প্রবাসের সংবাদ

ফাহিমের চেতনা উজ্জীবিত রাখার সংকল্প


ফাহিমের চেতনা উজ্জীবিত রাখার সংকল্প

‘প্রায় দিনই সকালে লায়লাকে সাথে নিয়ে আসতেন। অর্ডারের মধ্যে থাকতো ‘ব্যাগেল টোস্ট উইথ লিটল বাটার এ্যান্ড এ রেগুলার কফি’। ক্যাশ কাউন্টার থেকে খাবারের প্যাকেট না নেয়া পর্যন্ত লায়লা দরজার সামনে অপেক্ষা করতো। এমন দৃশ্য এখন হৃদয় পটেই শুধু ভাসছে। বাস্তবে আর ঘটবে না। লায়লাকে সাথে নিয়ে আর আসবেন না ফাহিম’-অশ্রুসিক্ত কন্ঠে এমন স্মৃতিচারণ করলেন ম্যানহাটানের ইস্ট হিউস্টন স্ট্রিটের একটি কফি শপের কর্মী মারিয়ানা মেহনাজ।

এই নারী ২০ জুলাই সোমবার দুপুরে আরো ক’জনের সাথে ফাহিমের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি এবং ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছিলেন। এর আগে তারা ফাহিমের ছবিসহ কিছু পোস্টার-প্লেকার্ডের সামনে পুস্পাঞ্জলি অর্পণ করেন।

উল্লেখ্য, ইস্ট হিউস্টন স্ট্রিটের ওপর ২৬৫ নম্বর বহুতল ভবনের সপ্তম তলায় দুই বেডরুমের এপার্টমেন্টে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের শিকার হন বাংলাদেশি-আমেরিকান ফাহিম সালেহ (৩৩)। ১৪ জুলাই অপরাহ্নে পুলিশ এসে ঐ এপার্টমেন্ট থেকে ফাহিমের খণ্ড-বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করে। এর তিনদিন পর ১৭ জুলাই শুক্রবার ফাহিমের ঘাতক হিসেবে অভিযুক্ত ২১ বছর বয়েসী টাইরেস হ্যাসপিলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। হ্যাসপিল ছিল ফাহিমের ব্যক্তিগত সহকারি। হাই স্কুলে পড়াবস্থায়ই ফাহিমের উদ্ভাবনী-মেধায় অভিভূত মানুষেরা তার এই মৃত্যুকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না।

ফাহিম শুধু প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্যেই অহংকারের প্রতিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন পিছিয়ে থাকা বিশ্বের সামগ্রিক উন্নয়নের কান্ডারি, ফাহিমকে হত্যার মধ্য দিয়ে দিপ্ত প্রত্যয়ে এগিয়ে চলা একটি অভিযাত্রাকে থামিয়ে দেয়া হলো’-মন্তব্য মারিয়ানার।

তিনি বেশ কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানান ফাহিমের প্রতি। মারিয়ানার কফি শপ ফাহিমের এই ভবনে প্রবেশ পথ থেকে এক মিনিটের হাঁটা দূরত্বে। মারিয়ানা জানালেন যে, ফাহিমের পালিত কুকুরের নাম ছিল লায়লা। সেটি এখন ফাহিমের এক বন্ধুর কাছে রাখা হয়েছে।

এ সময় শ্রদ্ধা জানাতে আসা আরেক কর্মজীবী বাংলাদেশী দিপালী সরকার বললেন, আমার ছেলের বয়সও ৩৩ বছর। সে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় নিয়োজিত। ফাহিমের সমবয়সী। আমি ফাহিমের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সংবাদ মিডিয়ায় দেখে আৎকে উঠেছি। কারণ, এই ভবনের পাশের স্কুলেই আমি কাজ করি। ফাহিমকে চিনতাম না। তবে তার মৃত্যুর পর তথ্য-প্রযুক্তি জগতে ফাহিমের উদ্ভাবনী চিন্তা-ভাবনা এবং সেই ভাবনার সমন্বয় ঘটিয়ে বাংলাদেশ, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, কলম্বিয়া, নাইজেরিয়ার যুব সমাজকে কর্মসংস্থানের অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখছিলেন, তা জেনে সন্তানের বয়সী ফাহিমের প্রতি আমারও মাথানত নত হয়েছে পরম মমতায়। সেজন্যেই এখানে এসেছি ফাহিমের কথা স্মরণ করতে। আমি আশা করছি, গ্রেফতারকৃত ঘাতক এবং এহেন নির্মমতায় মদদদাতা কেউ যদি থেকে থাকে, তবে তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।

এই ভবনের প্রবেশ পথে কদিন থেকেই কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা বহাল রয়েছে। পুলিশ অবস্থান নিয়েছে ভেতরে এবং বাইরে। তারমধ্যেই শোকার্তরা আসছেন প্রতিদিনই এবং ফাহিমের স্মরণে নিজ নিজ মতামত লিখে কাঁচের দেয়ালে সেটে রাখছেন। ফুলে ফুলে সয়লাব হয় দিনভর। সন্ধ্যার পর তা নিরাপত্তা রক্ষীরা সরিয়ে ফেলেন। পরদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি একই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ অফিসারেরা।

সোমবার দুপুরে সেই ভবনের প্রবেশ পথের উভয়পাশের কাঁচের দেয়ালে সেঁটে রাখা বিভিন্ন শ্রদ্ধাঞ্জলি মন্তব্য/মতামতের মধ্যে দেখা যায়, ‘উই উইল কন্টিনিউ টু ড্রিম বিগ ফর ইউ’, ‘উই লাভ ইউ ফাহিম। ইউ উইল অ্যলওয়েজ বি ইন আওয়ার হার্টস’, ‘লিজেন্ডস উইল নেভার বী ফরগটেন’, ‘রিমেম্বারিং ফাহিম’, ‘এ্যান ইন্সপাইরেশনাল ফ্রেন্ড দ্যাট কেপ্ট অন গিভিং’, ‘ইউ উইল ফরেভার রিমেইন অ্যান ইনক্রেডিবল ইন্সপায়ার ফর আস’ এবং ‘উই ডিমান্ড ক্যাপিটেল পানিশমেন্ট অব এক্যুউজড’ ইত্যাদি।

সর্বশেষ ২০ জুলাই সোমবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলীনে বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টারের সামনে প্রবাসীরা এক মানববন্ধন থেকে ফাহিমের ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

 

সিএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

 

সংবাদটি শেয়ার করুন