দেশের সংবাদ

সব উদ্যোগেই চুরির চেষ্টা করোনায় দুস্থদের সহায়তা

সব উদ্যোগেই চুরির চেষ্টা
ওএমএসের চাল আত্মসাৎ, টিসিবির পণ্যসহ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ঈদ উপহার আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে!

গত বৃহস্পতিবার প্রতি জেলার পাঁচজন সুবিধাভোগীর মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। তার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানায় দেশের সকল শ্রেণিপেশার মানুষ। কিন্তু এমন মহতী উদ্যোগ দুর্নীতিবাজদের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশে কয়েকটি জেলায় সুবিধাভোগী কয়েকশ মানুষের নামের পাশে মাত্র একটি বা দুটি মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে। এতে সরকারের শীর্ষ পর্যায় বিব্রত।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে প্রথমবারের মতো দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার যে কার্যক্রম সরকার নিয়েছে তা ভেস্তে যাবে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, বিশ^ব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাসের মধ্যেও ত্রাণ চুরির খবর আসছে প্রতিদিন। জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে তারা দুস্থ অসহায়দের অধিকার হরণ করছে। এটি বন্ধ করতে হলে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। অভিযুক্তদের সাময়িক বরখাস্ত কি শেষ কথা? তাদের জেল-জরিমানা হয় না। তাদের এসব দুর্নীতির জন্য কঠোর শাস্তি হওয়া জরুরি।

রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে ছোটখাটো বিভিন্ন ব্যবসার মালিক-শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক, হকারসহ নিম্নআয়ের নানা মানুষকে নগদ

সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এমন উদ্যোগকে বিরোধী দলের রাজনীতিকরাও স্বাগত জানান। কিন্তু গরিব মানুষের তালিকা করতে গিয়ে নয়ছয় শুরু করেন অসৎ জনপ্রতিনিধিরা। হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মুড়িয়াউক ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রাথমিকভাবে তৈরি করা খসড়া তালিকা যাচাই-বাছাইকালে বেশ কিছু অসঙ্গতির দেখা মেলে। সেখানে ৩০০ নামের পাশে মাত্র ৪টি মোবাইল নম্বর ব্যবহারের ঘটনায় দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে ২০০ নামের পাশেই মাত্র একটি মোবাইল ফোন নম্বর।

লালমনিরহাটের আদিতমারীর কমলাবাড়ী ইউনিয়নে তালিকায় ৫৩ দুস্থের নামের পাশে ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র একটি মোবাইল ফোন নম্বর। তালিকায় মৃত ব্যক্তির নামও আছে। বাগেরহাটের কয়েকটি এলাকায়ও শতাধিক নামের পাশে এক ব্যক্তির মোবাইল নম্বর পাওয়া গেছে। দেশের আরও কয়েকটি জায়গায় অনিয়মের এমন অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তালিকায় ভুল থাকলেও একটি ফোন নম্বরে একবারের বেশি টাকা যাওয়ার সুযোগ নেই। তবু এ ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। বিতর্কিত তালিকা সংশোধন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে।

সংশোধিত তালিকা চেয়ে জেলা প্রশাসকদের যে চিঠি দেওয়া হয়েছে তাতে লেখা আছেÑ মুজিববর্ষে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান কর্মসূচি সংক্রান্ত নির্দেশিকায় ভাসমান মানুষ, নির্মাণ শ্রমিক, গণপরিবহন শ্রমিক, রেস্টুরেন্ট শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, রেলওয়ে কুলি মজুর, ঘাট শ্রমিক, নরসুন্দর, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানগাড়িচালক এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের লোকসহ মানবিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য পরিবারবর্গ এবং যারা দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে জীবিকা নির্বাহ করে এ রকম জনগোষ্ঠী অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এই পেশাভিত্তিক লোকজন যারা বাদ পড়েছেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করে তালিকা চূড়ান্ত করতে হবে।

সংশোধিত তালিকা রবিবার (গতকাল) পাঠানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (ত্রাণ-১) আবুল খায়ের মো. মারুফ হাসান বলেন, সংশোধিত তালিকা সরাসরি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে চলে যাবে। সেখানে তারা ঠিক করবে। জালিয়াতিতে জড়িতদের বিষয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান তিনি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, টাকা আত্মসাতের জন্য একাধিক নামের পাশে একটি নম্বর ব্যবহার করা হয়নি। কোনো কোনো তালিকায় একই মোবাইল নম্বর ২০০ বারও আছে। কারণ তালিকা করার সময় যাদের মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়নি তাদের নামের পাশে যারা তালিকা করেছেন তাদের মোবাইল নম্বর বারবার বসিয়েছেন। আইসিটি বিভাগ যাচাই করে দেখেছে তালিকার প্রায় ১৬ শতাংশ সুবিধাভোগীর নামের সঙ্গে একই মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু কোনো নম্বরেই একাধিকবার টাকা পাঠানো সম্ভব হবে না। সিস্টেমই বাধা দেবে। যাদের মোবাইল নম্বর নেই সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে তাদের জন্য টাকা পাঠানো হবে।

এদিকে দেশব্যাপী নগদ সহায়তার এ তালিকা প্রস্তুত করা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে বলে খবর মিলেছে। গণমাধ্যমের খবরে এ-ও বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও তাদের পছন্দের গরিবদের নগদ সহায়তার তালিকায় নাম দিতে পারছেন না। অনেক সুযোগসন্ধানী মেম্বার-চেয়ারম্যান একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন।

কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর নগদ সহায়তার তালিকা তৈরিতে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও সমাজকর্মী যুক্ত রয়েছেন। এর মধ্যে দুর্নীতির অসদুদ্দেশ্যে যেসব তালিকায় জালিয়াতি হয়েছে সেগুলো বাতিল করে নতুন করে তালিকা করা হচ্ছে। তা ছাড়া এক মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার টাকা যাবে না, সে সিস্টেম রাখা হয়েছে। সুতরাং জালিয়াতি করেও কেউ টাকা হাতিয়ে নিতে পারবে না।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আমাদের সময়কে বলেন, জনপ্রতিনিধিরা মোটা অঙ্ক খরচ করে নির্বাচন করে। দল থেকে মনোনয়ন কেনে। তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে না। ফলে নির্বাচনে জেতার পরই তার লক্ষ্য থাকে অর্থ কামানো। এ জন্য সরকারের কোনো ভালো পদক্ষেপেরই ফল সাধারণ মানুষ পায় না। জালিয়াতির সঙ্গে যুক্তদের চিহ্নিত করে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করার বিকল্প নেই বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, সারাদেশে ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি মেম্বার ও পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার। সেখানে মাত্র দু-চারজন অনিয়ম দুর্নীতিতে যুক্ত। ঢালাওভাবে সবাই অনিয়ম করেন না। ফলে সরকারের নগদ সহায়তা নিয়ে বেশি দুর্নীতির সুযোগ নেই। দু-একজনের জন্য পুরো প্রক্রিয়া যেন ভেস্তে না যায় সে জন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। সামান্যতম অভিযোগ উঠলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা। এর আগে ত্রাণ ও ১০ টাকার ওএমএসের চাল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে এখন পর্যন্ত ৫৫ জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আরও বেশ কয়েকজন বরখাস্ত হওয়ার পথে রয়েছেন। চূড়ান্ত অনুসন্ধান শেষে দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধিদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (ইউনিয়ন পরিষদ-১) মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, অনিয়মের অভিযোগে এখন পর্যন্ত ৫৫ জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আরও বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে কেউই রেহাই পাবে না। মন্ত্রণালয় যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে নেবে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, চাল আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্তদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নগদ সহায়তা নিয়েও নয়ছয় সহ্য করা হবে না। দরিদ্র মানুষ খুব বিপদে আছে। তারা যেন নগদ অর্থ পায় সে জন্য যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে সরকার।

-আমাদের সময় থেকে ( সব উদ্যোগেই চুরির চেষ্টা করোনায় দুস্থদের সহায়তা )

 

সিবিএনএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

 

সংবাদটি শেয়ার করুন