প্রবাসের সংবাদ

মৃত্যুহীন একটি দিবস আমেরিকা প্রবাসীদের

মৃত্যুহীন একটি দিবস আমেরিকা প্রবাসীদের
আব্দুল হাফিজ দুদু মিয়া ও নজরুল ইসলাম  ছবি- এনআরবি নিউজ।

মৃত্যুহীন একটি দিবস আমেরিকা প্রবাসীদের

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে: করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রে ৬ মে বুধবার কেউ মারা যাননি। টানা দেড় মাস পর এই একটি দিন প্রবাসীরা অতিবাহিত করলেন মৃত্যুর কোন সংবাদ ছাড়া। তবে এদিন নিউইয়র্কে প্রবীন দুই প্রবাসী মারা গেছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। এর একজন সৈয়দা জিন্নাতুল বাহার (৬৯), হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ব্রঙ্কসে মন্টিফিউর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অপরজন রমিজ মিয়া (৬৭) কুইন্স হাসপাতালে ছিলেন কিডনি রোগের চিকিৎসার জন্যে।

অপরদিকে, ৫ মে মঙ্গলবার নিউইয়র্কে আরো ৩ বাংলাদেশী মারা যাবার তথ্য এসেছে। এর আগে একজনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গিয়েছিল। এরফলে মঙ্গলবার ৪ জনের মৃত্যু হলো।

হাসপাতালের উদ্ধৃতি দিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের লিডার কাজী মুনির জানান, ইয়েলো ট্যাক্সি চালক নজরুল ইসলাম (৫৩) মঙ্গলবার ৫ মে এলমহার্স্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। একইদিন একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছেন বিয়ানিবাজার পৌরসভার আওয়ামী লীগ নেতা, দীর্ঘদিন যাবত নিউইয়র্কে বসবাসরত হাজী আব্দুল হাফিজ দুদু মিয়া (৭৫)। এ তথ্য জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রস্থ বিয়ানিবাজার সমিতির কর্মকর্তারা।

একইদিন ব্রঙ্কসে লেবানন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন সিলেটের সন্তান এবং ব্রঙ্কস মুসলিম সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য শুক্কুর আলীর মা জুলেখা বিবি (৭৮)। মুসলিম সেন্টারের সেক্রেটারি ও আওয়ামী লীগ নেতা সোলায়মান আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
নিউইয়র্ক স্টেটে ৫ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৩২ জন। এর আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ২৩০।

মঙ্গলবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০৭ জন। এসব তথ্য জানান স্টেট গভর্ণর এ্যান্ড্রু ক্যুমো। ক্যুমো উল্লেখ করেছেন যে, মৃত্যুর হার কমেছে অনেক আগের মাসের তুলনায়। একইভাবে হাসপাতালে ভর্তি এবং আইসিইউতে গমনের হারও কমেছে। এজন্যে নিউইয়র্ক স্টেটের লকআউট শিথিলের জন্যে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শোক প্রকাশ

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের নেতা মহিবুর রহমান খান শাহীনের পিতা নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা হাজী সওয়াবুর রহমান (৮২) ৪ মে স্থানীয় একটি সিনিয়র সেন্টারে ইন্তেকাল করেছেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মিজানুর রহমান মিল্টন ভ’ইয়া, স্টেট বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব মাহফুজুল মাওলা নান্নু, যুবদলের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক এম এ বাতিন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা মোশারফ হোসেন সবুজ, এম এ সবুর, নিউইয়র্ক মহানগর বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, যুক্তরাষ্ট্র জাসাসের সভাপতি আলহাজ্ব আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক কাওসার আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক দলের সেক্রেটারি মাকসুদ এইচ চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রদলের সেক্রেটারি মাজহারুল ইসলাম জনি, যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়েস আহমেদ প্রমুখ।

জরুরী এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের স্টোর আরএলবি সেইফটি এ্যান্ড হার্ডওয়্যার স্টোর। ছবি- এনআরবি নিউজ।

বিপদেই বন্ধুর পরিচয় : করোনা-ভীতির মধ্যেও
খোলা রাখায় এলাকাবাসীর প্রশংসায় ধন্য ‘আরএলবি সেইফটি’
করোনায় জবুথবু এবং প্রায় জনমানবশূন্য লং আইল্যান্ডের ওসেনসাইড এবং লিনব্রæকে সপ্তাহের ৭দিনই সকাল-সন্ধ্যা খোলা রেখে এলাকাবাসীর প্রশংসা কুড়াচ্ছে ‘আরএলবি সেইফটি এ্যান্ড হার্ডওয়্যার স্টোর’। বাংলাদেশী মালিকানাধীন এই স্টোর দুটিতে মাস্ক, সেনিটাইজার, গ্লোভস এবং চিকিৎসক-নার্স-পুলিশ-ফায়ার সার্ভিস-ইলেকট্রিসিয়ান-ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান ছাড়াও কন্সট্রাকশন কাজের সময়ে বিশেষভাবে জরুরী বুট, শার্ট, বেøজার, ক্যাপ ইতাদি হ্রাসকৃত মূল্যে বিক্রির মধ্যদিয়ে সর্বসাধারণকে করোনা-ভীতি থেকে সুরক্ষায় অপরিসীম ভূমিকা পালন করছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দুটি স্টোরেই ন্যাশনাল সেইফটি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী পণ্য আমদানি ও বিক্রি হচ্ছে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশী মানুষ আক্রান্ত এবং মারা গেছে নিউইয়র্ক স্টেটের নিউইয়র্ক সিটি এবং লং আইল্যান্ডে। এখনো অন্য সব এলাকার চেয়ে এ দুটি স্থানে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশী। এরফলে অনেক স্টোরই বন্ধ। ‘বিশেষ জরুরী সামগ্রি’র স্টোরেও ( ফার্ম্মেসী, রেস্টুরেন্ট, গ্রোসারি-সামগ্রির সুপারমার্কেট, সেইফটি এ্যান্ড হার্ডওয়্যার ইত্যাদি) তালা ঝুলছে। সে সবের মালিক/ম্যানেজার হয় হাসপাতালে, নয়তোবা মারা গেছেন। এমন সময়েও শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত ওসেনসাইড এবং লিনব্রæকে আকতার হোসেন বাদলের স্টোর দুটি সবসময় খোলা রাখা হচ্ছে।

এ সময়ে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজনীয় সামগ্রি এখানে বিক্রি হওয়ায় অনেকেই ছুটে আসছেন প্রতিনিয়ত এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তা ক্রয়ে সক্ষম হচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে কুমিল্লার চাঁদপুরের সন্তান আকতার হোসেন বাদল বলেন, গ্রাহকের অধিকাংশই উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় আসেন। অনেকের পকেটে অর্থ সংকট দেখলেই আমি ডিসকাউন্টে বিক্রি করি। আবার কাউকে কাউকে বিনামূল্যেও প্রদান করতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ, প্রায় সকলেই গৃহবন্দি এবং বেকার। অথচ মাস্ক, সেনিটাইজার লাগবেই। ব্যবসাতো সারাবছরই করেছি। এই সংকটে না হয় লাভের আশা ছেড়েই দিলাম। করোনার বিদায় ঘটলে এসব গ্রাহকেরাই ছুটে আসবেন বিপদের সময়ে তাদের সাথে সহযোগিতামূলক আচরণ করায়। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, করোনার তান্ডব রোধকল্পে অথবা সংক্রমণ ঠেকাতে ১৯ মার্চ থেকেই নিউইয়র্ক স্টেটে লকডাউন চলছে। কেবলমাত্র অত্যাবশ্যকীয় পণ্য-সামগ্রির স্টোর লকডাউনের আওতামুক্ত। সে আলোকেই বাদলের স্টোর দুটি খোলা রাখতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। স্টোরের কর্মচারিাও বাদলের মতোই সেবার মনোভাব নিয়ে প্রতিদিনই কাজ করছেন বিপদগ্রস্ত গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে। উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটি সংলগ্ন লং আইল্যান্ডে সাধারণত: অধিক আয়ের পেশাজীবী, ব্যবসায়ীরা বসবাস করেন। এতদসত্বেও লং আইল্যান্ডেও ব্যপকভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় সকলেই গৃহে অবস্থানকেই নিরাপদ ভেবেছেন। কিন্তু লাগাতার গৃহবন্দি থাকায় অনেক কিছুরই প্রয়োজন হচ্ছে। এজন্যে বাসার বাইরে গেলেই মাস্ক, সেনিটাইজার লাগবেই। এমন চাহিদা পূরণে নিজের জীবন বাজি রেখে ‘ আরএলবি সেইফটি এ্যান্ড হার্ডওয়্যার স্টোর’ (লংবীচ রোড ও সানরাইজ হাইওয়ে) নিয়মিতভাবে চালু রাখার মধ্যে ‘বিশেষ মানবিকতা’র ছোঁয়া রয়েছে বলে অনুসন্ধানী এক প্রতিবেদন ৪ মে প্রকাশ করেছে ‘লং আইল্যান্ড হেরাল্ড’ নামক জনপ্রিয় একটি পত্রিকা

(https://www.liherald.com/stories/prioritizing-safety-for-essential-workers-in-oceanside-lynbrook,124749)  সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের মাঝ দিয়ে ‘জিরো থেকে হিরো’ হওয়া আকতার হোসেন বাদল মূলধারার এই পত্রিকাকে বলেছেন, ‘চরম এই দু:সময়েও আমরা এলাকাবাসীর পাশে রয়েছি-এটি দৃশমান করতে প্রতিদিন স্টোর খোলা রাখছি। বাদল বলেছেন, ‘যাদের সাথে সারাবছর ব্যবসা করি, সেই কমিউনিটির এই দু:সময়ে পাশে থাকাকে আমি আমিার নৈতিক দায়িত্ব বিবেচনা করছি। সে তাগিদে সকলকে যথাসাধ্য হেল্্প করার চেষ্টা করছি।’

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, লং আইল্যান্ডের নাসাউ কাউন্টিতে এ যাবত করোনায় মারা গেছে ১৮১৮ জন। একই এলাকার সাফোক কাউন্টিতে ইন্তেকাল করেছেন ১২৯৬ জন। ধারণা করা হচ্ছে, অধিবাসীদের প্রায় সকলের গৃহকর্মীরা হচ্ছেন মেক্সিকান কিংবা এশিয়ান। এদের মাধ্যমেই করোনার বিস্তৃতি ঘটতে পারে।

 

সিবিএনএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

 

সংবাদটি শেয়ার করুন