দেশের সংবাদ ফিচার্ড

হায় মুরাদ হাসান! এরপর কি?

হায় মুরাদ হাসান! এরপর কি?

গত বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা। প্রায় ৬৪ ঘণ্টা ছিলেন ফ্লাইং ম্যান। দুইদিন আগে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। দু’দিন তাকে বিদেশের মাটিতে এই সময়টা ঘুরতে হয়েছে আশ্রয়ের আশায়। কানাডার পর সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফল হননি। গতকাল সন্ধ্যায় ডা. মুরাদ হাসান আবার ফিরে আসেন ঢাকায়। মুখে মাস্ক, মাথায় ক্যাপ, তার ওপর শীতের পোশাক হুডি।

পুরো মুখ ঢাকা। দেখে চেনার উপায় নেই। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শত চোখ তার অপেক্ষায়। তাই মুখ ঢাকার চেষ্টা করেও নিজেকে আড়াল করতে পারেননি মুরাদ। বিমানবন্দরে নামার পরই তার ছবি তোলে নানা জন। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। বিমাবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন এক দল সাংবাদিক। উদ্দেশ্য ডা. মুরাদের ছবি সংগ্রহ ও তার প্রতিক্রিয়া জানার। সতর্ক মুরাদ চুপিসারে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। দেশে ফেরার পর মুরাদ এখন কী করবেন, তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দায়ের হয়েছে তা আমলে নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে কিনা এটিই এখন বড় প্রশ্ন।
দুবাই বিমানবন্দর থেকে রোববার সকাল ১০টা ৪৬ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে-৫৮৬ ফ্লাইটটি ঢাকার উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে। দুবাই থেকে ৪ ঘণ্টা ২১ মিনিটের যাত্রা শেষে এটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। অবতরণের নির্ধারিত সময় ছিল বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিট। কানাডায় প্রবেশের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে দুবাইয়ে ফিরে আসেন ডা. মুরাদ। সেখানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা সংগ্রহের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। গুঞ্জন ওঠে তিনি দেশে ফিরছেন। আমিরাত এয়ালাইন্সের একটি ফ্লাইটে সকালে তিনি ঢাকা ফিরছেন এমন খবরে সকালে বিমানবন্দরে ভিড় করেন সাংবাদিকরা। বিমানবন্দর এলাকায় জড়ো হয়ে একদল মানুষ মুরাদের দেশে ফেরার প্রতিবাদে মানববন্ধন করতে থাকেন। তারা মুরাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তবে সকালের ফ্লাইটে মুরাদ দেশে না আসায় মানববন্ধনকারীরা সেখান থেকে চলে যান। বিকালের ফ্লাইটে আসার খবরে বিকাল থেকেই বিমানবন্দর এলাকায় ভিড় করেন সাংবাদিকরা।
প্রতিমন্ত্রীর পদ ও দলীয় পদ হারানোর পর গত বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে কূটনৈতিক পাসপোর্ট নিয়ে কানাডার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন মুরাদ হাসান। স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর একটা ৪১ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি টরেনটোর পিয়ারসন এয়ারপোর্টে অবতরণ করে। এরপরই ডা. মুরাদ হাসানকে কানাডা ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান। দীর্ঘ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপরই তাকে তুলে দেয়া হয় দুবাইগামী ফিরতি ফ্লাইটে। দুবাই ফিরে তিনি বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখানে ভিসা সংগ্রহের চেষ্টা চালান। গত শনিবার ছুটির দিন থাকায় রোববার পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন মুরাদ। ভিসা না পেয়ে দেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
বিমানবন্দরে ফিরে মুরাদ কিছু সময় সেখানে অবস্থান করেন। নীল জিন্স প্যান্ট, মাথায় ক্যাপ, চোখে চশমা আর শীতের পোশাক হুডি থাকায় তার চেহারা দেখা যাচ্ছিল না। একটি সাইড ব্যাগ ও লাল রঙের ট্রলি নিয়ে তাকে ভিআইপি কনসোর্সে হাঁটতে দেখা যায়। একপর্যায়ে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার কক্ষে তিনি কিছু সময় অপেক্ষা করেন। এ সময় ভিআইপি লাউঞ্জের বাইরে সাংবাদিকরা অপেক্ষমাণ ছিলেন। বাইরে ভিড় দেখে মুরাদ অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে তিনি ওই টার্মিনাল দিয়ে বের হয়ে উত্তরার দিকে চলে যান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানিয়েছে গতকাল মুরাদ নিজের ধানমণ্ডির বাসায় আসেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা জানান, তাকে এ সময় চিন্তিত মনে হয়েছে। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তিনি খুব বেশি কথা বলেননি। এরপর ভিআইপি লাউঞ্জে আসেন তিনি। সেখানে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর ওই লাউঞ্জ দিয়ে বের না হয়ে তিনি অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল হয়ে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সূত্র জানায়, করোনার ডাবল ডোজ টিকার সনদ না থাকায় ডা. মুরাদ হাসান কানাডা ঢুকতে পারেননি বলে জানা গেছে। প্রশ্ন উঠেছে, ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট ও কোভিড প্রোটোকল না মেনে মুরাদ কীভাবে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কানাডায় গেলেন? এ বিষয়ে বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসা বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম তৌহিদ-উল আহসানকে প্রশ্ন করেন সেখানে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকরা।
তৌহিদ-উল আহসান জানান, বিমানবন্দর দিয়ে যে যাত্রীই বাইরের দেশে যান, সেসব বহির্গমন যাত্রীদের স্বাস্থ্য সনদ চেক করা, ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট চেক করার দায়িত্ব সিভিল এভিয়েশনের। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নয়। আমরা ইমিগ্রেশন করি, যাত্রীদের সেবা দিই। ইমিগ্রেশন শাখা ইমিগ্রেশন করবে, স্বাস্থ্যের কাজ স্বাস্থ্য করবে। মুরাদ সংক্রান্ত তথ্য জানতে হলে আপনাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করলে তারা ভালো উত্তর দিতে পারবেন। ভ্যাকসিনেশন সনদ ছাড়াই দেশের বাইরে যাওয়ার বিষয়টি আপনাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে কিনা? এমন প্রশ্নর জবাবে তিনি জানান, আমি এই বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমেই জানতে পারলাম।
এ সময় বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী জানান, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অনেকগুলো ডিপার্টমেন্ট কাজ করে। ইমিগ্রেশনের কাজ করে পুলিশ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যের ব্যাপারটি দেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কোভিড আসার আগেও কিন্তু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটি ফরম পূরণ করতে হতো। এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এনবিআর কাজ করে কাস্টমসের। তিনি আরও জানান, এ বিষয়টা যদি আমরা ক্যাব-এর পক্ষ থেকে করতে চাই তাহলে তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না। সদ্য অব্যাহতি নেয়া সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদের বিষয়ে আপনাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যারা আছেন তারা দিতে পারবেন।
এ বিষয়ে বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. জিয়াউল হক জানান, তিনি যেহেতু কোনো দেশে ঢুকতে পারেননি তাই তার কোয়ারেন্টিন প্রয়োজন নেই।
ফেসবুক লাইভ টকশোতে নারীবিদ্বেষী বক্তব্য প্রদান এবং চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় ধর্ষণের হুমকি প্রদানের অডিও ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত সপ্তাহে (৭ই ডিসেম্বর) মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ডা. মুরাদ হাসান। এরপর গত বৃহস্পতিবার দেশ ছেড়ে কানাডার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মুরাদের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী শাহবাগ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। সর্বশেষ দেশের চারটি জেলায় তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এসব মামলা গ্রহণ করা হলে দেশে মুরাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উঠেছে।

-সূত্রঃ মানবজমিন

 




সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন