মত-মতান্তর

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বলছি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বলছি

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বলছি

আমার “মা” তো আমার মা, রূপে গুনে মেধায় বা পার্ফেকশনের সার্বিকতা নির্বিশেষে মা তো মা ই, মায়েদের কোন প্রতিযোগিতা নেই, নিজের মা বরাবরই মাতৃত্বে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আমরা যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মেছি, বেঁড়ে উঠেছি এবং সেখানকার পুষ্টি আর শক্তি নিয়ে জীবনে এতদুর এসেছি, বাংলাদেশের মধ্যে এই জেলাটি আমাদের কাছে তীর্থসম, প্রতিযোগিতা ছাড়াই সেরা। মায়ের ভালবাসার একই ফ্রেমের মতই দেশপ্রেম/জন্মভুমি প্রেম, সংক্ষিপ্ত গণ্ডিতে জন্মজেলা প্রেম। এই উপলব্ধি বাংলাদেশের প্রতিটি জেলাবাসীদের নিজ নিজ জেলার জন্যে সমভাবে প্রযোজ্য।

সুর সম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ, ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনের ফকরে বাঙাল মাওলানা তাজুল ইসলামের ব্রাহ্মণবাড়িয়া দেশ, জাতি, বিশ্ব আর মানবতার কল্যাণে জন্ম দিয়েছে অনেক আলোকিত মানুষ, যারা এগিয়ে নিয়ে গেছে শিক্ষা, বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য আর মানবতার ধাপগুলোকে এক স্তর থেকে আরেক স্তরে। উত্তর গোলার্ধের ওস্তাদ আলি আকবর খাঁর কিংবা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামাই ভারত বর্ষের পণ্ডিত রবি সঙ্করের কাছে তীর্থভুমি সম এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাংলাদেশের আর আট-দশটা অঞ্চলের মতই ঘটন অঘটনে ভরপুর। অঘটনে আমরা বিচলিত হই, উদ্বিগ্ন হই, কাতর হই।

আমরা বাঙ্গালিরা যখন দেশের বাইরে যাই, চারিদিকে খালি রেসিজিম খুঁজি, কিছু অবহেলা দেখতে পেলেই বাদামী চামড়ার কারণে নিজেকে কেমন জানি ভিকটিম ভিকটিম মনে হয়, কিন্তু কখনো আয়নায় দেখিনা আমরা নিজেরা কত বড় রেসিস্ট, কত বড় হেট স্পীচের প্রবক্তা। যে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় শুরুটা হয় “অ” তে “অজগর” দিয়ে সেই দেশে কোন ঘটনায় কোন বিশেষ অঞ্চলের মানুষের বিরুদ্ধে হলিস্টিক্যালী হেট স্পীচ উস্কে দেবার আগে চিন্তা করা উচিত বাগাড়ম্বরটা বুমেরাং হয়ে যায় কিনা। বাংলাদেশে যে কয়েকজন সাংবাদিক ভাল বলার জন্যে পরিচিত, উনাদের বাক্যচয়নে অন্তত N95 ফিল্টারিংটা দরকার, কারণ ফালতু নার্সিসিস্টিকতার চাইতে পেশাদারিত্বটা খুব জরুরী স্তর উত্তরণের জন্যে। স্তর উত্তরণের বিষয়টি একারণে বলছি যে সাংবাদিকতায় আজকাল কবি আবুল হাসানের ভাষায় “কতগুলি মুখস্ত মানুষ দেখি”।

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বলছি!

আপনারা যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া বা ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীদের নিয়ে ট্রল করছেন, ব্যাপক জনসমাগমের আয়োজকদের তাতে কিছুই আসে যায় না, কখনো আসে যায়নি অবশ্য। বরং আসে যায় কয়েক মিলিয়ন ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর লকডাউনে থেকে বিব্রত হওয়া ছাড়া যাদের কিছুই করার ছিলনা। তাঁরা এখন শঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত অসংখ্য জানাজার আর গণকবরের আশঙ্কায়। ঢাকা, নরসিংদি, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ থেকে জানাজায় আগত বিপুল সংখ্যক অতিথিরা কি নিয়ে গেলেন বা কি দিয়ে গেলেন, আর আশুগঞ্জ, সরাইল, আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের জানাজায় অংশকারীরা নিজেদের পরিবারের জন্যে কি বিপদ ঘরে নিয়ে গেলেন অপেক্ষার শঙ্কিত প্রহরের সুচনা মাত্র।

লকডাউন উপেক্ষা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জানাজার ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীদের বিচলিত করেছে, উদ্বিগ্ন করেছে, এমনটি হওয়া উচিত ছিলনা, প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে আগে থেকেই সতর্কতার সাথে ব্যবস্থা নিলে হয়তো এটি রোধ করা যেত। নিষ্ঠাবান প্রশাসনে “সিক্সথ সেন্স” মাঝে মধ্যে ভীষণ জরুরী। এই ঘটনাটিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এক্সপোজ হয়েছে বটে, কিন্তু এটা তো সারা বাংলাদেশেরই চিত্র। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার পরপর বরগুনায় এক রাজনৈতিক নেতার জানাজায় একই দৃশ্য। বাংলাদেশের অনেক জায়গাতেই নেতা সে হোক ধর্মীয় বা রাজনীতির, এরকম ঘটনা তো ঘটছে। ঢাকায় এমন সব পীর আছেন আল্লার সাথে, নবীর সাথে সম্পর্ক নিয়ে ভয়ংকর সব তথ্য দিয়ে ইসলামকে অনবরত অপদস্ত করেই যাচ্ছেন, লকডাউনের মধ্যে তাঁদের কিছু হলেও তাঁদের ভক্তদের সামলানোতো আরও কঠিন। সমস্যাটা সার্বিক এবং জাতীয়, জেলা ভিত্তিক তো নয়।
অতএব দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব বঙ্গে!তিষ্ঠ ক্ষণকাল / এক্ষণে আমি বলব “চিন্তা কর ক্ষণকাল”।

 

সিবিএনএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − eleven =