ফিচার্ড মত-মতান্তর

সাউথ ক্যারোলিনা ডেমোক্রেট প্রাইমারিতে বাইডেন বিপুলভাবে জয়ী

Former President Donald Trump (AP Photo/Andrew Harnik, File)

সাউথ ক্যারোলিনা ডেমোক্রেট প্রাইমারিতে বাইডেন বিপুলভাবে জয়ী

শিতাংশু গুহ।। সাউথ ক্যারোলিনা ডেমোক্রেট প্রাইমারী অনুষ্ঠিত হয় ৩রা ফেব্রুয়ারী ২০২৪। যদিও ডেমোক্রেট প্রাইমারি উত্তেজনাহীন, তবু বাইডেনকে নিয়ম রক্ষার খাতিরে প্রাইমারি জিততে হবে, এবং ১৯৬৯ ডেলিগেট জয়ী হয়ে দলীয় মনোনয়ন পেতে হবে। প্রাইমারিতে মোট ডেমোক্রেট ডেলিগেট ৩৯০০। সাউথ ক্যারোলিনায় ডেমক্রেট ডেলিগেশন ৫৫টি, বাইডেন সবগুলো পেয়েছেন। বাইডেন ভোট পেয়েছেন ৯৬.২%, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন মারিয়ান উইলিয়ামসন (২.১%), তৃতীয় ডিন ফিলিপস (১.৭%)।

প্রাইমারি নিয়ে রিপাবলিকানদের মধ্যে এখনো উত্তেজনা রয়েছে, ট্রামকে ১২১৫টি ডেলিগেট জিততে হবে, এদের মোট ডেলিগেট ২৪২৯। শনিবার ২৪শে ফেব্রুয়ারি সাউথ ক্যারোলিনা প্রাইমারি। সাউথ ক্যারোলিনায় ট্রাম্প ৫৮-৩২% এগিয়ে। ট্রাম্প জিতলে তিনি পরপর ৪টি টেস্টে জয়ী হবেন, নিকি হেলি যদি ৫%-র ভোটে সাউথ ক্যারোলিনায় পরাজিত হন, তবু রেসে টিকে থাকবেন। সুপার টুইসডে ৫ই মার্চ, ১৬টি ষ্টেটে একযোগে প্রাইমারি। ডেলিগেট প্রায় ৯০০।

ট্রাম্প সুপার টুইসডে-তে ১২১৫ ডেলিগেট জিতে গেলে নিকি হেলি’র ক্যাম্পেইন শেষ হবে। একজন রিপাবলিকান নির্বাচন বিশেষজ্ঞের মতে তাই ঘটতে যাচ্ছে। মার্চের শেষদিকে হয়তো ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিউইয়র্কে প্রথম ফৌজদারি মামলা শুরু হবে? মামলাটি ২০১৬-তে নির্বাচনের আগে তিনি স্টরমি ড্যানিয়েলকে যে প্রক্রিয়ায় টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করেছিলেন, সেটি আইনানুগ ছিলোনা। এটি ফৌজদারি মামলা, তবে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়?

বাংলাদেশের-ভবিষ্যৎ-কি

নিউইয়র্কের একজন ফৌজদারি আইনজ্ঞ রোনাল্ড কুবি ওয়াশিংটন পোষ্টকে বলেছেন, ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন। সেক্ষেত্রে বাইডেনের অবস্থান কিছুটা ভাল হবার সম্ভবনা থাকবে। ট্রাম্প দোষী হলেও হয়তো জেলে যাবেন না, কারণ এটি তাঁর প্রথম অপরাধ, এবং এটি ভয়ঙ্কর মামলা নয়। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে সকল ফেডারেল মামলায় নিজেকে ক্ষমা করে দিতে পারবেন। ডেমক্রেটরা একের পর এক মামলা দিয়ে তাঁকে রুখতে চাইলেও তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন।

ট্রাম্পের ফৌজদারি মামলাগুলো

ওয়াশিংটন ডিসি-তে ২০২০ নির্বাচনের ফলাফল বানচালের ষড়যন্ত্র দায়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা পিছিয়ে যাচ্ছে? এ মামলার তারিখ ছিলো ৪ঠা মার্চ। আদালতের মার্চ-এপ্রিলের কর্মসূচিতে তা নেই। কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, ট্রাম্প আপিলে দাবি করেছেন যে, ৬ই জানুয়ারি তিনি যা করেছেন, তা প্রেসিডেন্ট হিসাবে করেছেন, সুতরাং এটি বিচারের আওতায় পড়েনা। ৯ই জানুয়ারি ২০২৪ আপিলের শুনানিতে তিনি বলেছেন, ক্যাপিটল হিল আক্রমণে অভিযুক্ত করে তাকে অভিশংসিত করা হয়, সিনেটে তাঁর বিচার বসে, তিনি নির্দোষ ও খালাস পান। সুতরাং একই অপরাধে নুতন করে বিচার হতে পারেনা। ৩-সদস্যের বিচারক প্যানেল এ বিষয়ে এখনো রায় দেননি।

ট্রাম্পের অপর মামলা নিউইয়র্কের ম্যানহাটন সুপ্রিমকোর্টে ব্যবসায় জালিয়াতি, ২০১৬’র নির্বাচনকালে তিনি স্টোর্র্মী ড্যানিয়েলকে অর্থ দিয়ে তাঁর মুখ বন্ধ করেছিলেন। এই মামলার তারিখ আছে ২৫শে মার্চ ২০২৪। ১৫ই ফেব্রুয়ারি এর একটি প্রাথমিক শুনানি রয়েছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মোট ৪টি ফৌজদারি মামলা ঝুলছে। ট্রাম্পের অন্য দু’টি ফৌজদারি মামলার একটি হচ্ছে ফ্লোরিডায়, সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর ক্লাসিফাইড ডক্যুমেন্ট অযত্নে নিজের কাছে রাখা এবং তাঁর মার্-এ-লগো বাসস্থান থেকে সেগুলো উদ্ধারে বাধা দেয়া। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অন্য মামলাটি হচ্ছে, জর্জিয়া ষ্টেট নির্বাচনে বাঁধা সৃষ্টি।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জর্জিয়ার মামলা ঝুলে গেছে। ২০২০-র নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও অন্য ১৮জনের বিরুদ্ধে জর্জিয়ায় মামলা হয়, বাদী ফুলটন কাউন্টি কৌসুলি ফনি টি উইলিস। জর্জিয়ায় ট্রাম্পকে ১৩টি অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়, তিনি নিজেকে ‘নিরপরাধ’ দাবি করেন। ৯৮ পাতার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ট্রাম্প বেআইনি ষড়যন্ত্র করে ‘ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ সাথে যোগসাজসে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিতে চেয়েছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্যে কৌশলী ফনি টি উইলিস একজন ‘নিরপেক্ষ কৌশলী’ নাথান ওয়েড-কে নিয়োগ দেন্, যিনি তারই অধঃস্তন কর্মচারী। ইতিমধ্যে খবর বেরোয় যে, ফনি-নাথান রোমান্টিক সম্পর্কে জড়িত। শুক্রবার ২রা ফেব্রুয়ারি ২০২৪ কৌঁসুলি ফনি সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন, তবে বলেন, এতে ট্রাম্প কেসের কোন ব্যাঘাত ঘটবে না, এবং তিনি জানান, সম্পর্কটি হয়েছে নাথানকে নিয়োগ দেয়ার পর। এদিকে হাউস জুডিশিয়ারি কমিটি শুক্রবার ২রা ফেব্রুয়ারি কৌঁসুলি ফনিকে ৪৮৮হাজার ডলার ফেডারেল গ্র্যান্ট অন্যত্র ব্যবহারের অভিযোগ সংক্রান্ত দলিলপত্র কংগ্রেসে জমা দেয়ার জন্যে ‘সমন’ জারি করেছে। কৌসুলি ফনি টি উইলিস’র এ কেলেঙ্কারি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ দুর্বল করবে। জর্জিয়ায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলার একটি শুনানী ছিলো ১৫ই ফেব্রুয়ারি, সরকারি কৌঁসুলি ফনি টি উইলিস তা পেছানোর জন্যে ইতিমধ্যেই বিচারকের কাছে আবেদন করেছেন।

রবার্ট কেনেডী জুনিয়র ‘লিবারেটরিয়ান’ প্রার্থী হচ্ছেন?

নিউজম্যাক্স মিডিয়া জানায়: ডেমক্রেটিক পার্টি থেকে বেরিয়ে আসা স্বতন্ত্র প্রার্থী রবার্ট কেনেডী জুনিয়র কি ‘লিবারেটরিয়ান’ পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন? তিনি বলেছেন, আলোচনা চলছে, সম্ভবনা আছে। কেনেডী অক্টবরে (২০২৩) ডেমোক্রেট পার্টি থেকে বেরিয়ে যান, স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণা দেন, প্রথম দিনেই ১১মিলিয়ন ডলার তুলেন। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বিভিন্ন ষ্টেটে জটিল নিয়মকানুন থাকায় তিনি ‘লিবারেটরিয়ান’ পার্টির প্রার্থী হতে পারেন। সিবিএস নিউজ জানায়, ২০১৬ ও ২০২০-তে এই দল ৫০টি ষ্টেটে নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছিলো, যদিও ২০২৪’র খবর এখনো জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, কেনেডি জুনিয়র পরিচিত হতে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। এদিক ট্রাম্প এক টিভি সাক্ষাতকারে বলেছেন, কেনেডিকে তিনি পছন্দ করেন, তবে তাঁর করার প্রশ্নই উঠেনা।

হোমল্যান্ড সেক্রেটারির অভিশংসন প্রক্রিয়া

হাউস রিপাবলিকানরা হোমল্যান্ড সেক্রেটারি ডেমোক্রেট আলেহান্দ্রো মায়োর্কাস’র ইম্পিচমেন্ট বা অভিশংসন প্রক্রিয়া আরো একধাপ এগিয়ে এনেছেন। ডেমোক্রেটরা এই প্রক্রিয়াকে ‘লজ্জা’ বলে মন্তব্য করছেন। হাউস হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটি বুধবার (৩১শে জানুয়ারি ২০২৪) পার্টিলাইনে ১৮-১৫ভোটে আলেহান্দ্রো মায়োর্কাস’র বিরুদ্ধে ২টি অভিশংসন প্রস্তাব পাশ করে। ১ম প্রস্তাব: ইচ্ছাকৃত ও পদ্ধতিগত উপায়ে আইন মেনে চলায়  অস্বীকৃতি; ২য় প্রস্তাব: জনগণের আস্থার সাথে বিশ্বাসভঙ্গ। ১ম প্রস্তাবে জিওপি বলছেন, বর্ডার খোলা রেখে ইমিগ্রেশন আইন ও পলিসি অমান্য করে দক্ষিণ সীমান্তে অবৈধ অধিবাসীদের ঢুকতে দিয়েছেন। তিনি আইনের ওপর রাজনীতিকে প্রধান্য দিয়েছেন। ডেমক্রেটরা বলছেন, তিনি বাইডেন প্রশাসনের নীতিমালা অনুসরণ করছেন, আইন অমান্য করেননি।  এ দু’টো প্রস্তাব নিয়ে এখন কংগ্রেসে আলোচনা ও ভোটাভুটি হবে। হোমল্যান্ড সেক্রেটারি আলেহান্দ্রো মায়োর্কাস অভিশংসিত হলে সেটি হবে ১৫০বছরে কোন মন্ত্রী (সেক্রেটারি) জন্যে এই প্রথম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি কি অভিশংসিত হবেন? না, কারণ সিনেট ডেমক্রেটদের দখলে। হাউসে এটি সংখ্যাগরিষ্ট ভোটে পাশ করলেও সিনেটে তাঁকে অভিশংসিত করতে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের দরকার, যা রিপাবলিকানদের নেই। সুতরাং তিনি খালাস পাবেন।

প্রেসিডেন্ট বিতর্ক হচ্ছেনা?

টাইম ম্যাগাজিন সংশয় প্রকাশ করছে যে, ২০২৪-এ কি আদৌ কোন প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে কিনা? প্রথম বিতর্কের দিনক্ষণ ইতোমধ্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটি হচ্ছে সান মার্কসে টেক্সাস স্টেট ইউনিভার্সিটি, ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৪। বাইডেন বা ট্রাম্প কেউই এতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না? উভয় শিবির বলছে, সেপ্টেম্বর এখনো অনেক দূরে, বাইডেন বা ট্রাম্প কেউই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রার্থী নন। প্রথম বিতর্ক ক্যানসেল হলে অক্টবরে অনুষ্ঠিতব্য ভার্জিনিয়া ও উত্তাহ’র পরিকল্পিত বিতর্ক বাতিল হয়ে যাতে পারে। সেক্ষেত্রে ১০ই জানুয়ারি ২০২৪ ‘দেস মনিস’এ অনুষ্ঠেয় নিকি হেলি-রণ ডিসনটিস বিতর্কই হচ্ছে শেষ বিতর্ক।

আরবরা বাইডেনকে ভোট দেবেনা

মিশিগানে আরব ও মুসলিম ভোটাররা বাইডেন যাতে পরাজিত হয় সেই চেষ্টা করছে। গাজায় যুদ্ধ থামানোর ব্যর্থতার কারণে এরা রাগান্বিত। ২০২০-তে আমেরিকায় বেশির ভাগ মুসলমান ট্রাম্পের বিপক্ষে ছিলেন, এবার ট্রাম্প-বাইডেন ফাইট হলে তারা কি করবেন? ইলিনয়েস নির্বাচনী বোর্ড প্রাইমারিতে ট্রাম্পের নাম ব্যালটে রাখার পক্ষে রায় দিয়েছে। বোর্ড বলেছে, বিষয়টি আদালত দেখবে। ৫জন ভোটার ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী ট্রাম্প প্রার্থী হতে পারেন না বলে আবেদন করেছিলেন।

নিকি সুপার টুইসডে পর্যন্ত মাঠে থাকবেন?

নিকি হেলি শিবির রিপাবলিকানদের সাধ্যমত বোঝাতে চেষ্টা করছে যে, ট্রাম্প প্রার্থী হলে হোয়াইট হাউস ডেমোক্রেটদের দখলেই থাকবে। নিকি হেলি খুব সম্ভবত: ৫ই মার্চ ‘সুপার টুইসডে’ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। সাউথ ক্যারোলিনায় ট্রাম্প নিকি হেলি থেকে ২৬% এগিয়ে। গভর্নর বলেছেন, প্রকৃত সংখ্যাটি আরো বড়। সুপার টুইসডে পর্যন্ত একটি ষ্টেট না জিতলে নিকি হেলি’র পক্ষে রেসে থাকা কষ্টকর হবে। ওয়াশিংটন পোষ্ট-মনমাউথ ইউনিভার্সিটি ১লা ফেব্রুয়ারি জানায়, সাউথ ক্যারোলিনায় ট্রাম্প ৫৮%, হেলি ৩২%, এবং ব্যবধান আগের চেয়ে বেড়েছে। নিকি বলেছেন, তিনি নিউ হ্যাম্পশায়ার থেকে ভাল করতে চাচ্ছেন। নিউ হ্যাম্পশায়ারে ব্যবধান ছিলো ১১% (ট্রাম্প ৫৪%-হেলি ৪৩%)। নিকি মুখ্যত নিরপেক্ষ ভোটারদের সমর্থন চাচ্ছেন। আইওয়াতে বেশ ক’জন প্রার্থী ছিলেন, হেলি সেখানে নিরপেক্ষদের ভোট পেয়েছেন ৮%, নিউ হ্যাম্পশায়ারে ট্রাম্প-হেলি সরাসরি ফাইট ছিলো, সেখানে নিরপেক্ষ ছিলো প্রায় ৪৪%, ট্রাম্প এদের ৩৯%, হেলি ১০% সমর্থন পেয়েছেন। হেলির নিজ রাজ্য সাউথ ক্যারোলিনায় নিরপেক্ষ ভোটার হয়তো ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন