বিয়ের আসরে ইয়াশরিকা জাহরা হক এবং এলিকা রুথ। (সংগৃহীত ছবি)
নিউইয়র্কে বাংলাদেশি লেসবিয়ান ইয়াশরিকার বিয়ে নিয়ে যত কথা
বহুজাতিক এ সমাজে বাংলাদেশিরা নিজ সংস্কৃতির মধ্যে কতটা থাকতে সক্ষম হচ্ছেন-এমন প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সম্প্রতি এক প্রবাসী তরুণীর বিয়ের সংবাদ ঘিরে। উচ্চ শিক্ষিত এবং কর্মজীবী এ নারীর বিয়ে হয় বাঙালি রীতি অনুযায়ীই। তবে তা কোনো পুরুষের সাথে নয়। প্রায় সমবয়সী আরেক শিক্ষিত রমনীর সাথেই।
গত বছরের (২০১৯) ৭ জুন বাংলাদেশি কায়দায় ইয়াশরিকা জাহরা হক (৩৪) তার পছন্দের নারী সমকামী (লেসবিয়ান) এলিকা রুথ কুকলিকে (৩১) বিয়ে করেন। জানা গেছে, ইয়াশরিকাই প্রথম বাংলাদেশি লেসবিয়ান নারী যিনি উত্তর আমেরিকায় ভালোবেসে আরেক লেসবিয়ান নারীকে বিয়ে করলেন।
বাংলাদেশি মুসলিম সম্প্রদায়ের ইয়াশরিকা জাহরা হকের বাবার নাম ইয়ামিন হক, মা ইয়াসমিন হক। তারা বসবাস করেন সাউথ ডেকটার র্যাপিড সিটিতে।জানা যায়, ২০১৯ সালের ৭ জুন নিউইয়র্ক সিটির ম্যারিজ রেজিস্টার অফিসে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার দুদিন পর ৯ জুন ব্রুকলীনে একটি পার্টি হলে বাঙালি আমেজে ঘটা করে বিবাহ-অনুষ্ঠান হয়। ৫ লাখ ডলারেরও অধিক ব্যয়ের এ বিয়ে সম্পর্কে প্রবাসীরা তেমন খোঁজ না পেলেও বিশ্বখ্যাত নিউইয়র্ক টাইমস ফলাও করে তা প্রকাশ করেছে।
সমকামী (লেসবিয়ান) যে মুসলিম সম্প্রদায়, বিশেষ করে বাঙালি সমাজেও বিস্তৃত হয়ে পড়েছে সেটি জানান দিতেই সম্ভবত: নিউইয়র্ক টাইমস ফিচার আইটেম করতে দ্বিধা করেনি।
উল্লেখ্য, এটিতো নারীর সাথে নারীর বিয়ে, এর বাইরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুবকেরাও অন্য যুবককে বিয়ে করেছেন। আবার কেউ কেউ সমকামী (লেসবিয়ান) হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতেও কসুর করছে না। তথ্য-প্রযুক্তির সুবাদে সমকামীরাও নিজস্ব একটি গন্ডি রচনায় সক্ষম হচ্ছে। রাজনৈতিকভাবেও তারা যথেষ্ঠ শক্তিশালী। দিন যত যাচ্ছে সমকামী/লেসবিয়ানরাও সুসংগঠিত হচ্ছে এবং সামাজিকভাবে বিষয়টিকে স্বাভাবিক দৃষ্টির মধ্যে আনতে সচেষ্ট রয়েছে।
এই বিয়ে প্রসঙ্গে নিজের অনুভূতি ব্যক্তকালে ইয়াশরিকা নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ২০১৫ সালে ব্রুকলীনের এপার্টমেন্টে দুরুদুরু চিত্তে একটি পার্টি দিয়েছিলাম। সেটির আমন্ত্রণ জানাই ফেসবুকে। সেখানেই টেক্সাস থেকে এসেছিলেন এলিকা রুথ কুকলি (৩১)। আরও অনেকের মধ্যে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। আমার মনে হয়েছে, ‘কুকলি আমাকে তার নিজের মধ্যে আবৃষ্ট করেন চুম্বকের মতো। অসম্ভব একটি মানবিক গুণের অধিকারি তিনি। তার কাছে নিজেকে সঁপে দেয়া যায় বলেই মনে করেছি। এরপর আরেকটি পার্টিতে তাকে আমন্ত্রণ জানাই এবং আরও গভীরভাবে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকি। এভাবেই সবকিছুতে তাকে আমার জন্যে অত্যন্ত নির্ভরতার একজন বলে মনে হয়েছে।’ আমি তাকে বিয়ে করলাম মানবিক গুণসম্পন্ন একজন মানুষ হিসেবে।’
নিউইয়র্কে ইয়াশরিকার বিয়ে নিয়ে যত কথা জানতে গিয়ে জানা যায়, ইয়াশরিকা জাহরা হক ওয়াশিংটনের জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। তারপর ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন। বর্তমানে নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটানের ফিনউইক এ্যান্ড ওয়েস্ট নামক একটি ল’ ফার্মে অ্যাসোসিয়েট হিসেবে কাজ করছেন। জাতিগতভাবে বাঙালি-আমেরিকান ইয়াশরিকা হক বিয়ে করেছেন মার্কিন তরুণী এলিকা রুথ কুকলিকে। সানএন্টনিয়োতে টেক্সাস ইউনিভার্সিটি থেকে অডিওলজিতে গ্র্যাজুয়েশনের পর পিএইচডি করেছেন ডালাসে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস থেকে। তিনি কাজ করছেন ম্যানহাটানেরই একটি অডিওলজিক্যাল সার্ভিস কোম্পানীতে।
ইয়াশরিকার বান্ধবী বাঙালি তরুণী মাহিন কলিমের সহযোগিতায় ব্রুকলিনের ২৪০ কেন্ট এভিনিউ’তে ‘দ্য ওয়েস্ট লোফ্ট’ পার্টি হলে ৯ জুনের জমকালো ওই বিয়ে পার্টিতে ইয়াশরিকার পরনে ছিল লাল টুকটুকে বেনারসি। অর্নামেন্টস পয়েন্টে নানন্দিক সোনার গহনা। দু’হাতের কনুই থেকে হাতের তালু পর্যন্ত মেহেদির আলপনা। বাঙালি কালচারে ন্যূনতম কমতি ছিল না। এলিকা রুথের পরনে ছিল অফ হোয়াইট কালার শেরওয়ানি, লাল পাজামা। দু’হাতে মেহেদির নকশা। গলায় মুক্তার মালা। অতিথির প্রায় সকলেই ছিলেন উচ্চবিত্তের সমকামীরা। আনন্দ-উল্লাসে মেতে সকলে খাবার গ্রহণ করেছেন।