সন্ধ্যায় ঝিরা নদীর ধারে হানিমুন
আমার আর শান্তার এ সময়টায় হানিমুনে থাকার কথা ছিল। অনেক দূরে, শহরের কোলাহলের বাইরে কোথাও।
আমার নতুন বউয়ের নাম শান্তা। নাহ, আমি আগে বিয়ে করিনি, তবে নতুন বউ বলার কারণ হলো, এই জানুয়ারিতে আমরা বিয়ে করেছি। দুজন মিলে সদ্য আমাদের নতুন বাসা মাত্র গুছিয়ে উঠলাম। শান্তা মাত্রই মুরগির মাংস রান্না করা শিখেছে। আমরা খেতে খেতে হানিমুনে কোথায় যাব সে প্ল্যান করি। শান্তা বলে, ইন্দোনেশিয়ার বালি যাব, আর আমি বলি সিলেট। আমাদের এই বিতর্ক থেমে যায় করোনায়, এখানে যাব ওখানে যাব প্ল্যানের আগে হুট করে মা-বাবার ডাকে কিশোরগঞ্জের ছোট গ্রামে যাওয়ার পরিকল্পনা করি।
অফিস থেকে শান্তাকে ফোন দিয়ে বললাম, তুমি কাপড় গুছিয়ে নাও। সে বলল, কত দিনের জন্য যাব আমরা? বললাম, ধরে নাও বাকি জীবন। বাকি জীবনের জন্য কাপড় গুছিয়ে নাও। শান্তা জানাল, ‘তাইলে শপিংয়ে চলো, বাকি জীবনের জন্য শপিং করি। যা জামা আছে, এক দুই মাস চলবে, বাকি জীবন না।’
অফিস থেকে সবাইকে এমনিতে নিয়মিত গুডবাই বলে বাসায় ফিরি। আর শেষ অফিসের দিন বলে আসি, ‘বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে।’
অফিসের গাড়ি যখন বসুন্ধরা গেটের কাছে, চালকের চোখে মুখে কেমন যেন একটা ভয় ভয় ভাব।
-কী হইছে তোমার?
-স্যার ডর লাগতেছে। মরণের ডর।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকার কারণে অনেক সময় বসুন্ধরার গেটের সামনে নেমে কিছু কেনাকাটা করি। বউয়ের জন্য ফুল কিনি, আমার জন্য চিকেন ফ্রাই কিনি।
কিন্তু সেদিন বউ বলল, ‘কিছু ইমারজেন্সি ওষুধ নিয়ে এসো।’ আমি ডানে তাকাই, বাঁয়ে তাকাই, কোথাও কেউ নেই। নেই সেই পেঁয়াজি বিক্রি করা লোকটি, যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে বের হওয়া উচ্ছল কোনো তরুণী। ওপরে তাকিয়ে দেখি আকাশটাও যেন কেমন ফিকে হয়ে আছে। আমি ফার্মেসিতে অনেক কষ্টে ঢুকে কিছু জরুরি ওষুধ নিলাম। ঠান্ডার, গলা ব্যথার, জ্বরের, শ্বাসকষ্টের ওষুধ নিলাম। আমি ওষুধ নিতে গেলাম বেশি বেশি, তখন আমাকে এক সেলসম্যান বললেন, ‘এখন কম নেন, সবারই তো লাগবে।’ আমি তখন আর বেশি নিইনি। তখন মনে মনে বললাম, বাহ আজ মানুষ মানুষের কথা ভাবছে।
সন্ধ্যা যখন নামছে, তখন আমরা দুজন ঢাকা থেকে বের হচ্ছি। ৩০০ ফিটে উঠতে উঠতে একবার পেছনে তাকালাম। একটু খারাপ লাগছে। আমি কখন আবার আসব আমার এই শহরটায়? আমার কেনা ওষুধ যদি শহরের সব জায়গায় ছিটিয়ে দিই, তবে কি শহরটা সুস্থ হবে? না কিচ্ছু হবে না। তবু জানি আমি ফিরব এ শহরে। কিন্তু কবে ফিরব, আমি জানি না।
আজ ১৬ (২৭ মার্চ গ্রামে যান, ১১ এপ্রিল লিখেছেন) দিন হতে চলল আমরা গ্রামে আছি। সারা দিন বাড়িতেই বসে থাকি আমরা। সন্ধ্যা যখন হয় তখন বাড়ির সঙ্গে লেগে থাকা নদীর ধারে যাই শান্তাকে নিয়ে। নদীর ধারে তালগাছটার নিচে বসলে অনেক জোনাকি খেলা করে। যদিও নদীটা মরে গেছে, তবু আমার চোখে তো নদীটা আছে। বউকে আমার চোখে লেগে থাকা নদীটা তার চোখে দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। এই নদীর নাম ঝিরা নদী। নদীটা মরে গেলেও মানুষের মতো তার নামটা রয়ে গেছে। নদীর ধারের ঝোপের জোনাকিরা আজও আছে। শান্তা জোনাকির সঙ্গে খেলতে খেলতে বলে, ‘চলো গ্রামেই থেকে যাই।’ আমি তাকে বোঝাই যে আমার পিজা-পাস্তা খাওয়া লাগবে। সে আবার বলে, ‘তোমাকে গ্রামেই বানিয়ে খাওয়াব।’
-আচ্ছা আমরা যদি গ্রামে থাকি, তবে হানিমুনে কোথায় যাব?
-প্রতি সন্ধ্যায় এই নদীর ধারে আসব। আমি জোনাকি নিয়ে খেলব, তুমি নদীর গল্প শোনাবে।
লেখক: একটি কোম্পানির মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান
-প্রথম আলো থেকে নেওয়া
সিবিএনএ/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন