মত-মতান্তর

১৭ এপ্রিল হল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

বৈশ্বিক মহামারী ১৭ এপ্রিল হল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস, আজ কানাডায় ভিক্টোরিয়া ডে ছুটির দিন !

 

১৭ এপ্রিল হল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশ ও বাঙালীর স্বাধীনতাসহ মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাসে এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম । ১৯৭১ সালের ১৭  এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার  আম্রকাননে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল এবং পঠিত হয়েছিল বাংলদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার শপথ গ্রহণের পর স্থানটির নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। সেই থেকে ১৭ এপ্রিল দিনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পরিচিতি লাভ করে ‘ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস’ হিসেবে। আর স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হলো ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে অর্থাৎ বাংলার গণমানুষের সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে । নিজস্ব রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তথা চূড়ান্ত লড়াই ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ থেকেই শুরু হয় । ২৬ মার্চ হল বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ।

১৭ এপ্রিল হল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতার হওয়ার আগেই মহান স্বাধীনতার মহান স্হপতি  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তৎকালীন ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন  । জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবে রূপ দিতে বীরত্ব ও সাহসিকতার সহিত বঙ্গবন্ধুর  অবর্তমানে তৎকালীন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ মুজিবনগরে একত্রিত হয়ে সরকার গঠন করেন । বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকায় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তাজউদ্দীন আহমদ । এছাড়া এম মনসুর আলী, এএইচএম কামরুজ্জামান প্রমুখ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন । এরা সকলেই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সাথী ও ঘনিষ্ঠ সহচর । ১৯৭১ সালের  ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলার  আম্রকাননে মুজিবনগরে শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছিল। এদিন নবগঠিত বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন দেশ-বিদেশের বহু বিখ্যাত সাংবাদিক ।  এ সরকারই প্রথম ভারতসহ বিভিন্ন রায্ট্রের কাছে অবৈধ ও স্বৈরাচারী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বৈধ সরকারকে স্বীকৃতি ও সহযোগীতার আকুল আবেদন জানান । ঐতিহাসিক মুজিবনগরেই রচিত হয়েছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ভিত্তি । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে প্রবাসী ‘মুজিবনগর সরকার’ বহু প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছিল । ভারতের সাহায্য ও সহযোগীতায় দীর্ঘ নয় মাসের নিরন্তর মুক্তির লড়াইয়ের পর বিজয়ী হয় বাঙালী জাতি।  এই মুজিবনগরে সরকারই ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয় এবং বাঙালী জাতি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিল। অবশেষে ত্রিশ লাখ মানুষের জীবন ও দুলক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা চূড়ান্ত বিজয় সূচিত হলো একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর । বিশ্বের বুকে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ । বাংলাদেশে সহ বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে এবার দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা সম্ভব হবে না বাংলাদেশে । তবু বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির জীবনে মুজিবনগর দিবসের তাৎপর্য ও গভীরতা অপরিসীম । জাতি ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসকে গর্বভরে স্মরণ করবে চিরদিন ।

বিদ্যুৎ ভৌমিক।। সাবেক অধ্যাপক লেখক ও সিবিএনএ’এর উপদেষ্টা

মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা ১৭ এপ্রিল, ২০২০

 

 

সিবিএনএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 + 7 =