কৃষি ও প্রকৃতি পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য ফিচার্ড

ব-দ্বীপ কাকে বলে? পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ কোনটি?

পৃথিবীর-বৃহত্তম-ব-দ্বীপ-কোনটি

ব-দ্বীপ কাকে বলে? পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ কোনটি?

ব-দ্বীপ শব্দটি গ্রিক ∆ (ডেলটা) থেকে এসেছে। ব-দ্বীপকে ইংরেজীতে Delta বলা হয়, আর বাংলায় ‘ব’ বর্ণটির সাথে ডেলটা ∆ এর মিল থাকার কারনে বাংলায় ব-দ্বীপ নামটি প্রচলিত হয়।

ব-দ্বীপ-কাকে-বলে : নদীর মোহনায় দীর্ঘদিনের জমাট পলি দ্বারা সৃষ্ট প্রাকৃতিক ভূমিকে ব-দ্বীপ বলে। একটি নদী বয়ে গিয়ে যখন কোন জলাধার, হ্রদ, সাগর কিংবা মহাসাগরে পরে তখন নদীমুখে পলি জমে যে প্রাকৃতিক ভূমি বা দ্বীপ সৃষ্টি হয় এটাই ব-দ্বীপ।

ব-দ্বীপ কিভাবে তৈরী হয়?
নদীর পলিমাটি তিনভাবে ব-দ্বীপ তৈরী করতে পারে,

প্রথমত, নদী যদি স্থির কোন জলাধার যেমন, হ্রদ, উপসাগর, সাগর বা মহাসাগরে পতিত হয় তবে নদীর পতিত মুখে ব-দ্বীপ তৈরি হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, একটি নদী যদি অপর আরেকটি নদীর সাথে মিলিত হয় এবং দ্বিতীয় নদী যদি প্রথম নদীর সাথে তাল মিলিয়ে পলিমাটি সরাতে না পারে তবে দুই নদীর মিলিত স্থানে ব-দ্বীপ তৈরি হতে পারে।
তৃতীয়ত, যদি কোন ভুমধ্য অঞ্চলে নদীর পলি স্থলভাগে ছড়িয়ে পড়ে তবে ব-দ্বীপ তৈরি হতে পারে।

ব-দ্বীপের প্রকারভেদঃ
১. স্রোত-নিয়ন্ত্রিত বদ্বীপ
২. জোয়ার-ভাটা-নিয়ন্ত্রিত বদ্বীপ
৩. গিল্বার্ট বদ্বীপ
৪. ভূমধ্য বদ্বীপ

আকৃতি অনুসারে ব-দ্বীপের প্রকারভেদঃ
১. ধনুকাকৃতি বদ্বীপ
২. তীক্ষাগ্র বদ্বীপ
৩. পাখির পায়ের মতো বদ্বীপ
৪. খাড়ীয় বদ্বীপ

পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ কোনটি?

পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ হলো বাংলাদেশ। কি! শুনতে অবাক লাগছে। অবাক লাগলেও সত্য, বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ। আসুন জেনে নেই, বাংলাদেশকে কেন পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ বলা হয়?

bangladesh-is-the-worlds-largest-delta

বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাসঃ

আজ থেকে প্রায় সাড়ে বারো কোটি বছর আগে ক্রিটেসিয়াস যুগের পূর্বে বাংলাদেশের অংশবিশেষ সহ (বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল) ভারতীয় প্লেট- অ্যান্টার্কটিকা, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার সঙ্গে যুক্ত থেকে গন্ডোয়ানাল্যান্ড নামে একটি বৃহৎ মহাদেশ গড়ে তুলেছিল। বাংলাদেশের অবশিষ্টাংশের তখন কোন অস্তিত্বই ছিল না। পরবর্তীতে গন্ডোয়ানাল্যান্ডে ফাটলের ফলে ভারতীয় প্লেটের উত্তরমুখী সঞ্চরণ হতে থাকে এবং সর্বশেষে এশীয় (ইউরেশীয়) প্লেটের সঙ্গে এর সংঘর্ষের ফলে হিমালয় পর্বতমালা ও বাংলাদেশের বদ্বীপীয় সমভূমির সৃষ্টি শুরু হয়।

সাধারণত ২টা প্লেটের সংঘর্ষে ৩ ধরনের ঘটনা ঘটে:
১. আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত
২. ভূমিকম্প
৩. অথবা, মুখোমুখি ২টা প্লেটের সংঘর্ষে একটার আরেকটার উপর চাপের ফলে মাঝের মাটি উপর দিকে উঠে পাহাড়-পর্বত সৃষ্টি হওয়া। তো, সেভাবেই ভারত ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষেই গড়ে ওঠেছিল হিমালয়, অন্নপূর্ণা সহ পৃথিবীর বিখ্যাত পর্বত সমূহ।

ভারতীয় প্লেট ও এশীয় (ইউরেশীয়) প্লেটের মধ্যে পর্যায়ক্রমিক সংঘর্ষ ইয়োসিন যুগে (৫ কোটি বছর আগে) অর্থাৎ হিমালয় পর্বত তৈরী শুরুর সময় প্রথম সংঘটিত হয়। নবীন ইয়োসিন যুগে (৪ কোটি বছর আগে) ভারতীয় প্লেট ও এশীয় প্লেটের মধ্যবর্তী টেথিস সাগরের সর্বশেষ চিহ্ন সম্ভবত বিলীন হয়ে গিয়েছিল। এই সময়েই ভারতীয় প্লেটের অভিসরণ দিক দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষসহ উত্তর থেকে উত্তর পূর্ব দিকে পরিবর্তিত হয়ে যেতে থাকে। ওলিগোসিন যুগ থেকেও (সাড়ে তিনকোটি বছর আগে) প্লেট সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে এবং বিশাল নদীমালার জলরাশিতে দক্ষিণে আদি বঙ্গীয় অববাহিকা ভরে উঠে।

এরপর এ অঞ্চলে উত্থিত হিমালয়ের বর্ষণ নেমে আসতে শুরু করে। মায়োসিন পরবর্তী সময় থেকে (আড়াই কোটি বছর আগে ও তার পরবর্তী) অববাহিকায় দ্রুত নিম্নচাপের সঙ্গে হিমালয় পবর্তমালার দ্রুত উত্থানের ফলে বিপুল বর্ষণের সুতপের পাশাপাশি বৃহদাকৃতির বদ্বীপ গড়ে উঠা শুরু করে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপ নামের এই সুবৃহৎ বদ্বীপের গঠন প্রক্রিয়া আজও অব্যাহত আছে। এবং এটিই এখন পর্যন্ত পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ হিসেবে স্বীকৃত। যেটাকে আমরা আমাদের নিজের দেশ, নিজের মাতৃভূমি বাংলাদেশ হিসেবে চিনি।

CBNA24 অনলাইন ডেস্ক (এফএইচ/বিডি)

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন