ফিচার্ড যাপিত জীবন

করোনায় নিঃস্ব পরিবারকে বাঁচাতে জীবনযুদ্ধে কিশোর ইউসুফ

ইউসুফ শেখ

করোনায় নিঃস্ব পরিবারকে বাঁচাতে জীবনযুদ্ধে কিশোর ইউসুফ

ঢাকার ধামরাইয়ে ইউসুফ শেখ নামে ১৩ বছরের একটি ছেলে ঝালমুড়ি বিক্রি করে চালাচ্ছে ৪ জনের সংসার। বয়স্ক বাবা ধানের মিলে কাজ করতেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে মিল বন্ধ থাকায় এখন বাদাম বিক্রি করেন। ছোট বোনকে নিয়ে মা বাড়িতেই থাকেন। বড় ভাই বউ নিয়ে ঢাকায় থাকেন। খোঁজ নেয় না বাবা-মায়ের। এমন কথা বলছিলেন ঝালমুড়ি বিক্রেতা ইউসুফ।

জানা যায়, ইউসুফদের অবস্থা এরকম ছিলো না। ছিল খাবারের হোটেল, মুদি দোকান ও কাঁচামালের দোকানসহ তিনটি দোকান। সে মাদ্রাসায় পড়তো। হঠাৎ করে করোনার কারণে সব পাল্টে যায়। সংসার হয়ে যায় এলোমেলো। ঝালমুড়ি বানানোর সময় কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলছিলো ইউসুফ শেখ।

ইউসুফ শেখ ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানার হরিহান নগর গ্রামের মো. আবু বক্কর শেখের ছেলে। বর্তমানে ইউসুফ শেখ ধামরাই উপজেলার শরিফভাগ এলাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করে। আর বাবা আবু বক্কর শেখ বিক্রি করেন বাদাম।

ইউসুফের বড় ভাই ইকবাল শেখ স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন ঢাকাতে। সেখানে থেকেই একটি কোম্পানিতে সেলসম্যানের চাকরি করেন। ইকবাল পরিবারের কোনো খোঁজ খবর নেয় না।

ইউসুফ বলেন, ফরিদপুর জেলায় নিজের গ্রামেই ইউসুফদের খাবারের হোটেলসহ তিনটি দোকান ছিলো। ইউসুফের বাবা আবু বক্কর শেখ চালাতেন খাবারের হোটেল, বড় ভাই ইকবাল শেখ মুদি দোকান এবং ইউসুফের দাদা দেখতেন কাঁচামালের ব্যবসা। ইউসুফ তখন স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। হঠাৎ একদিন ইউসুফের দাদার মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই মাদ্রাসায় পড়াশোনা বাদ দিয়ে ইউসুফ কাঁচামালের দোকানে বসতেন। বন্ধ হয়ে যায় মাদ্রাসায় পড়াশোনা। এর কিছুদিন পরই বড় ভাই ইকবাল শেখ বাবার সাথে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে চলে আসেন ঢাকায়। লোক না থাকায় মুদি দোকানটি বিক্রি করে দিতে হয়।

এরপরও হোটেল ও কাঁচামালের দোকানের আয় দিয়ে মোটামুটি ভালোই চলছিলো ইউসুফের পরিবার। কিন্তু করোনার কারণে প্রথম লকডাউনে হোটেল বন্ধ থাকায় হোটেল ব্যবসায় লোকসান হতে থাকে। ইউসুফ ছোট থাকায় ঠিকমতো কাঁচামালের ব্যবসা করতে পারছিলো না। এতে দিন দিন লোকসান গুণতে গুণতে ইউসুফের বাবা দোকান বন্ধ করে দেন। ধার-দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েন।

করোনার কারণে সব ব্যবসা বাদ দিয়ে বক্কর শেখ পরিবার নিয়ে ঢাকার ধামরাই উপজেলার শরিফভাগ এলাকায় এসে একটি ভাড়া বাড়িতে ওঠেন। ধামরাইয়ে এসে ইউসুফের বাবা শরিফভাগ এলাকার একটি ধানের মিলে কাজ করেন। বৃষ্টির কারণে ধানের মিলের কাজও বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিদিন কাজ হয় না। কি করে সংসার চলবে চিন্তায় ভেঙে পড়েন। অবশেষে বাদাম বিক্রি শুরু করেন।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। বাদাম বিক্রির সেই উপার্জন দিয়ে চারজনের সংসার চালাতে পারছিলেন না আবু বক্কর শেখ। তাই বাবাকে সাহায্য করতে ইউসুফ নিজের উদ্যােগে বাবার সাথে পরামর্শ করে শুরু করে ঝালমুড়ি বিক্রি।

শরিফভাগ এলাকার শমেজ আলী জানায়, ইউসুফ কয়েকদিন ধরেই এই বাজারে ঝালমুড়ি বিক্রি করছে। অনেকেই ঝালমুড়ি কেনে ইউসুফের কাছ থেকে। কিন্তু কখনো ওর হাসিমুখ দেখিনি। কখনো জিজ্ঞেসও করিনি এর কারণ কি।

ইউসুফ শেখ জানায়, আমার দাদা মারা যাওয়ার পরই আমাদের পরিবারে সমস্যার শুরু হয়। দুই বছর মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছি। দাদা মারা যাওয়ার পর মাদ্রাসায় পড়াশোনা বাদ দিয়ে কাঁচামালের দোকানে বসতে হয়েছে। তার কিছুদিন পরই আমার বড় ভাই বাবার সাথে ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। পরে করোনার কারণে হোটেল ব্যবসায় অনেক লোকসান হয়। বাবা ধার-দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়েন। আমাদের সব ব্যবসায়ই বন্ধ হয়ে যায়।

আবু বক্কর শেখ বলেন, ধামরাইতে এসে ধানের মিলে ধান শুকানোর কাজ শুরু করি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেই কাজটিও বন্ধ রয়েছে। তাই ঘুরে ঘুরে এখন বাদাম বিক্রি করি। কিন্তু সেই টাকায় চারজনের সংসার চলে না। এখন ছোট ছেলে ঝালমুড়ি বিক্রি করে। প্রতিদিন ৩ থেকে চারশ’ টাকা বিক্রি হয়। বিক্রি শেষে সব টাকা আমার হাতে দেয়।

তিনি আরো বলেন, বয়স হয়ে গেছে, কোনো জায়গায় চাকরিতে নেয় না। রিকশা কিনে চালাবো, তাও ভয় করে কখন সরকারের লোকজন রিকশা ভেঙে দেয়। ছোটখাটো কোনো ব্যবসা করবো তাও অর্থনৈতিক কারণে সম্ভব নয়। সব হারিয়ে ঢাকায় এসেও কোনো কিছু করে উঠতে পারছি না। -বাংলাদেশ জার্নাল


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন