প্রবাসের সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

পুলিশি হত্যা বললেন প্রবাসীরা, সবার মুখে জাস্টিস ফর ফয়সাল

‘হে ক্যামব্রিজ, আমরা বেঁচে থাকতে চাই’, ‘আমরা বাঁচতে চাই’, ‘স্পিক আপ-স্ট্যান্ড আপ’, ‘জাস্টিস ফর ফয়সাল’, ‘স্টপ পুলিশ ব্রুটালিটি’ ইত্যাদি স্লোগানে প্রকম্পিত হলো যুক্তরাষ্ট্রে অন্যতম একটি শান্তিপ্রিয় সিটি ‘বোস্টন’। ৪ জানুয়ারি বুধবার রাত সোয়া ১১টার দিকে প্রকাশ্যে রাস্তায় সংঘবদ্ধ পুলিশের একটি টিমের উপর্যুপরি গুলিতে নিহত হন ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটসের বোস্টন ক্যাম্পাসের নবীন ছাত্র সাঈদ ফয়সাল আরিফ (২০)। এ হত্যাকান্ডের বিচার দাবিতে ৫ জানুয়ারি দুপুরে ক্যামব্র্রিজ সিটি হল প্রাঙ্গণে তাৎক্ষণিক র‌্যালিতে সর্বস্তরের প্রবাসী ছাড়াও অংশ নেন আরিফের সহপাঠীরা।

মা-বাবার একমাত্র ছেলে সন্তান আরিফ সাত-আট বছর আগে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। বোস্টনের ক্যামব্রিজে ২০০২ সালের পর এটাই প্রথম পুলিশি বর্বরতা বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ৫ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে মিডলসেক্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ম্যারিয়েন রায়ান বলেন, ক্যামব্রিজপোর্টের এক বাসিন্দা ফোন করে পুলিশের জরুরি বিভাগকে জানান যে, গায়ে শার্ট নেই- এমন এক তরুণ ঘরের জানালা দিয়ে লাফিয়ে রাস্তায় নেমেছেন এবং হাতে বড় ধরনের একটি ছুরি রয়েছে। তরুণটি নিজেকে ছুরিকাঘাতে আহত করার চেষ্টা করছেন। এ তথ্য জেনেই ডজনখানেক পুলিশ অফিসার অকুস্থলে যায় এবং তাকে বিরত থাকার আহ্বান জানায়। কিন্তু সে পুলিশের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে চেস্টনাট স্ট্রিট দিয়ে দৌড়াতে থাকে। সে সময়ও তার হাতের ছুরিটি গলার দিকে তাক করা বলে তদন্তকারীদের বরাত দিয়ে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি উল্লেখ করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে ছুরিটি ফেলে দেওয়ার আহ্বানেও সাড়া না দিয়ে তরুণটি উল্টো ছুরি উঁচু করে পুলিশের দিকে আসছিলেন। এ অবস্থায় পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়েছে এবং গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে বোস্টনের জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ক্যামব্রিজ পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টিন ইলো এ সময় জানান, যে কোনো মৃত্যুই বেদনাদায়ক। আমরা আরিফের মৃত্যুকেও সহজভাবে নিচ্ছি না। সরেজমিন তদন্ত চলছে। যদি অন্যায়ভাবে গুলি চালানো হয়ে থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট অফিসারের বিরুদ্ধে অবশ্যই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট অফিসার (৮ বছরের পুরনো) বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর কথাও জানান পুলিশ কমিশনার। এদিকে, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর র‌্যালিতে কমিউনিটি লিডার ইকবাল ইউসুফ বলেন, বোস্টন হচ্ছে সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় মানুষের সিটি। আমরাও কখনো কোনো মারদাঙ্গা পরিস্থিতিতে জড়িত হইনি। তবুও কেন আমাদের টার্গেট করা হয়েছে? কেন আমাদের নিষ্পাপ আরিফের বুক বিদ্ধ হবে পুলিশের বুলেটে। ইকবাল ইউসুফ উল্লেখ করেন- প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে, পুলিশের বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির মধ্যে অন্তত পাঁচটি বিদ্ধ হয়েছে আরিফের বুকে। এ অবস্থায় নীরব থাকার অবকাশ নেই। আমাদের সংঘবদ্ধ আওয়াজ উঠাতে হবে এহেন বর্বরতার বিরুদ্ধে। র‌্যালিতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নিউ ইংল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট পারভিন চৌধুরী, সেক্রেটারি তানভির মুরাদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ চৌধুরী, সেলিম জাহাঙ্গীর, আশরাফউদ্দিন তালুকদার উপস্থিত ছিলেন। নিহত আরিফের বাবা মো. মুজিবউল্লাহ স্থানীয় গণমাধ্যমকে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেছেন, সে ছিল খুবই মেধাবী ছাত্র। আশা করেছিলাম আরিফ ইঞ্জিনিয়ার অথবা ডাক্তার হবে। কিন্তু এখন সব আশা শেষ হয়ে গেল। সবশেষ সংবাদে জানা গেছে, ক্যামব্রিজের মেয়র সম্বুল সিদ্দিকী সোমবার ফিরবেন বিদেশ থেকে। সেদিনই বিকাল সোয়া ৪টায় কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গে তিনি মিলিত হয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন। ইতোমধ্যেই পুলিশ এবং ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির পক্ষ থেকে সর্বসাধারণের সহায়তা চাওয়া হয়েছে পুলিশের গুলি বর্ষণের সময় আরিফের হাতে আদৌ কোনো ছুরি ছিল কি না। বোস্টন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ইকবাল ইউসুফ পুলিশের এহেন নির্দয় আচরণে হতবাক হয়ে এ সংবাদদাতাকে বলেন, বোস্টন হচ্ছে সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় মানুষের সিটি। এখানে যদি পুলিশের গুলিতে মানুষের প্রাণ ঝরে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে কেউই নিরাপদ নন ভাবতে হবে। তিনি সোমবার অপরাহ্নে মেয়র অফিসে সর্বস্তরের প্রবাসীর উপস্থিতি কামনা করেছেন। এদিকে, স্থানীয় একটি টিভিতে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে এলাকার এক নারী বলেছেন যে, আরিফের হাতে কোনো ছুরি দেখেননি তিনি।

 


সংবাদটি শেয়ার করুন