ফিচার্ড লেখালেখি

সূর্যোদয়ের দেশে ।।। বায়াজিদ গালিব

সূর্যোদয়ের দেশে ।।। বায়াজিদ গালিব

একটানা প্রায় চার ঘন্টা চিজুরুর সাথে ভ্রমণ।ওর সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে পৌঁছে গেলাম ডরমেটরিতে। পাহাড়ের উপরওখান থেকে গিফু ডিস্ট্রিক্টকে সুন্দর দেখায়। এটি একটি মফস্বল শহর তারপরও আলো ঝলমলে, নাম টোকি সিটি। চিজুরুজানিয়েছিলো এখানে আমি ছাড়াও আরো তিন জন শিক্ষার্থি আছে। দুজন ইরানের ইস্ফাহান থেকে আর তাইওয়ান থেকেএকজন। রাত এগারোটা বাজে। তারা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে তাই রাতে আর দেখা হলো না। এখানে যারা আসে সবার ব্যকগ্রাউন্ডসিরামিক্সে। চিজুরু আমার শোবার ঘর দেখিয়ে শুভ রাত্রি বলে বিদায় নিলো। লক্ষ্য করলাম বিছানায় একটি কোল বালিশও আছে। খুব ক্লান্ত ছিলাম ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছিলো তাছাড়া জেট ল্যাগও একটি ব্যাপার। কোনো মতে স্যুটকেস খুলেঘুমের ড্রেস পরে সোজা বিছানায়। ঘুম ভাঙলো সকাল আটটায়। এতো গভীর ঘুম অনেকদিন হয় নি।

আজ শনিবার। দু’ দিন সাপ্তাহিক ছুটি। তাই তাড়া নেই। হাত মুখ ধুয়ে বের হয়ে দেখি বসার ঘরে একজন বসে আছে মনে হলোজাপানি। সে আগ বাড়িয়ে আমার সাথে পরিচিত হলো। সে তাইওয়ানের শিক্ষার্থী নাম ডং। পারিবারিক নাম বললো না। কারণ আমি নাকি উচ্চারণই করতে পারবো না। যাক দাঁত ভাঙার কবল থেকে বাঁচা গেলো। আমি বললাম, একটু বাইরে ঘুরেদেখি। বাইরে বের হয়ে তৎক্ষণাৎ ভেতরে ঢুকে গেলাম। অক্টোবর মাস বাংলাদেশের মাঘ মাসের চেয়েও বেশি ঠান্ডা। গরম কাপড়পরে আবার বের হলাম। আমার চোখ ছানাবড়া। এতো সুন্দর ! পাহাড়ের উপর আনুমানিক এক একর নিয়ে এই গেস্ট হাউজ।একদম পাহাড়ের চূড়ায়। চারিদিক তাকিয়ে দৃশ্য দেখে আমি অভিভূত। গাছের পাতা বিভিন্ন রঙের, বাদামী, লাল, হলুদ, কমলা ওসবুজ। আমি তন্ময় হয়ে তাকিয়ে রইলাম। মনে হচ্ছে শিল্পীর রঙ তুলিতে আঁকা ছবি। গাছের পাতার বিভিন্ন রঙের মাহাত্ব বুঝতেপারলাম না। গেস্ট হাউজের চারপাশ দেখছিলাম। দেখতে পেলাম একটি গাড়ি এসে থামলো। গাড়ি থেকে অপরিচিত দু’ জনতরুণ তরুণী ( যুবক যুবতীও হতে পারে, ওদের বয়স বোঝা খুব মুশকিল), ছেলেটি এগিয়ে এসে বাও করে তার নাম জানালোমিজুনো আর মেয়েটি একই কায়দায় তার নাম বললো তাকুজি। আমিও বাও করে আমার নাম বললাম। তবে আমার নামউচ্চারণ করতে ওদের দাঁত ভাঙ্গার উপক্রম। আর চেষ্টা না করে আমার শেষ নাম মানে পারিবারিক নামেই ডাকার সিধান্তনিলো। তবে ওরা সবাইকে মিঃ অথবা মিস কে বলে “সান”। তাই আমি ওদেরকে মিজুনো সান আর তাকুজি সান বলেইসম্বোধন করলাম। লক্ষ্য করলাম মেয়েটির চেহারা টিপিক্যাল জাপানিদের মতো। ছোটছোট চোখ, বোঁচা নাক এবং মুখেরআদল সূঁচালো। পরবর্তীতে আমার বাঙালি সহকর্মী এসেই ওর নাম দিয়েছিলো মিস বেজী বেগম। ওর চলাফেরা আর চেহারানাকি বেজীর মতই। আমি তাকে সাবধান করে দিলাম, এটা বাংলাদেশ না। মেয়েটি জানতে পারলে কিন্তু খবর আছে।

মিজুনো, তাকুজি আর চিজুরু একই অফিসে কাজ করে এবং আমাদের সকলের দেখাশোনার দায়িত্ব তাঁদের। তারপর বললো, এত ভারী শীতের কাপড় পড়েছি কেন ? আমি লক্ষ্য করলাম এই প্রচন্ড শীতে সে টি শার্ট আর জিন্স পরা আর মেয়েটি স্কার্টএবং পাতলা ব্লাউজ পড়া। সে বললো, এখন তো খুব আরামদায়ক আবহাওয়া। আমি বললাম, আমি যে দেশ থেকে এসেছিসেখানে দশ মাস গরম থাকে, গ্রীষ্মে কখনো তাপমাত্রা চল্লিশের কাছে। আর তোমাদের এখানে এখন যে শীত, আমাদেরশীতকালে এর চেয়েও গরম। তাহলে ব্যাপারটি বুঝে নাও, কেন ভারী শীতের কাপড় পড়েছি। আমি বললাম, তোমাদেরগাছগুলি খুব সুন্দর, রঙিন। একই গাছে এতো রঙের পাতা হয় কি ভাবে? ওরা আমার কথায় হেসে খুন।বললো, এখন হচ্ছে“ফল সিজন”। পাতা ঝরার সময়। সব গাছ গ্রীষ্মে সবুজ থাকে, শীতে পাতা ঝরার আগে গাছে পাতাগুলি রঙিন হয়। ভাবলামকত অজানারে ! কথা বলতে বলতে ভেতরে ঢুকে দেখি সবাই প্রস্তুত হয়ে অপেক্ষা করছে। ইরান থেকে আগত তাহাই এবংনাভাই। ওদের সাথে পরিচিত হলাম। নাভাই আমাদের বয়সী আর তাহাই চল্লিশের উপর। যেহেতু নাভাই তাকে আংকেল ডাকেতাই তিনি আমাদের জাতীয় আংকেল হয়ে গেলেন।

রাতে কোম্পানির প্রেসিডেন্টের বাসায় রাতের খাবারের নিমন্ত্রণ ছিল। দেখলাম এলাহী কান্ড, আলাদা আলাদা পাত্রে পাতলাস্লাইস করে কাটা মুরগির মাংস, গরুর মাংস, ঘোড়ার মাংস, ভেড়ার মাংস, শুকরের মাংস, স্যালমন ফিশ, রূপচাঁদা, কাঁকড়া ওকাঁকড়ার ঠ্যাং , ঝিনুক, শামুক, অক্টপাস পরিপাটি করে সাজানো। তাহাই, নাভাই আর আমাকে এক সাইডে বসালো। আমাদেরসামনে টেবিলের সাথেই বিল্ট-ইন ইলেক্ট্রিক হট প্লেট। যা মাংস ছেকে খাবার জন্য। ওই টেবিলে মোট তিনটি হট প্লেট, মাঝেরহট প্লেটে গরম পানি। গরম পানির মাহাত্ম পরে বুঝে ছিলাম। ওরা মাংস ভেজে খাচ্ছে কিন্তু মাছগুলোকে চপস্টিক দিয়ে উঠিয়ে ২সেকেন্ড গরম পানিতে ডুবিয়ে খেয়ে ফেলছে। বলতে গেলে একদম কাঁচা। আমি ইচ্ছে মতো ঝাল লবন দিয়ে মাখিয়ে গরুরমাংস বিভিন্ন সস দিয়ে সব কিছুই ওয়েল ডান করে খেলাম। সসের গুনে বেশ সুস্বাদু লেগেছিলো খাবারগুলি। কাঁকড়া খেতেওবেশ মজার ছিল। আগে কখনো খাওয়া হয় নি। তবে ঘোড়ার মাংস খাওয়ার রুচি হলো না।

মিজুনো অতিরিক্ত মদ্যপান করে মাতাল হয়ে গেছে , তাই ওকে ট্যাক্সি ডেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হলো। ওদের দেশের অধীনস্তকর্মচারীরা প্রেসিডেন্টের বাসায় দেদারছে মদ্যপান করছে, ধূমপান করছে এবং কোম্পানির প্রেসিডেন্টকে নির্দ্বিধায় নাম ধরেডাকছে। ভাবলাম এটা কি বাংলাদেশে সম্ভব ? তৈলমর্দন করতেই চাকরি জীবন পার হয়ে যায়।

আমার আরেকটি সমস্যা হলো ভাষা নিয়ে। কোম্পানির লোকজন ইংরেজি ভালই বলে কিন্তু কোথাও গেলে কেউ এক শব্দওইংরেজি বোঝে না। আমাকে বাংলাদেশের জাপান দূতাবাস থেকে কাজ চালানোর মত তিনমাসের এক জাপানি ভাষার প্রশিক্ষণদেয়া হয়েছিল। প্রশিক্ষকের সাথে কিছুদিন জাপানিজ ভাষায় কথা বলে নিজেকে একজন বিজ্ঞ জাপানি ভাষাবিদ ভাবতে শুরুকরেছিলাম। বিপত্তি দেখা দিলো যখন বাস্তবে জাপানিদের সাথে কথা বলতে শুরু করলাম। ওরা কিতাবী ভাষায় কথা বলে না। কিছু বিষয় লক্ষ্য করলাম যেমন, সো দেসু কা? মানে “তাই নাকি” ? দেখলাম ওরা দেসু বাদ দিয়ে বলছে, সো কা ? আবার যখনগ্রাম অঞ্চলে গেলাম ওদের উচ্চারণ অনেকটা শেয়ালের ডাকের মতো। ওরা সো কা বলছে না, বলছে হোক্কা ? শুনতে মনে হুক্কাহুয়া।

একমাসে গেস্ট হাউজ পূর্ন হয়ে গেলো, বাংলাদেশ আমার দুজন সহকর্মী আর থাইল্যান্ড থেকে একজন এসেছে। ডং, নাভাই আরতাহাইয়ের সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলাম কয়েকদিনের মধ্যেই। ডং পুরোদস্তর চাইনিজ, আমার সাথে গাঢ় বন্ধুত্ব হয়ে গেলো। ওর সাথে মাঝে মাঝে ঘুরতে বের হই, সে আমার চেয়ে অনেক ভালো জাপানিজ ভাষা জানে। আমি ভেবেছিলাম সে আমার বয়সী, কিন্তু পরে জানতে পারলাম সে বিবাহিত এবং তার তিন ছেলে মেয়ে, বড় ছেলের বয়স দশ। ওদের বয়স বোঝা বেশ কঠিন।

নাভাই আর তাহাই কথা কম বলে। সারাক্ষন শুকনো, ফল, বাদাম,আখরোট চিবোচ্ছে, আর টেলিভিশন দেখছে।যখনডরমেটরিতে ফিরি রাতের খাবারের পর আমাদের আড্ডা বেশ ভালোই চলছিল। তাহাই আংকেল একদিন কথায় কথায় আমাকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কি জানো এখানে মুতা বিয়ে করার মত কোনো মেয়ে পাওয়া যাবে কি না? আমি আকাশ থেকেপড়লাম। বলে কি ! এখনো বিয়ে করা তো দূরের কথা বিয়ের কথা ভাবতেই পারি না আর উনি আছে মুতা বিয়ে নিয়ে। তাছাড়ামুতা বিয়ে কি তাও তো জানি না। আমি বললাম, মুতা বিয়ে কি? আমি তো এমন নাম শুনি নাই ! তাহাই আংকেল অবাক হয়েবললো, তাই না কি ? তারপর সে যা বললো তার অর্থ হচ্ছে, মুতা বিয়ে একটি স্বল্প সময়ের বিয়ে । অর্থাৎ কোন নারী ও পুরুষঅল্প কিছু সময়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে এমন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। তার মুতা বিয়ের বর্ণনা শুনে তার উদ্দেশ্য বুঝেফেললাম। আমরা সবাই তার প্রতি বিরক্ত হয়ে গেলাম। আমি বললাম, সাময়িক বিয়ের প্রয়োজন কি ? তুমি তো যে কোনোমেয়েকে বিয়ে করে দেশে নিয়ে যেতে পারো। তার কথায় আমি আরো হতভম্ব হয়ে গেলাম। তাহাই আঙ্কেলের স্ত্রী কন্যা পুত্রদেশে আছে তাই এখান থেকে বিয়ে করে বউ নিয়ে দেশে ফিরে যাওয়া সম্ভব না। দুর্মুজ পেটা হবার সম্ভাবনা বিদ্যমান। ওর উপরকেনো যেন আমার শ্রদ্ধা হারিয়ে গেলো। লক্ষ্য করলাম তার এ ইচ্ছার জন্য তার ভাতিজা নাভাইয়ের কোনো রকম বিরূপপ্রতিক্রিয়া নেই।

আমার মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এলো। নাভাই বাদে সবার সাথে আমার দুষ্ট বুদ্ধি নিয়ে আলোচনা করলাম। আমার এ কথায়সবচেয়ে খুশি ও উত্তেজিত হলো ডং। তাহাই আংকেল ফিরে আসার আগেই কাজটি করতে হবে। উল্লেখ্য তাহাই আংকেল অন্যশহরে যেতেন তাঁর প্রশিক্ষণের জন্য, তাই তিনি আসতেন আমাদের এক ঘন্টা পর। সপ্তাহান্তে আমরা একটি সেলুন থেকেমেয়েদের পরচুলা নিয়ে আসলাম। সোমবার বিকেলে এসে তার কোল বালিশে পরচুলা পরিয়ে লেপের নিচে এমন ভাবে রাখলামদেখে মনে হচ্ছিলো একটি মেয়ে ঘুমাচ্ছে। আমরা অপেক্ষা করছি বসার ঘরে। তাহাই আংকেল এসে ঘরে ঢুকেই বের হয়ে এলেন, তার চোখে রাজ্যের বিস্ময়! বললো, আমার ঘরে যে মেয়েটি ঘুমাচ্ছে তোমরা কি তাকে চেনো? কোল বালিশে পরচুলাকে সে মেয়েভেবে দিশেহারা। আমরা অবাক হবার ভাণ করে তার রুমে উঁকি দিলাম এবং হাসি চাপিয়ে রেখে ডঙ্গের দিকে উৎসুক নয়নেতাকালাম। কারণ ডং সবচেয়ে আগে কাজ থেকে ফেরে। ডং বেশ ভালো অভিনয় করলো। তাহাই কে বললো, জানি না তবেমেয়েটি এসে তোমার খোঁজ করছিলো আমি বললাম, তুমি ছ’ টার আগে ফের না, তখন সে তোমার রুম কোনটা জানতে চাইলেতোমার রুম দেখিয়ে দিলাম। তাহাই আংকেল দিশে হারা হয়ে তার রুমে গেলো এবং কিছুক্ষন পর রাগান্বিত হয়ে বললো, একাজটি কে করেছে ? আমরা সবাই চুপ। বেচারা হতাশ হয়ে আবার তার রুমে গেলো এবং সারারাত আর বের হন নি।

ডিসেম্বরের শেষে প্রায় সাতদিন জাপানের সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় তাই আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হলো নাগোয়ার একটিআন্তর্জাতিক হোস্টেলে। এটি জাইকা পরিচালিত চুবো সেন্টার অথবা নাগোয়া আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। বিশাল প্রতিষ্ঠান, যেখানে বিশ্বের সকল মানুষের আগমন। ওখানে পরিচয় হলো বাংলাদেশের আরো কিছু শিক্ষার্থীদের সাথে। কথাবার্তায় মনেহলো ওরা সবাই সরকারি প্রতিষ্ঠান BISF (বাংলাদেশ ইন্সুলেশন এন্ড সেনেটারি ওয়ার ফ্যাক্টরী) থেকে স্বল্প মেয়াদের প্রশিক্ষণেএসেছে। এ কারখানায় কাজের অভিজ্ঞতায় কেউ ফোরম্যান, কেউ জুনিয়র অফিসার। এ লাইনে কোনো লেখা পড়া নেই। আমিআমার পরিচয় দিলাম। ওরা আমার বস রাশেদ মাকসুদ খানকে চেনে। ওদের মধ্যে থেকে কৃশকায় তিরিশোর্ধ একজন, পরনেলাল রঙের জ্যাকেট, একধরণের টুপি দিয়ে আবৃত তার মুখমন্ডল (যাকে আমি “বান্দর টুপি” বলেই জানি ), হাতে গ্লাভস। ডরমেটরিতে হিটার আছে, তাপমাত্রা ২০/২১ ডিগ্রী। এখানে গরম কাপড় পড়ার দরকার হয় না কিন্ত সে পড়েছে। সে আমারউদ্দেশ্যে বললো, চ্যার আইন্নে বেঙ্গলে জয়েন্ট করচেন নি। আ’র বড় খায়েস ওই কমফানিত কাইম কাজ করণের। খান সাবেরলগে দেহা করণের চেষ্টা করছি হ্যাতে মাতে ন। আইন্নে বড় ওফিচার, আইর একখান ব্যবস্থা করেন না চ্যার। লোকটির নামবলেছিলো গোলাম মাওলা। ওর কথায় আমি বিব্রত হলাম দুটি কারণে, এক আমি এখনো আমার পদে যোগদান করি নি তাইআমার ক্ষমতা কতটুকু তা আমার জানা নেই। দুই, এখানে কেউ কাউকে স্যার ডাকে না, অথচ সে অনবরত আমাকে স্যারডাকছে। আমি বললাম, ভাই দয়া করে আমাকে স্যার বলবেন না। আমার দেশে ফিরতে তো অনেক দেরি আছে, আপনি বরংবাংলাদেশে গিয়ে কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করুন। সে বললো, আমি যাওনের সুম আইন্নে খান সাবরে একখান চিডিদিয়েন। আরো বিব্রতকর প্রস্তাব। আমি বললাম, ঠিক আছে এ ব্যাপারে পরে কথা হবে।

আমি ছাড়লেও সিন্দাবাদের ভুত তো আমাকে ছাড়ে না। গোলাম মাওলা আঠার মত আমার সাথে লেগে রইলো। এভাবে ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভুত নিয়েই কাটাতে হবে আরো পাঁচদিন। একদিন বিকেলে জিমে যাবার উদ্দেশ্যে করিডোর দিয়ে হাটছি, পেছনেগোলাম মাওলা। হঠাৎ ফায়ার এলার্ম বেজে উঠলো, ঘুরে তাকিয়ে দেখি গোলাম মাওলা ভীত চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আমার বুঝতে বাকি রইলো না। সে বললো, চ্যার লেখা আছে পেরেস হেয়ার (Press Here), আই পেরেস কইচ্ছি, হ্যাতে চিক্কুর মাইরচে, আইর কি দোষ ? আই কিতা করতাম। আমি দৌড়ে গেলাম রিসেপশনে, তাদের এলার্ম বাজার কারণ বুঝিয়েবললাম। রসেপশনের মেয়েটি ফলস এলার্মের ঘোষণা দিয়ে আমার সাথে উপরে এলো। ততক্ষনে বাঙালিরা গোলাম মাওলাকেঘিরে তার কৃতকর্মের জন্য বকাবকি করছে। আমি তাদের শান্ত করলাম, মেয়েটি জিজ্ঞেস করলো, তোমার নাম কি ? সে বললো, গোলাম মাওলা। জাপানিজ ভাষায় “ল” এর উচ্চারণ নেই। তাই মেয়েটি উচ্চারণ করলো গরম মাওরা। গোলাম মাওলা হতাশহয়ে আমাদের বললো, আই কিতা কই আর হ্যাতে কিতা হুনে, আ’ রে মাওরা বানাই দিচে। আই কি মাওরা নি ? অকথ্য ভাষায়গালি দিয়ে বললো, বেডি আইর মাইন ইজ্জত এক্কেরে শ্যাষ করি দিচে। কনচেন দেহি আই অহন কিতা করতাম ?

 

– বায়াজিদ গালিব, ক্যালগেরী, ক্যানাডা। রম্য লেখক





সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

 

সংবাদটি শেয়ার করুন