দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৪ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এই সময়ে মারা গেছেন আরও তিন জন। এ নিয়ে দেশে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যাক্তি দাঁড়াল ২১৮। আর মারা গেলেন ২০ জন।
আজ বুধবার দুপুরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান।
মীরজাদী সেব্রিনা আজ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৯৮১টি পরীক্ষা করা হয়। শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৯ জনই ঢাকা শহরের। একজন ঢাকার একটি উপজেলার। বাকিগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানের। ৫৪ জনের মধ্যে পুরুষ ৩৩, নারী ২১।
আজ এই ব্রিফিংয়ে ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সানিয়া তাহমিনা। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৯৮৮টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা হয় ৯৮১টির। সাতটি কেন পরীক্ষা হয়নি সাতজনের। এর কারণ পরে জানানো হবে।
সানিয়া তাহমিনা বলেন, নমুনাগুলোর মধ্যে ঢাকা থেকে সংগ্রহ করা হয় ঢাকায় ৫৬৩টি। বাকিগুলো ঢাকার বাইরে থেকে এসেছে।
দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত (কোভিড-১৯) প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। গত ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। এক মাসের মধ্যে রোগীর সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে।
সংক্রমণের চতুর্থ স্তরে বাংলাদেশ
দেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৮ মার্চ। এই এক মাসে রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২১৮ জন। মারা গেছেন ২০ জন। ইতিমধ্যে ১৭টি জেলায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকার ৫২টি এলাকা লকডাউন করেছে কর্তৃপক্ষ। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সামাজিক দূরত্ব কার্যকর করতে চলছে সাধারণ ছুটি।
চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের সংক্রমণের ধারা পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পরবর্তী এক মাসের কিছু আগে-পরে সংক্রমণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ এখন সেই সময়ের মুখোমুখি।
পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হয়েছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বক্তব্য আসার পর। বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী প্রলয় সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বে যেভাবে করোনা রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে, বৃদ্ধি পাওয়ার একটা ট্রেন্ড (প্রবণতা) আছে। তাতে আমাদের সময়টা এসে গেছে, এপ্রিল মাসটা। এই সময়টা আমাদের খুব সাবধানে থাকতে হবে।’
দেশবাসী করোনা পরিস্থিতি জানতে পারছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) কাছ থেকে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, এখন সংক্রমণ পরিস্থিতির ক্রান্তিকাল। দেশ সংক্রমণের তৃতীয় স্তর থেকে চতুর্থ স্তরের দিকে যাচ্ছে, এটা বলা যায়।
রোগ সংক্রমণের চতুর্থ স্তরে পৌঁছানোর অর্থ, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবে বহু মানুষ, বহু মানুষকে হাসপাতালে যেতে হবে, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ক্রান্তিকালে করোনা মোকাবিলায় দেশের প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে। সংক্রমণের হার কি প্রস্তুতির তুলনায় বেশি? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, সব দেশের মতো বাংলাদেশও এই ভাইরাসের পেছনে আছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও এর ব্যাপকতার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের দেশগুলোকে চারটি স্তরে ভাগ করেছে। একজনেরও সংক্রমণ শনাক্ত না হওয়া দেশ স্তর-১-এ। বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তি শনাক্ত হওয়া ও তাঁদের মাধ্যমে দু-একজনের সংক্রমণ, স্তর-২। নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সংক্রমণ সীমিত থাকলে তা স্তর-৩। আর স্তর-৪ হলো সংক্রমণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া।
৮ মার্চ বাংলাদেশ প্রথম ঘোষণা করে, দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি আছে। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সংক্রমণ পরিস্থিতির দ্বিতীয় স্তরে পৌঁছায়। সংক্রমিত ব্যক্তিরা ছিলেন বিদেশফেরত। এটাকে স্থানীয় সংক্রমণ বলা হয়।
এই বিদেশফেরত ব্যক্তিদের মাধ্যমে বেশ কিছু মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে এমন বলতে থাকে আইইডিসিআর। কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে রাজধানীর টোলারবাগ এলাকায় একটি সংক্রমণের ইতিহাসে দেখা যায়, সংক্রমিত ব্যক্তির বিদেশ ভ্রমণ বা বিদেশফেরত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার ইতিহাস নেই। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, সংক্রমণ কি তাহলে সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে?
এরই মধ্যে ৫ এপ্রিল সংক্রমণের তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ এমন বক্তব্য দেন আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা। তিনি বলেন, রাজধানীর টোলারবাগ ও বাসাবো, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর (শিবচর) ও গাইবান্ধা (সাদুল্লাপুর)—এই পাঁচটি এলাকায় গুচ্ছ আকারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া জামালপুর, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা, কুমিল্লা, কক্সবাজার, গাজীপুর, মৌলভীবাজার, নরসিংদী, রংপুর, শরীয়তপুর ও সিলেটে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে। এ থেকে অনেকেই মনে করেন, সংক্রমণ এখন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। কত মানুষ আক্রান্ত, তার সঠিক হিসাব এখনো জানা যায়নি। কারণ, নমুনা পরীক্ষার পরিধি ও সংখ্যা এখনো খুবই কম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম বলেন, সংক্রমণের যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে একে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (ব্যাপক জনগোষ্ঠীতে সংক্রমণ) বলতে বাধা নেই। তবে মীরজাদী সেব্রিনা বলেছেন, সংক্রমণ পরিস্থিতি চতুর্থ স্তরে কি না, তা কোভিড-১৯ বিষয়ক কারিগরি কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।
করোনায় চড়া ডালের দাম
ঢাকার দক্ষিণ মণিপুরের একটি ভবনের নিরাপত্তাকর্মী আহমদ আলীকে বাসার পাশের মুদিদোকান থেকে আড়াই শ গ্রাম মোটা দানার মসুর ডাল কিনতে হয় ২০ টাকা দিয়ে, যা গত ডিসেম্বরে ছিল ১৫ টাকা। তাতে খরচ বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ।
আহমদ আলী তাঁর আট হাজার টাকা বেতনের বড় অংশই বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। নিজে দুই হাজার টাকায় সব খরচ চালান। তাঁর দৈনন্দিন কেনাকাটার বড় অংশ জুড়ে থাকে চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ ও সবজি। ডাল থাকেই।
দেশে গত কয়েক মাসে সবচেয়ে বেশি যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে, তার মধ্যে রয়েছে মসুর ডাল। তাই মসুর ডালের উৎপাদন, সরবরাহ ও দাম নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে গত এক বছরে মসুর ডালের দাম বেড়েছে ১৪ শতাংশ। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বরাত দিয়ে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে দাম বেড়েছে ১৭ থেকে ১৯ শতাংশ। অবশ্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের গত ২৫ মার্চের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এক বছরে মোটা দানার মসুর ডালের দাম ২৬ শতাংশ ও সরু দানার ডালের দাম ৩৬ শতাংশ বেড়েছে।
নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি কেনে মোটা দানার ডাল। ডিসেম্বর মাসেও ঢাকার বড় বড় খুচরা বাজারে মোটা দানার মসুর ডাল ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো। আর পাড়া-মহল্লার ছোট দোকানে পাওয়া যেত ৬০ টাকা দরে। এখন বড় বাজারেই মোটা দানার ডাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি দানার ডাল ডিসেম্বরে ছিল কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। এখন তা ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। আর ছোট দানার ডাল ডিসেম্বরে ১০০ টাকার আশপাশে ছিল। এখন তা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
বাংলাদেশে ডাল আমদানি হয় মূলত অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিসেম্বরের শেষ দিকে দেশে দাম বাড়তে থাকে।
সূত্রঃ প্রথম আলো
বাঅ/এমএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন