কানাডায় পড়তে গিয়ে লাশ হলো বাংলাদেশী মেধাবী ছাত্র সাকিব
মোঃ হাবিব ওসমান ।। কানাডায় নদী থেকে বাংলাদেশি এক তরুণ শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় সময় ২৭ জানুয়ারি ম্যানিটোবা প্রদেশের রাজধানী উইনিপেগের ‘রেড রিভার’ নামক নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে উইনিপেগ সিটি পুলিশ।
নিহত শিক্ষার্থীর নাম সামি উজ জামান (২৪)। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আসাদুল ইসলাম। তার গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায়। দুই ভাইয়ের মধ্যে সামি ছোট।
সামি ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবার কম্পিউটার সায়েন্সের স্নাতক শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি তিনি ম্যানিটোবায় বাইসন ট্রান্সপোর্ট নামের একটি কোম্পানিতে ডেটা অ্যানালিস্ট হিসেবে খণ্ডকালীন চাকরি করতেন। তিনি রেড রিভার নদীর কাছেই কয়েকজন বাংলাদেশি বন্ধুর সঙ্গে একটি অ্যাপার্টমেন্টে ভাড়া থাকতেন।
উইনিপেগ পুলিশ জানায়, গত ৯ জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন সামি। তার বন্ধুরা বেশ কয়েক দিন খোঁজে তাকে পায়নি। পরে ২০ জানুয়ারি তারা পুলিশকে বিষয়টি জানান। এর সাত দিন পর রেড রিভার থেকে তার লাশ উদ্ধার করল পুলিশ। লাশটি পুলিশের হেফাজতে আছে।
উইনিপেগ পুলিশ সামির মৃত্যুর কোনো কারণ এখনো উল্লেখ করেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে এটি একটি অপমৃত্যু।
বিষয়টি গত বুধবার রাতে ক্যানাডিয়ান পুলিশ মোবাইলে সাকিবের বাবাকে নিশ্চিত করেছেন বলে নিহতের পারিবারিকসূত্রে জানাগেছে। এদিকে মেধাবী সাকিবের এমন খবরে পরিবারের সকলে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এমন অকালে ঝরে যাওয়া সাকিব ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের উল্যা গ্রামের আছাদুজ্জান আছাদের ছোট পুত্র। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে।
নিহতের বাবা আছাদুজ্জামান মোল্যা জানান,কালীগঞ্জের নলডাঙ্গা ভূষন হাইস্কুল থেকে জেএসসি পাশের পর ঢাকার রেসিডিয়ান্সিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজে ভর্তি করেন সাকিবকে। এরপর ওই প্রতিষ্ঠান থেকেই ২০১৪ সালে বিজ্ঞান বিভাগ হতে এস,এসসিতে জিপিএ ৫। ২০১৬ সালে আই,এসসিও জিপিএ ৫ লাভ করে। এরপর আইএল টি ই এস টেস্টে উর্ত্তীর্ণ হয়ে কানাডার মালিতোবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভতি হয় সাকিব। সে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৪র্থ বর্ষের ছাত্র ছিল। কলেজ নিকটবর্তী একটি বাসার রুম ভাড়া নিয়ে থাকতো। আশপাশে কয়েকটি রুমে বাংলাভাষা-ভাষী কিছু ছেলেরা থাকতো। হঠাৎ গত ৯ তারিখ থেকে পরিবারের কারও সাথে মোবাইলে যোগাযোগ ছিল না সাকিবের। পরবর্তীতে তার বন্ধুরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে জানানোর নিখোঁজের ১৭ দিন পর ক্যানাডিয়ান পুলিশ বুধবার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের নির্জন এক লেকের পাশ থেকে সাকিবের মরদেহ উদ্ধার করে। যা বুধবার রাতেই ক্যানাডিয়ান পুলিশ মোবাইলের মাধ্যমে আমাকে নিশ্চিত করেছেন। মরদেহ এখনও পুলিশ হেফাজতে আছে। মুঠোফোনে আমাকে শুধু এতটুকু বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ২ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে হাসিবুজ্জামানকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করিয়েছেন। ভাইয়ার মত সাকিবও বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে এমন সখ থেকে তাকে ক্যানাডায় পাঠিয়েলিাম। এখন আমার সব শেষ । বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এস এস/সিএ