ১৩টি মামলার মধ্যে দুইটি মামলার তদন্ত করেছে জেলা পুলিশ। অন্য মামলাগুলোর মধ্যে পিবিআই চারটি ও সিআইডি বাকি মামলাগুলোর তদন্ত করেছে। জেলা পুলিশ যে দুইটি মামলার তদন্ত করছে তা একেবারেই শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।’

গত বছর নোয়াখালীতে পূজামণ্ডপে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় সর্বমোট ৩২টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে ১০ মামলার তদন্ত করেছে জেলা পুলিশ, ১১ পিবিআই ও ১১ সিআইডি। নোয়াখালীর পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ‘জেলা পুলিশ যে ১০ মামলার তদন্ত করেছিল তার ৯টির চার্জশিট ইতিমধ্যে আদালতে দাখিল করা হয়েছে। অপর মামলাটিরও তদন্ত শেষ পর্যায়ে আছে। যে কোনো সময় চার্জশিট দেওয়া হবে।

পিবিআই যে ১১টি মামলার তদন্ত করেছে তার ৯টি মামলার চার্জশিট হয়েছে। এই ৩২টি মামলায় এজাহারে থাকা আসামির সংখ্যা ৪১২ জন। আর সন্দিগ্ধের সংখ্যা ৮ থেকে ৯ হাজার। পুলিশ মোট ২৩৫ জন আসামি গ্রেফতার করেছিল। তাদের অধিকাংশই জামিনে মুক্তি পেয়ে গেছেন।

এদিকে একই ঘটনায় চাঁদপুরে ১১টি মামলা হয়েছিল। এর পাঁচটি মামলার তদন্ত করেছিল জেলা পুলিশ। পিবিআই তিনটি আর সিআইডি তিনটি মামলার তদন্ত করেছে। পিবিআই একটি মামলার চার্জশিট দিয়েছে। অন্য দুইটি মামলা তদন্তাধীন। চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ ইত্তেফাককে বলেন, জেলা পুলিশ পাঁচটি মামলারই চার্জশিট দিয়েছে।

৯ বছরে সংখ্যালঘুদের ওপর সাড়ে ৩ হাজার হামলা: আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সারা দেশে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে ১০২টি। আর গত ৯ বছরে হামলা হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার। কোভিডকালেও ২০২০ সালে হিন্দুদের ১২টি বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়, তিনটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ৬৭টি মন্দির-উপাসনালয়ে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। এসব ঘটনায় আহত হন ৭১ জন।

আসক বলেছে, ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গত ৯ বছরে সারা দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ৩ হাজার ৬৫৮টি হামলার ঘটনা ঘটে। বছরগুলোতে শুধু মন্দির ও উপাসনালয়ে হামলা এবং প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে ১হাজার ৬৭৮টি। হামলার শিকার প্রায় ৯৯ শতাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন) আলী আহমেদ খান ইত্তেফাককে বলেন, এই মামলাগুলো গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে পুলিশ। গত বছর যে ঘটনাগুলো ঘটেছিল তার অধিকাংশ মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। কিছু মামলার তদন্ত শেষ করতে সময় লাগে। এবার পূজোর আয়োজনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। –ইত্তেফাক

সংবাদটি শেয়ার করুন