ফিচার্ড ভ্রমণ

শ্রদ্ধেয় স্যারদের সঙ্গে কিছুটা সময় এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ

শ্রদ্ধেয় স্যারদের সঙ্গে কিছুটা সময় এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ | সদেরা সুজন

প্রথম পর্ব

২০১৯ এর জানুয়ারিতে প্রায় দেড় মাসের জন্য ভারত বেড়াতে গিয়েছিলাম আমরা দুজন, মানে রুবী আর আমি। বলতে গেলে ছেলে-মেয়ের অনুরোধে, তাদের খরচে এবং প্রেসারেই যেতে হয়েছিলো ভারত ঘুরতে। পুরো দেড়মাস কাজকর্মহীন অবকাশ যাপন! সেকি কম কথা! সত্যিকার অর্থে বলতে কি বিদেশ আসার পর কয়েকবার হয়তো দেশে গিয়েছি প্রিয় দেশ প্রিয় মাটি আর প্রিয় স্বজনের টানে।  কিন্তু ২০১৯ এর যাওয়াটা ছিলো সম্পূন্ন ভিন্ন। বেড়াতে যাওয়ার পাশাপাশি রুবীর ডাক্তার দেখানো, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ এবং শহর ঘুরে দেখা এবং কিছুটা হলেও দু’জন একান্তে কয়েকটা দিন, কিছুটা সময় যাপন করা।

পুরো মাস ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের নানা জায়গায় ঘুরতে  এবং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে প্লেন আর ট্রেন ধরতে গিয়ে প্রায় প্রাণান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। খুব ভোরে উঠে দর্শনীয় স্থান দেখতে গিয়ে হোটেলে ফিরতে ফিরতে মধ্যরাত আবার রাতে ঠিক মত ঘুম আসার পূর্বেই এ্যালার্ম ভেজে উঠে অন্য জায়গায় যাবার জন্য। ফলে অবকাশের বদলে অবসাদ হতে শুরু করলো।

প্রায় পুরো মাস ভারতে কাটিয়ে এক সপ্তাহের জন্য দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে শিলচর তারপরে ত্রিপুরার কৈলাসহর থেকে চাতলাপুর বোর্ডার হয়ে নিজ বাড়িতে যাই। লেখতে যতটা সহজ যাওয়াটা ততো সহজ ছিলোনা। কানাডা থেকে কলকাতা গিয়েছি আর দেশের বাড়িতে যাবোনা তা কি করে হয়। যদিও একবছর পূর্বে দেশে গিয়ে একমাস থেকে এসেছিলাম।

এবার একসপ্তাহের জন্য দেশে গিয়ে আসার আগের দিন যে কাজটি করেছি তা বিগত কয়েকবার দেশে গিয়ে দীর্ঘদিন থেকেও তা করা সম্ভব হয়নি। আমার স্কুল এবং কলেজ জীবনের স্মৃতিঘেরা বিদ্যাপীঠ আর পূজনীয় কয়েকজন শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করে আসলাম। কিন্তু সেদিনের সেই ছবিগুলো কিভাবে যেনো হারিয়ে গিয়েছিলো। মাঝে কয়েকদিন অসুস্থতার কারনে কাজকর্মহীন ঘরে বসে থাকায়  পুরোনো ফাইলগুলো খুঁজতে গিয়ে পেয়ে গেলাম। সেখানে স্যারদের বাড়ির পাশাপাশি বোন আর ভাগনির বাসারও কয়েকটা ছবি পেলাম যা শেয়ার করা হয়নি।

শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যক্ষ খোরেশ খাঁন, স্মৃতিঘেরা বিদ্যাপীঠ কমলগঞ্জ গণ মহাবিদ্যালয় এবং লেখক ও গবেষক আহমেদ সিরাজ ভাই’র সঙ্গে

সকালে ছোট ভাই সঞ্জয় ও ভাতিজা সজীবকে নিয়ে বের হয়ে প্রথমেই যাই বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, গবেষক, সংবাদিক আমাদের প্রিয় মানুষ, প্রিয় স্বজন- আহমেদ সিরাজ ভাই’র বাড়িতে। বাড়ি নয় যেনো একটি বিশাল লাইব্রেরী। হাজার হাজার বই, বই, আর বই। ছোটখাটো মানুষ হলেও ব্যাপ্তিটা সীমাহীন, বিশাল। দেশ ছেড়েছি ত্রিশ বছরের উপরে। সিরাজ ভাইকে নিয়ে কত স্মৃতি কত কথা! আশির দশকে বিভিন্ন আন্দোলনে তাঁর সহযোদ্ধা হয়ে অনেকটা সময় কাটিয়েছি। রাজনৈতকভাবে আমরা আদর্শগত কিছুটা ভিন্ন হলেও পথচলা ছিলো প্রায় একইভাবে। তিনি কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষেত মজুর করতেন আর আমি ছাত্রলীগের উপবাসী কর্মী, সেদিনে আমরা যারা ছাত্ররাজনীতি করেছি তারা নিজেরে পকেটের পয়সা খরচ করে রাজনীতি করতে হতো ।যাক্ স্বৈরাচার বিরোধি আন্দোলন শেষে কতবার সিরাজভাই’র বাড়িতে গিয়ে ক্ষুধার্ত সংগ্রামীরা পেটভরে খেয়েছে। ভাবীর হাতের বানানো জাম্বুরা ভর্তার কথা মনে পড়লে এখনো জিহ্বায় জল আসে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো লেখালেখি কিংবা কোন তথ্য খুঁজে  সংগ্রহ করতে না পারলেই সিরাজ ভাইর বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হতাম কারন সেখানেই সব সমস্যার সমাধান পাওয়া যেতো। সেদিন আজকের মতো সেল ফোন কিংবা কম্পিউটার-ইন্টারনেট ছিলোনা, ছিলোনা গুগল সার্চ। সেসময়ের মানব গুগল ছিলেন আমাদের সিরাজ ভাই। তার বাড়িতে যাবার জন্য তৎসময়ে রাস্তাঘাটও ভালো ছিলোনা ফলে হেঁটেই যেতে হতো। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি দেলওয়ার ভাই প্রায়ই সেখানে আসতেন ফলে জমজামট সাহিত্যের আড্ডা হতো সেখানে।

সিরাজ ভাইকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ী ছুটছে। প্রথমেই কলেজ জীবনের ইংলীশের শিক্ষক শ্রদ্ধেয় খোরেশ খাঁন স্যারের বাসায় যাই। কলেজের সামনেই বাসা করেছেন যদিও এর পূর্বে কিছুটা দূরে বসবাস করতেন। এখনো চোখের সামনে স্যার কিভাবে হেঁটে হেঁটে কলেজে আসতেন তা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। স্যারকে দেখলে মনে হতো কোন  বিদেশী, এখনো তাই মনে হয়।

সকালের সোনালী রোদে ঝলমল করছিলো বাসার আঙ্গিনা। স্যার বারিন্দায় চেয়ারে বসে আছেন রোদের মাঝে। একসাথে এত লোক বাসার ভিতরে প্রবেশ করাতে প্রথমে একটু বিচলিত হয়ে গিয়েছিলেন পরে আহমেদ সিরাজ ভাই ও আমার ছোট ভাইকে দেখে বুঝতে পারলেন এবং আমার আগমন সব কিছু বলা হলো। তখনো জানতামনা স্যার আর আগের মতো হাঁটতে পারেন না। স্যার পক্ষাঘাতে অচল হওয়াতে অন্যদের সাহায্যে চলতে হয়। কমলগঞ্জ কলেজ থাকাবস্থায়ই বেশ কয়েক বছর ইংল্যান্ডে থেকে ফের বাংলাদেশে ফিরে একটি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রায় ৩৭ বছর পর স্যারের সঙ্গে দেখা। সালাম করতেই চিনতে অসুবিধে হলোনা, খুব নিচু গলায় বসতে বললেন। এরপর বেশ কিছুক্ষন স্যারের সঙ্গে কাটাই।  চলবে…

# সদেরা সুজন, প্রধান নির্বাহী- সিবিএনএ


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন