অবিশ্বাস্য হলেও সত্য

করোনাকালে কমেছে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর ব্যবহার!

করোনাকালে কমেছে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর ব্যবহার! ঝুঁকিতে মাতৃস্বাস্থ্য

ফাহিমা আক্তার সুমি।।  করোনাকালে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে বেড়ে গেছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় গত বছর প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার অতিরিক্ত শিশু জন্ম নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। জাতিসংঘ শিশু তহবিলও দেশে জন্ম হার বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। এ সময় আবার নারীদের গর্ভকালীন ও মাসিককালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যাও অনেকটা নাজুক হয়ে উঠেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এর প্রভাব একটা সময় নারীদেরই ভোগ করতে হবে। বর্তমানে অপ্রতুল তথ্য সেবা এবং অপর্যাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা স্বাস্থ্যসেবার কারণে গর্ভধারণের সংখ্যা এবং মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা ও বৃদ্ধির ঝুঁকি রয়েছে। তাছাড়াও চাহিদামাফিক গর্ভনিরোধক সরবরাহে ঘাটতির ক্ষেত্রে আগাম অনুমানের প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে পারে বলেও অনেকেই আশঙ্কা করছেন।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্যে পিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।

করোনাকালে কমেছে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর ব্যবহার!  ব্যবহৃত সামগ্রীর মধ্যে অর্ধেকই পিল। বাকি অর্ধেকের মধ্যে আছে ইনজেকশন, কনডম, নারী ও পুরুষের বন্ধ্যাকরণ ইত্যাদি। গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে পিল ও কনডমের ব্যবহার কমে যায় প্রায় ৩০ শতাংশ। স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণের পরিমাণও কমে যায় ব্যাপকভাবে। যেমন জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে গড়ে প্রায় ৩ হাজার ভ্যাসেকটমি (পুরুষের বন্ধ্যাকরণ) হলেও এপ্রিল মাসে এ সংখ্যা ছিল ২৬৩ এবং মে মাসে ১২১। নারী বন্ধ্যাকরণের সংখ্যা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ৬ হাজারের ওপরে হলেও এপ্রিলে এর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮০০ আর মে মাসে এ সংখ্যা ২ হাজার ৬০০।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএন উইমেনের গত বছরের জুন মাসে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ নারী তাদের স্বাস্থ্য পরিচর্যার সামগ্রীর অপ্রতুলতার কথা বলেছেন, বিশেষ করে নারীপ্রধান পরিবারের কাছে এ সমস্যা প্রকট। ‘কোভিড-১৯ বাংলাদেশ: র‍্যাপিড জেন্ডার অ্যানালাইসিস’ শিরোনামে ওই গবেষণাটি ছিল জেন্ডার ইন হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ নামের একটি জোটের উদ্যোগ। নিম্ন ও স্বল্প আয়ের নারীরা কীভাবে তাদের মাসিককালীন ব্যবস্থাপনা করছেন, তা জানতে গত বছরের মে মাসে আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটারএইড বাংলাদেশ একটি গুণগত গবেষণা করে। তাতে দেখা যায়, নিম্ন আয়ের নারীদের মাসিককালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যার ক্ষেত্রে করোনার প্রভাব প্রকট। অবস্টেট্র্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাবেক সভাপতি রওশন আরা বেগম বলেন, ‘করোনাকালে গর্ভপাতের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। বেড়েছে ঘরে সন্তান জন্ম দেয়ার হার। এসবের প্রভাব নারী স্বাস্থ্যের ওপর পড়বে।

টিম অ্যাসোসিয়েটের টিমলিডার পুলক রাহা মানবজমিনকে বলেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় গত বছর প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজার অতিরিক্ত শিশু জন্ম নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এ সময় প্রয়োজনীয় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলো সংগ্রহ করতে পারেনি অনেকে। হাসপাতাল সমূহকে এএনসি (প্রসবপূর্ব) এবং পিএনসি (প্রসবোত্তর) সেবা দেয়ার কর্ণার রয়েছে। যেগুলো মিডওয়াইফসহ দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীরা রয়েছেন। করোনা পরিস্থিতিতে মাতৃস্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে এএনসি এবং পিএনসি বৃদ্ধি করা জরুরি। এছাড়া, মহামারির সময়ে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। করোনাভাইরাসের সঙ্গে বৈশ্বিক ও দেশীয় বর্তমান পরিস্থিতিতে মাতৃস্বাস্থ্য এবং কিশোরী স্বাস্থ্য বিশেষ করে গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর সময়ের বিভিন্ন ঝুঁকি ও প্রয়োজনীয় সেবা বিষয়ে আলোকপাত করা জরুরি। এ সময় পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে অপ্রতুল তথ্যসেবা এবং অপর্যাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা স্বাস্থ্যসেবার কারণে গর্ভধারণের সংখ্যা এবং মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির ঝুঁকি রয়েছে। তাছাড়াও চাহিদামাফিক গর্ভনিরোধক সরবরাহে ঘাটতির ক্ষেত্রে আগাম অনুমানের প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, জরুরি ভিত্তিতে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে প্রত্যেক স্থানে প্রয়োজন সামাজিক কার্যক্রম হাতে নেয়া। এই মহামারির প্রেক্ষিতে পরিবার পরিকল্পনা ও মাতৃস্বাস্থ্যের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় আনতে হবে। তাই কেবলমাত্র বাজেট বরাদ্দ যথেষ্ট নয়। বরং বরাদ্দকৃত বাজেট পরিকল্পনা মাফিক ব্যয় করা এবং মনিটরিং ব্যবস্থাকে আরো কার্যকরী করে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি কর্মসূচিতে বেসরকারি সংস্থার অংশগ্রহণ, প্রচার ও পরিষেবা সম্প্রসারণ এবং সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবার মান উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি সেবা নীতিমালা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্ব আরো জোরদার করা প্রয়োজন।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কাজী আ খ ম মহিউল ইসলাম মানবজমিনকে জানান, করোনার কারণে আমাদের সকলের মধ্যে ভীতি কাজ করে। এই পরিস্থিতির মধ্যে গর্ভবতী মায়েদেরও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসা অনেক কমে গেছে। তারা মানসিকভাবেও অনেক দুর্বল। এদিকে যারা সার্ভিস প্রভাইডার আছে তারাও ভয়ের মধ্যে আছে। এতে করে তাদের যে স্বাভাবিক মাত্রায় সেবামূলক কাজগুলো করার কথা ছিল সেটিও করতে পারছে না। নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য গর্ভকালীন সময়ে যে চারটা ভিজিটের প্রয়োজন হয় সেই চারটি কিন্তু অনেক গর্ভবতী মা করতে পারছেন না। তারা কিন্তু অনেকটা ঝুঁকির মধ্যে যাচ্ছেন। করোনায় গর্ভবতী মায়েরা সবচেয়ে বেশি চিন্তিত তার নিজের কোনো ক্ষতি হবে কিনা। গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হবে কিনা। এসব ভেবে মানসিক ও শারীরিকভাবে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে বাইরে বের না হয়ে আরো বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছে সেটা বুঝতে পারছেন না। এসব মায়েরা যেন সেবা নেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসেন। তাদেরকে সবাই মিলে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যারা কিশোরী মা আছেন তাদেরকে অনেক বেশি পুষ্টি সচেতন হতে হবে। পরিবারকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তিনি আরো জানান, এ সময় মানুষ বের হতে পারছে না। ঘরে থাকছে। অনেকে জন্মনিয়ন্ত্রণের কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করছে না। সুতরাং গর্ভধারণের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। যেটা মাতৃস্বাস্থ্যের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ।- মানবজমিন


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন