ফিচার্ড মত-মতান্তর

পারিবারিক আইন নিয়ে হিন্দুরা দ্বিধাবিভক্ত 

বাংলাদেশের-ভবিষ্যৎ-কি

পারিবারিক আইন নিয়ে হিন্দুরা দ্বিধাবিভক্ত 

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।। ‘হিন্দু পারিবারিক আইন’ সংশোধনী নিয়ে এমুহুর্তে ব্যাপক কথাবার্তা হচ্ছে। সংশোধনীতে বেশ ক’টি বিষয় আছে, তবে পিতার সম্পত্তিতে কন্যার অধিকার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশি। ক’টি এনজিও এবং ক’জন ব্যক্তি আইন কমিশনে এই সুপারিশ পেশ করেছেন। এখন পর্যন্ত এনিয়ে সরকারের কোন ভূমিকা নেই, তবু সমালোচনা চলছে। প্রথমে দেখা যাক বিয়ে প্রসঙ্গ, হিন্দু বিয়ে কোন কন্ট্রাক্ট নয়, এটি বৈদিক প্রথা, চমৎকার। এতে বিচ্ছেদের কোন প্রসঙ্গ নেই, যজ্ঞ, গোত্রান্তর, সামাজিক আচার-আচরণ, প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র একে গৌরবান্বিত করেছে, এথেকে সরে যাওয়ার যৌক্তিক কোন কারণ নেই। কেউ চাইলে আদালতে বিয়ে করতে পারেন, মন্দিরে বিয়ে করতে পারেন, রেজিষ্ট্রেশন করতে পারেন আবার নাও পারেন, কিন্তু ১৫দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন না করলে বিয়ে অবৈধ হয়ে যাবে বা জরিমানা হবে, এটা কেমন কথা?  

হিন্দুরা বিয়ে-বিচ্ছেদ করতে পারেনা, এ থিওরিও ঠিক নয়! পারিবারিক আইনে না থাকলেও যেকেউ রাষ্ট্রের আইনে বিচ্ছেদ করতে পারেন। আবার নুতন করে বিয়ে করতে পারেন। সংসার হচ্ছে মানিয়ে নেওয়া, অংশীদারিত্ব, এতে ঝামেলা পাকানোর দরকারটা কি? নগন্য সংখ্যক ব্যতিক্রমী ঘটনা হয়তো আছে, তা শুধুই ব্যতিক্রম, এতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়না। আর এক স্ত্রী থাকতে বিয়ে শাস্তিযোগ্য, ভাল কথা, বলি ক’টা হিন্দুর ঘরে একাধিক স্ত্রী রয়েছে? দত্তক নেয়ার প্রচলিত আইনই যথেষ্ট,  হিন্দুদের জন্যে ভিন্ন আইন করতে হবে কেন? কেউ দত্তক নিতে চাইলে কে আটকে রাখছে? আর ক’টি পরিবারে দত্তক আছে? দত্তক উপরতলার বিষয়, যাঁরা দত্তক নেন তাঁরা জানেন কিভাবে দত্তককে সম্পত্তি দিতে হয়!

নারীদের সংসার চালানোর বিধানটিও হাস্যকর, এটি এমনিতেই বহাল আছে, আইনের দরকার নেই। বহু নারী শুধু স্বামীর সংসার নয়, পিতার সংসারও চালান। একইভাবে যেকোন বর্ণে বিয়ে হচ্ছে, এমন কোন আইন নেই যে, যেকোন বর্ণে বিয়ে করা যাবেনা, যা আছে তা প্রথা, এই প্রথা সময়ের বিবর্তনে আপনাআপনি ভেঙ্গে পড়ছে। সুতরাং আইনের প্রয়োজন নেই। পিতার সম্পত্তিতে কন্যার সম-অধিকারের কথা প্রস্তাবিত সুপারিশে বলা হয়েছে। মুসলিম নারীরা সমান অধিকার পাবেনা কেন? একটি বৈষম্য দূর করতে আর একটি বৈষম্য হবে কেন? আইন কমিশনের সুপারিশমালা বাংলাদেশের সকল নারীর জন্যে প্রযোজ্য হউক, তাহলে তো ল্যাটা চুকে যায়? ধর্ম টেনে আনার দরকারটা কি? আইন করতে হয় সবার জন্যে এক আইন করুন।

সম্পত্তিতে নারীর অধিকার প্রসঙ্গে আশির দশকে বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্য্য, জাষ্টিস রণধীর সেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সুধাংশু শেখর হালদার, ব্যারিষ্টার সুধীর দাস, সিআরদত্ত এবং আরো অনেকের সাথে বিস্তারিত আলোচনা হতো। এঁরা সবাই নারীর সমান-অধিকারের পক্ষে ছিলেন। তাঁরপরও কিছু হয়নি, কারণ রাষ্ট্র ছিলো প্রতিকূল। এখন যাঁরা এনিয়ে নাড়াচাড়া করছেন, এদের কাউকে কাউকে আমি চিনি, এঁরা প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ ঘরানার, তাঁদের মহৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমার দ্বিমত নেই, কিন্তু রাষ্ট্র ব্যবস্থা কি অনুকূলে এসেছে? এই আইনের সুপারশকারীদের সবাই স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তি, কিন্তু গত ১২ বছরে রামু থেকে শাল্লার ঘটনায় মানুষ তো আপনাদের কথা শুনেনি। আপনারা তো পারতেন ‘অনুকূল একটি সরকার’-কে দিয়ে কিছু কাজ করাতে, ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের’ পক্ষেও তো মানুষ আপনাদের কথা শুনেনি, তাই হিন্দুরা আপনাদের ওপর আস্থা রাখবে কিভাবে?

এ ইস্যুতে হিন্দুরা মোটামুটি দুইভাগে বিভক্ত। সম্পত্তিতে নারীর অধিকার বা সম-অধিকার থাকুক তাতে তেমন আপত্তি নেই, কিন্তু সবার মনে রয়েছে ভয়, অবিশ্বাস এবং সন্দেহ কাজ করছে। প্রশ্ন উঠছে, সরকার ‘মুসলিম পারিবারিক আইনে হাত দিতে সাহস পাচ্ছেনা, হিন্দু পারিবারিক আইনে হাত দিচ্ছেন কেন? ৪ঠা জুলাই ২০২১-এ ‘হিন্দু পারিবারিক আইন নিয়ে গ্লোবাল বেঙ্গলী হিন্দু কোয়ালিশনের একটি বিশ্বব্যাপী ঝুম মিটিং-এ বক্তারা বলেন: হিন্দুরা এমনিতেই সম্পত্তি রক্ষা করতে ব্যর্থ, তদুপরি নারীদের সম্পত্তি দিলে দেউলিয়া হয়ে যাবে। হিন্দুনারীদের সম্পত্তি দিতে ধর্মে কোথাও বাঁধা নেই। শুধু হিন্দু কেন, সকল নারীর সম-অধিকার দিতে হবে। লাভ-জ্বিহাদের মত এবার সম্পত্তি-জ্বিহাদ শুরু হবে। নারীদের সম্পত্তিতে অধিকার থাকা উচিত। ইউনিফর্ম সিভিল কোড দরকার। হেফাজতকে সরকার যেভাবে ভেঙ্গেছেন, হিন্দুদের একইভাবে ভাঙ্গার চেষ্টা চলছে। এমুহুর্তে সরকারের কোন ভূমিকা নেই। এর প্রয়োজন আছে, কিন্তু আগে ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’, সংখ্যালঘু কমিশন ইত্যাদি গঠন করুন, তারপর কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এবারের বাজেটে সংখ্যালঘুদের জন্যে মাত্র ১.৯৩% বরাদ্ধ রাখা হয়েছে, এথেকে সরকারের সদিচ্ছা বোঝা যায়।

কমিশনের প্রস্তাবনায় বিশ্বব্যাপী নারীর সমান অধিকারের প্রসঙ্গ এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই সদ্য নারীর অধিকারের ওপর জোরালো বক্তব্য রেখেছেন। কমিশনের প্রস্তাবনায় শুধু হিন্দু নারীর কথা কেন, সকল নারীর প্রসঙ্গ আসুক। সরকার হিন্দু বা মুসলিম পারিবারিক আইনে হাত না দিয়ে বা পাশ কাটিয়ে সংসদে বিল এনে একসাথে সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান অধিকার, বিবাহ বিচ্ছেদ, জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে রেজিস্ট্রেশন, বা ইত্যাকার সকল বিষয়ে আইন পাশ করতে পারেন। সংসদে  সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে নিমিষে ‘ইউনিফর্ম সিভিল কোড’ পাশ হতে পারে। আমরা সর্বক্ষেত্রে নারীর সমান অধিকার চাই, জাতীয় সংসদ সার্বজনীনভাবে দেশের প্রতিটি নাগরিককে এ অধিকার দিতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন