দেশের সংবাদ ফিচার্ড

অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিদেশগামী কর্মীদের জন্য টিকা চাইলেন বায়রা

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বায়রার সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেন

অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিদেশগামী কর্মীদের জন্য টিকা চাইলেন বায়রা

বিদেশগামী কর্মীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে করোনা টিকা দেয়া ও টিকিটের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সম্মিলিত সমন্বয় পরিষদ। একই সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সৌদি প্রবাসীদের দ্রুত ফিরিয়ে নিতে সে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টিকা  চেয়েছেন বায়রার নেতারা।

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বায়রার সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেন জানান, বাংলাদেশের অর্থনীতির অধিকাংশ জুড়ে আছে প্রবাসীদের অবদান। রিজার্ভের ৪৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী কর্মীদের। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বর্তমান শ্রমবাজারে একমাত্র সৌদি আরব ছাড়া সব দেশে শ্রমিক প্রেরণ বন্ধ রয়েছে। এমনকি এই বিশ্ব মহামারিকে সামনে রেখে সৌদি সরকার তাদের দেশে সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে কিছু নিয়ম চালু করেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে বিদেশগামী কর্মীরা করোনার নেগেটিভ সনদ ও টিকা নেয়ার সনদপত্র নিয়ে যেতে হয়। অন্যথায় তাদের বাধ্যতামূলক ৭ দিনের ব্যয়বহুল হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে।

যার খরচ প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকা। এখন ৫০ হাজার কর্মী বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। ফলে তাদের কোয়ারেন্টিন বাবদ ৩৭৫ কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। গ্রামের গরিব ও অসহায় মানুষের পক্ষে এই টাকা বাড়তি খরচ করে বিদেশ যেতে অসুবিধা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, করোনা এই মহামারির সময়ে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স টিকিটের উচ্চমূল্য নির্ধারণ করেছে। যা বহন করতে আমাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। টিকিটের মূল্যের অতিরিক্ত ব্যয় পরোক্ষভাবে প্রবাসী কর্মীদের উপরই বর্তায়। টিকিটের এই বিদ্যমান উচ্চমূল্য শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণকারী গন্তব্যের জন্য প্রযোজ্য। এমতাবস্থায় আমরা প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাই। যাতে বিদেশগামী কর্মীদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিদেশ যাওয়ার পথ সুগম করে দেন। পাশাপাশি টিকিটের মূল্য সহনশীল পর্যায়ে রাখা হয়। এতে  সৌদি আরবের হোটেল কোয়ারেন্টিন বাবদ জনপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার অতিরিক্ত খরচ থেকে পরিত্রাণ পাবে বাংলাদেশি হাজার হাজার শ্রমিক।
বায়রা’র সাবেক সভাপতি আবুল বাশার বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশে যেতে টিকার সনদ বাধ্যতামূলক হচ্ছে। প্রতিটি দেশে এখন টিকার সনদ চায়। বিদেশগামী কর্মীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে টিকা না দিলে একসময় কর্মী যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। কর্মীরা বিপাকে পড়বেন। দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব দেখা দেবে। তিনি বলেন, সরকার বিদেশগামী কর্মীদের ২৫ হাজার টাকা করে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। কিন্তু আমাদের দাবি প্রণোদনা না দিয়ে দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করা হোক। সরকার চাইলে সৌদি আরব অথবা টিকা দাতা সংস্থাগুলোÑ যেখানে বাংলাদেশি কর্মী যায়, তাদের থেকে টিকার ব্যবস্থা করতে পারে।
বায়রা’র সাবেক সভাপতি বলেন, সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে সৌদি আরব থেকে টিকা চাইতে পারেন। আমাদের কর্মীদের জন্য সৌদি থেকে টিকা আনা সম্ভব হলে দ্রুত সময়ে প্রবাসীরা ফেরত যেতে পারবেন।
এ সময় বিদেশগামীদের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টিকা আলাদাভাবে বরাদ্দের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জনসনের টিকা’র অনুমোদন দিয়েছে আমাদের সরকার। এই টিকা এক ডোজ দিলেই কার্যকর হয়। তাই বিদেশগামীদের জন্য আমরা জনসনের এই টিকা আমদানির দাবি করছি। তাহলে যেমন এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে চলে যাবে না; তেমনি তাদের জন্য যে ২৫ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে সেটাও দরকার পড়বে না। বরং বিদেশগামীদের এই টাকা দিলে তাদের পরিবার উপকৃত হবে।
বায়রা’র সাবেক অর্থসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, শুধু যে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে তা নয়, এই টিকা আমাদের বিদেশগামীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যও দরকার।
তিনি বলেন, এর আগে ভারত থেকে আনা টিকা গ্রহণের রেজিস্ট্রেশনের জন্য যে অ্যাপস্ ব্যবহৃত হয়েছে, সেখানে বয়সসীমা ৪০ বছরের উপরে রাখা হয়েছে। অথচ আমাদের বিদেশগামীদের বয়সসীমা ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তাই তারা রেজিস্ট্রেশন করে টিকাগ্রহণ করতে পারেননি বা পারছেন না। বিদেশগামীদের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনের এই বয়সসীমা পরিবর্তন করতে হবে। আর করোনাকালের শুরুতেই বিদেশগামীদের জন্য যে এক লাখ ২০ হাজার ডোজ টিকা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছিল সেটা এখন বাস্তবায়নের সময় এসেছে। কারণ ইতিমধ্যে টিকা চলে এসেছে। এই মুহূর্তে যে ৭ লাখ টিকা এসেছে সেখান থেকে বিদেশগামীদের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টিকা বরাদ্দ দিতে হবে। মনে রাখতে হবেÑ বিদেশগামীদের টিকার কোনো বিকল্প নেই। ভবিষ্যতে টিকা ছাড়া বিদেশগামীরা যেতে পারবে না। প্রবাসীদের যাওয়ার প্রবাহটা ধরে রাখতে হলে যেকোনোভাবে টিকার ব্যবস্থা করতে হবে।
ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, অভিবাসন খরচ বাড়ার ক্ষেত্রে সবসময় রিক্রুটিং এজেন্সিকে দোষারোপ করা হয়। কিন্তু, বাংলাদেশ বিমানসহ অন্য বিমানগুলো আগের চেয়ে এখন টিকিটের মূল্য ৩ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আগে টিকিটের মূল্য যেখানে ছিল ২৫ হাজার এখন সেটা ৭৫ হাজার পর্যন্ত ঠেকেছে। এ কারণে অভিবাসন ব্যয়ও বেড়েছে। এর উপর তো হোটেল কোয়ারেন্টিন বাবদ ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা যুক্ত হয়েছে। সরকারের এ ব্যাপারে বিমানের টিকিট সহনীয় পর্যায়ে আনতে ভূমিকা রাখা উচিত।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী, সাবেক সহ-সভাপতি আবুল বারাকাত ভূঞা, মিজানুর রহমান, সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক  মোজাম্মেল হক, সাকেব ইসি সদস্য লিমা বেগম প্রমুখ। -মানবজমিন


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন