ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

বিচিত্র কুমার-এর  এক গুচ্ছ ক বি তা

বিচিত্র কুমার-এর  এক গুচ্ছ ক বি তা
———————————————————————————-

স্বপ্নপূরীর দেশে


ইচ্ছে হলে আবার এসো ফিরে কোন এক বর্ষার দিনে
এই বাংলায় নকশীকাথাঁর মাঠে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামলে,
দুজনে একটু ভিজবো মুক্ত স্বাধীন নীল আকাশের নীচে
মুক্তা হাওয়ায় মুক্ত বেশে মুক্ত মাঠে মুক্ত নদীর কূলে।
হাতে রেখে হাত দুজনে একটু হাঁটবো স্বপ্নপূরীর দেশে

তুমি আর আমি একাএকা হাওয়ায় ভেসে ভেসে।


তখন হয়তো চোখে পড়বে ময়ূর ময়ূরীরা নিত্য করছে
সুদূরে স্বাধের বৃষ্টির জলে কত না হেসে খেলে,
পাতি হাঁসেরা সাঁতার কাটছে আনন্দ আর উল্লাসে
ভেসে ভেসে মায়াবী এক নদীর জলে।
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ আমরা ভিজে যাব একপসলা বৃষ্টিতে

তুমি যেন আমার দিকে চেয়ে থাকলে অপলক দৃষ্টিতে।


হয়তো তখন আমি একগুচ্ছ কদম ফুল তুলি
তোমার খোঁপায় গেঁথে দিব,
হেঁটে হেঁটে মাতাল হাওয়ায় দুজনে গল্পের দেশে
হাতে রেখে হাত সবুজ শ্যামল বাংলায় হারাব।
আবার যদি তুমি ফিরে এসো প্রিয়া সেই চিরচিনা স্বপ্নপূরীর দেশে
এখনো সেখানে আমি তোমার প্রতীক্ষা দাঁড়িয়ে থাকি একাকী বেশে।
————————————————————————————————
তোমার দু’চোখের ভিতর প্রেম দেখেছি

তোমার দু’চোখের কালো পাতার ভিতরে
আমি এক রঙিন স্বপ্নিল আকাশ দেখতে পেয়েছি,
কপালেতে কালোটিপ লালঠোঁটের পাপড়ির উল্লাস

টলমলে অশ্রু আর বৃষ্টির শতশত ফোঁটা দেখেছি।


মনে হচ্ছিল তুমি কারু জন্যে প্রেমের পরসা সাজিয়ে
কোটি কোটি বছর প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিলে,
তোমার মুখশ্রীর এক ঝলক মিষ্টি হাসি যেন

সেই কথাটাই বলেচ্ছিল ফুটন্ত ফুলে ফুলে।


ওইখানে সবুজ পাতার ভিড়ে শুভ্রফুলের পাপড়িতে
রকমারি প্রজাপতি ফুরফুর করে উড়চ্ছিলো,
তোমার দীঘলকালো চুলে গণসমুদ্রের ঢেউ নেমেছিলো

ফুলের সুঘ্রাণে অচিনা নীলভ্রমরেরা ঘোরাফিরা করছিলো।


আমি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম সেই স্বপ্নপূরী
তোমার দু’চোখের কালো পাতার ভিতরে,
তুমি স্নিগ্ধ দুটি আঁখি খুলে বললে, এতদিন পরে আপনি?
         কী খুঁজে পেয়েছেন আপনার স্বপ্নপূরী?
আমি বললাম কাছেই রয়েছে সেতো নয় বহুদূরে?
—————————————————————————————

দু’ফোঁটা অশ্রু


এ জীবনে সব পেয়েছি পাইনি কারু মন
একলা একলা কাটে গেল আমার সারাটা জীবন,
চাই না আমি তোমার লগ্ন দেহ আহার ভরা বুক

শুধু আমি চেয়েছিলাম দু’ফোঁটা অশ্রু করব বরণ।


সেই আশাতে হাত বাড়ালাম রঙিন পৃথিবীতে
এমন কেউ কী নেই এই জগতে?
ঘর থেকে দু’পা ফেলিয়ে দেখি বাড়ির আগিনাতে

একটি রঙিন প্রজাপতি সুদূরে পুষ্প বাগানাতে।


রঙে ঢ়ঙে খেলছে কত রঙিন ফুলে ফুলে
এদিকে সেদিকে মৌমাছিরা ফুলের মধু খাচ্ছে,
মিষ্টি একটা সুবাস চারদিকে ছরিয়ে পড়েছে

ভ্রমররা ফুলে ফুলে উল্লাসে নাচানাচি করছে।


সে হাতছানি দেয় আমাকে গোপনে ডাগর ডাগর দুটি চোখে
তার এক ঝলক মিষ্টি হাসি যেন লেগে ছিলো মুখে,
সে বললো, আমি হলাম রঙের রানী নিবেন আমার রঙ

আমি আপনার একাত্বতা দূর করে দিব সুখে?


উওরে আমি বললাম আমি শুধু দু’ফোটা অশ্রু চাই
আছে তোমার কাছে?
আমি আর রঙিন স্বপ্ন দেখতে চাই না সে মৃদুস্বরে বললো,
আমার দু’চোখের নদী শুকিয়ে গেছে প্রথম ফাগুনবেলা ভালোবেসে

তবে আপনে নদীর কাছে যান ওর অনেক জল আছে।


মাঠ পেরিয়ে বন পেরিয়ে অনেক কষ্টে গেলাম নদীর কাছে
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম, একটা সত্যিকারের ভালোবাসা চাই,
তুমি দিতে পারবে আমায় তোমার দু’ফোঁটা অশ্রু উপহার
সেও মৃদুস্বরে বললো আমার সব কিছু সাগরকে উজার করে দিয়েছি

                   এখন আপনাকে দিবার মতো আমার আর কিছু বাকী নেই?


আপনেও ইচ্ছে করলে আমার নদীতে সাঁতার কাটতে পারেন
যত খুশি তত,
অবশেষে চোখের পর্দা খুলে হঠাৎ দেখি

বোন হাঁসেরা সেই রূপসী নদীতে হাবুডুবু খাচ্ছে কত।


———————————————————————————————

অভিমান


এখন আর তোমার প্রতি কোন অভিমান হয় না
যেদিন থেকে জেনেছি তুমি আমার কেউ না
তাই তোমার প্রতি আমার আর কোন অভিযোগ নেই

কখনো আর তোমার প্রিয় নাম ধরে ডাকবো না।


বারবার মনে পড়লেও কখনো আর আমি বলবো না
তোমাকে আর কতদিন ধরে দেখি না,
এসো না দেখা করি দুজনে কোথায় বাড়াতে যাই?

গড়ম চায়ের চুমুতে চুমুতে আর স্বপ্ন আঁকবনা।


তুমি তো উড়ন্ত পাখির মতো এ ডালে ও ডালে বসো
পাতার ফাঁকে লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলো,
চাঁদের আলো ভালো লাগে তোমার রঙধনু রঙ

জানি না আরো কত প্রেম প্রেম খেলো।


তোমার স্বরূপ জেনে ফেলেছি চিনিছি তোমায় আমি
আমার চেয়ে অন্য কেউ তোমার কাছে দামি,
কালোমেঘে ছেয়ে গেছে মনের আকাশ বজ্রবৃষ্টি হচ্ছে

তবু তোমায় আর মনে করবো না আমি।


ভুলেও তোমার কথা আর কখনো মুখে আনবো না
কারণ আমি তো আর তোমার কেউ না,
তাই এখন আর তোমার প্রতি কোন অভিমান হয় না
নিজের প্রতি ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই না।
———————————————————————————

মনের ঠিকানা


উতলা নদী আমাকে ভালোবেসে জল ছিটিয়ে
সাগরের বুকে একাকী হাতছানি দিয়ে ডাকে আমি যাইনি,
প্রজাপতি রঙ ছরিয়ে আমাকে কাছে ডাকে আমি যাইনি

কোকিল গান শুনিয়ে আমাকে ডাকে আমি যাইনি।


চাঁদপরীরা আমার দিকে তাকিয়ে হাসে চাইনি
নীল আকাশের তারারা চুপিচুপি ভালোবাসে জানি,
মনের দরজা খুলে কাছে ডাকে আমি যাইনি

ফুল কলিরা ছুটে ছুটে আসে আমি হাত বাড়াইনি।


হঠাৎ দেখি সুদূরে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে এলোমেলো চুলে
যেন সবুজ পাতার ফাঁকে মুখটা তার ঢেকে কোন দিকে না চেয়ে,
মুখে তার আটা ময়দা নেই চোখে তার কাজল নেই

যেন অতি সাধারণ এক প্রকৃতির মেয়ে।


তোমার ভালোবাসা আমাকে শ্যাওলার মতো আঁকড়ে ধরেছে
আমি যেন তোমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারছি না,
অবশেষে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মনটা যে হারিয়ে
তোমাকেই দিলাম আমার মনের ঠিকানা।
———————————————————————————–

আমি প্রেমিক হতে পারিনি


কোন এক নাটকীয় দৃশ্যের ভিতরে
তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখিনি,
এযুগের নায়ক নায়িকার মতো

তোমার বুকের বোতাম ছিড়িনি।


এজন্যে হয়তো তোমার কাছে
আমি প্রেমিক হতে পারিনি,
সুদর্শন পরুষ হতে পারিনি

কিম্বা রোমান্টিক হতে পারিনি।


তুমি যদি আমাকে কাছে টেনে নিতে
তাহলে আমিও প্রেমিক হতাম,
তুমি যদি বাঘিনী হতে

তাহলে আমিও পাগলা ঘোড়া হতাম।


কিন্তু তুমি আমাকে প্রেমিক হতে দিলে না
তুমি আমাকে প্রেম শেখালে না,
কারণ আমি শারুফখান কিম্বা কালাচাঁদ ছিলাম না

তাই তো তুমি প্রেম দিলে না।


আমি প্রেমিক হতে পারিনি
সারাটা জীবন তোমার আসামিই হয়ে রয়ে গেলাম,
আমি মিছেমিছি কাঁদতে পারিনি

তাই তোমার কাছে অপরাধীই রয়ে গেলাম।



দুপচাঁচিয়া,বগুড়া,বাংলাদেশ।


সংবাদটি শেয়ার করুন