‘বাংলাদেশে জন্ম নেয়াটাই ছিল আমাদের আজন্ম পাপ’ উল্লেখ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন চায়না থ্রি গরজেস বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মুরাদ।
তিনি লিখেছেন, ‘অনেক কন্ট্রোভার্সি ক্রিয়েট হচ্ছে হুবেইতে থাকা বাকি ১৭১ জন স্টুডেন্টকে ফিরিয়ে নেয়া নিয়ে। আসুন এটি পরিষ্কার করা যাক। ইছাং হুবেই প্রদেশের একটা শহর। উহানের প্রতিবেশি শহর বলা যায়। উহান যেদিন থেকে লকডাউন, ইছাংও সেদিন থেকে লকডাউন। এখন এখানে থাকা আমরা দুদিক থেকেই সমস্যাই আছি। লকডাউনের জন্য নিজে টিকেট কেটে দেশে যেতে পারছি না, একদম সরাসরি এপিসেন্টার না হওয়ায় সরকার আমাদেরকে গুরুত্বই দিচ্ছেনা।’
আমাদের শহরে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এম্বাসিতে আমরা যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের কিছুদিন আশ্বাস দিয়েছেন, লিস্ট নিয়েছেন। এরপরে সুর পাল্টেছেন। তাদের নাকি ফান্ড নেই।
আমাদের সমস্যা শুধু ভাইরাস না। ভাইরাসের থেকে বড় সমস্যা খাবার। আগে অনুমতি নিয়ে বাইরে গিয়ে কেনাকাটা করতে পারলেও ১ সপ্তাহ আগে থেকে ডর্মেটরি সিলড অফ। কোনভাবেই বাইরে যাওয়া সম্ভব না।
এক্ষেত্রে ভার্সিটি কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। ক্যান্টিন থেকে খাবার অর্ডার করা যায়, একটা গ্রুপকে খাবার অর্ডার করলে তারা ডেলিভারি দিবে। এই খবরটা শুনেই এম্বাসি বলে দিয়েছে খাবার নিয়ে আমাদের সব অভিযোগ মিথ্যা।
আসলে জিনিসটা লিখিত ভাবে যত সহজ শোনাচ্ছে বাস্তবে এতটাও সহজ না। ক্যান্টিন থেকে যেসব খাবার দেয় সেখানে দাম অনেক বেশি। সবচেয়ে বড় সমস্যা চাইনিজ খাবার, অনেকে মুখেই নিতে পারিনা। খাবারের গন্ধ কেউ সহ্য করতে পারেনা।
এদিকে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন চায়নাতে আমাদের চিকিৎসা ভালো হবে। দেশে না যেতে। মাননীয় স্বাস্থমন্ত্রী, আমরা কেউ এখনো আক্রান্ত হইনি। এখনই চিকিৎসার ব্যাপার কেন আসছে? এইটা কোন ধরনের গোঁজামিল! সুস্থ থাকা অবস্থায় দেশে নেবার ব্যবস্থা না করে অসুস্থ হবার পর ভালো চিকিৎসা দেখানো হচ্ছে!
ভারত, মরোক্কো, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কান বন্ধুদেরকে দেশে ফিরে যেতে দেখলাম। আফ্রিকার কয়েকটি দেশও তাদের স্টুডেন্ট ফিরিয়ে নিয়েছে। আমরা বাংলাদেশিরাই কয়েকজন আফ্রিকানের সাথে এখানে আছি।বারবার এম্বাসি থেকে ফান্ডের কথা শোনানো হয়। সত্যিই এই দেশ বিপদের সময়ে ১৭১ স্কলারদের দেশে ফেরাতে পারছেনা ফান্ডের অভাবে! দ্যাটস আ শেইম!
সবকিছু ভুলেই আমরা তাকিয়ে আছি প্রধানমন্ত্রী আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে। তারাও যদি আমাদের সুস্থ অবস্থায় না ফিরিয়ে অসুস্থ হওয়ার পর চীনের উন্নত চিকিৎসার কথা শুনায়, তাহলে মারা যাবার পর যেন আমাদের এপিটাফে লেখা হয়, ‘বাংলাদেশে জন্ম নেয়াটাই ছিল আমাদের আজন্ম পাপ’ ।