লেখালেখি

চলচ্চিত্রে কিংবদন্তি বাঙালি গায়ক কিশোর কুমারের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি


চলচ্চিত্রে কিংবদন্তি বাঙালি গায়ক কিশোর কুমারের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি  ।। বিদ্যুৎ ভৌমিক

বাংলা / হিন্দী ভাাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রে কিংবদন্তি বাঙালি গায়ক, গীতিকার, সুরকার এবং অভিনেতা  কিশোর কুমারের ৯১তম জন্ম বার্ষিকীতে  তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি । কিশোর কুমার হলেন একজন জনপ্রিয় ভারতীয় বাঙালি গায়ক, গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং রেকর্ড প্রযোজক।  তিনি ভারতীয় বাংলা / হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পের সর্বাধিক সফল এবং চলচ্চিত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ নেপথ্য গায়ক হিসেবে বিবেচিত ও পরিচিত ।  কিশোর কুমার, ১৯২৯ খ্রী: ৪ আগষ্ট  মধ্যপ্রদেশের খান্ডাবোতে বাঙালি গাঙ্গুলী (গঙ্গোপাধ্যায়) পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কুঞ্জলাল গাঙ্গুলী ছিলেন একজন সফল উকিল। তার মার নাম ছিল গৌরী দেবী। কিশোর কুমারের জন্মনাম ছিল আভাস কুমার গাঙ্গুলী। চার ভাই বোনের ভিতর কিশোর কুমার ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। ভাইবোনদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিলেন বোম্বাইয়ের এককালীন নামকরা অভিনেতা অশোক কুমার । তারপর বোন সীতা দেবী। তারপর অভিনেতা অনুপ কুমার । তারপর  সর্বকনিষ্ঠ কিশোর কুমার। কিশোরের শৈশবকালীন সময়েই তার বড়দা অর্থাৎ জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা অশোক কুমার বোম্বেতে হিন্দি চলচ্চিত্র জগতে বড় রকমের সাফল্য পান যিনি বোম্বেতে দাদামনি নামে শ্রদ্ধার সহিত পরিচিত ছিলেন। এই সফলতা ছোট্ট কিশোর কুমারের উপরে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল এবং কিশোর কুমারের এগিয়ে চলার পথ মসৃন করেছিল । কিশোর কুমার চারবার বিয়ে করেছেন। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন রুমা গুহ ঠাকুরতাা (১৯৫০-১৯৫৮)। ছোটবেলা থেকেই কিশোর বিখ্যাত গায়ক কুন্দন লাল সায়গলের গানগুলো অনুকরণ করতেন বা নকল করে গাইতেন । গাান ছাড়াও তার অভিনীত বিখ্যাত কয়েকটি হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে বাপ রে বাপ (১৯৫৫), হা ফ টিকিট (১৯৬২), পড়োশন (১৯৬৮), হাঙ্গামা (১৯৭১), পেয়ার দিবানা (১৯৭৩), বাড়তি কা নাম দাড়ি (১৯৭৪) ইত্যাদি।

৬০ এর দশকে  বোম্বের  চলচ্চিত্র জগতের শ্র্রেষ্ঠ হিন্দি গায়ক ছিলেন মোহাম্মদ রফি । ১৯৬৯ সালে শক্তি সামন্তের খুবই জনপ্রিয় ছায়াছবি আরাধনা শুভমুক্তি পায়। এই চলচ্চিত্রের নায়ক ছিলেন তৎকাালীন বোম্বেতে হিন্দী চলচ্চিত্র জগতের  সুপারস্টার রাজেশ খান্না। রাজেশ খান্নার জন্য এই চলচ্চিত্রে কিশোর কুমার তিনটি মনমাতানো গান গেয়েছিলেন – ‘কোরা কাগজ থা ইয়ে মন মেরা’ লতা মঙ্গেসকরের সঙ্গে -আর দুটি হলো- রূপ তেরা মস্তানা এবং ‘মেরে সপনো কি রানী’। তিনটি গানই বিপুল জনপ্রিয়তা পায় এবং একই সাথে কিশোর কুমারের সঙ্গীতজীবনকে সাফল্যের চরম শিখরে উঠিয়ে দেয়। এই আরাধনা চলচ্চিত্রে রূপ তেরা মস্তানা গানের জন্য কিশোর কুমার প্রথম বার শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য গায়ক হিসাবে  প্রথমবার  ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান। পরবর্তী বছরগুলোতে কিশোর গায়ক হিসাবে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন । সে সময়ে বলিউডে প্রতিষ্ঠিত সব নায়ক যেমন রাজেশ খান্না, শশী কাপুর, ধর্মেন্দ, রনধীর কাপুর, সঞ্জিব কুমার এবং দেব আননন্দের জন্য তাদের ছায়াছবিতে তিনি কালজয়ী  গান গেয়েছেন। এই সময়ে সচীন দেব বর্মণ এবং বাহুল দেব বর্মণের সুরে তিনি প্রচুর কালজয়ী গান গেয়েছেন । রাহুল দেব বর্মনের সুরে তিনি বোম্বে টু গোয়াা চলচ্চিত্রতে প্রথমবারের জন্য অমিতাভ বচ্চনের জন্য গান করেন। ১৯৭৩ সালে অমিতাভের ‘অভিমান’ চলচ্চিত্রের জন্য তার গানগুলি জনপ্রিয় হয় । এরফলে পরবর্তী মেগাস্টার অমিতাভের নেপথ্য গায়ক হিসাবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন । কিশোরের এই অভূতপূর্ব সাফল্যের পরে বলিউডের অন্য সুরকারেরাও তাকে নিজেদের প্রধান গায়ক হিসাবে বেছে নিতে বাধ্য হয় । হিন্দির পাশাপাশি তিনি প্রচুর জনপ্রিয় বাংলা চলচ্চিত্রসহ বাংলা আধুনিক গানও গেয়েছেন। কিশোর কুমারের কয়েকটি কাালজয়ী বাংলা গানের কলি:  প্র্র্রথম আমার পূজার ফুল, এক পলকের একটু দেখা, এ আমার গুরুদক্ষিণা, চিরদিনই তুমি যে আমার, একদিন পাখী উড়ে যাবে যে আকাশে, এই যে নদী, এই তো জীবন- হিংসা, বিবাদ, লোভ হোক বিদ্বেষ ইত্যাদি ।

কিশোর কুমারই একমাত্র গায়ক যিনি শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য গায়ক হিসাবে ৮ বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছেন এবং একই বিভাগে সর্বাধিক ফিল্মফেয়ার পুরস্কার বিজয়ের রেকর্ড করেছেন । বিশেষত তার বাংলায় গাওয়া গানগুলি সর্বকালের ধ্রুপদী গান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে । হিন্দি চলচ্চিত্রে কিশোর কুমারের বলিষ্ঠ অবদানের জন্য তার নামে হিন্দি চলচ্চিত্রে কিশোর কুমার পুরস্কার প্রদান চালু করা হয় । ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর  মাত্র ৫৮ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভারতের এই জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পীর মৃত্যু হয়। কিশোর কুমার না থাাকলেও হিন্দি চলচ্চিত্রের সঙ্গীতের উপর তার প্রভাব  ও জনপ্রিয়তা এখনও বিশাল ও ব্যাপক। বর্তমান কালের প্রতিষ্ঠিত অনেক গায়ক যেমন কুমার শাানু, অভিজিৎ, বাবুল সুপ্রিয়, অমিত কুমার প্রায় সকলেই তাদের কেরিয়ারের প্রথম দিকে কিশোরের গানগুলোকে অনুকরণ করে গাইতেন। কিশোর কুমারের গানের আবেদন ও জনপ্রিয়তা এখনও এত বেশী যে তার গানের পুনঃনির্মাণ এবং পুনঃমিশ্রণ এখনও বাজারে প্রচুর বিক্রি হয় । তাই আবারও চলচ্চিত্রে কিংবদন্তি বাঙালি গায়ক কিশোর কুমারের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাচ্ছি। যতদিন গান থাকবে ততদিন তিনি বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায়।

সূত্র : উইকিপিডিয়া

বিদ্যুৎ ভৌমিকঃ  কলামিষ্ট, লেখক ও সিবিএনএ’এর উপদেষ্টা, মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা – ৩ আগষ্ট ২০২০

 

সিএ/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন