করোনায় ২২ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে আমেরিকায়, ব্রিটেনে ৫ লাখ!
করোনায় ২২ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে বিশ্বে ! বিশ্বজুড়ে মহাবিপর্যয় সৃষ্টি করেছে কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস। এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় দুই লাখ মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার। আশ্চর্য ক্ষমতাধর এই ভাইরাসের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকা এবং ব্রিটেন। দিন দিন বেড়েই চলেছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এমনই দাবি করছে ব্রিটেনের এক গবেষণা।
ওয়ার্ডো মিটার ইনফোর দেওয়া হালনাগাদ তথ্য মতে যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৫২৪ জন, মৃত্যু হয়েছে ১১৬ জনের। ব্রিটেনে বর্তমান আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৯৫০ জন, মৃত্যু হয়েছে ৭৭ জনের।
সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই গবেষণা অনুযায়ী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আমেরিকায় ২২ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। ব্রিটেনে মারা যেতে পারে ৫ লাখ মানুষ।
গবেষণাটি করেছেন লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ম্যাথেমেটিক্যাল বায়োলজির প্রফেসর নীল ফার্গুসনের নেতৃত্বাধীন একটি দল। গত কয়েক দিনে ইতালিতে করোনা ভাইরাসের প্রভাবের তথ্য নিয়ে এই গবেষণা করা হয়েছে।
জানা গেছে, এই গবেষণায় ১৯১৮ সালের মারাত্মক ফ্লু’য়ের সঙ্গে বর্তমানে কোভিড ১৯-এর প্রভাবে ছড়ানো মহামারির তুলনা করে দেখা হয়েছে। তাতে গবেষকরা জানিয়েছেন, যদি এখনই আরও বেশি করে সুরক্ষার পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ব্রিটেনে মৃত্যু হতে পারে ৫ লাখ মানুষের। সংখ্যাটা আমেরিকার জন্য আরও বেশি। সেখানে ২২ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে এই ভাইরাসের প্রকোপে।
গবেষণায় আরও জানা গেছে, এই মুহূর্তে ব্রিটেন ও আমেরিকার সরকার আক্রান্তদের আইসোলেশনে রাখলেও সামাজিক স্তরে দূরত্ব বাড়ায়নি। ফলে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটাই দেখা গেছে ইতালিতে। এর ফলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে বলেই তাঁদের ধারণা।
সেই সঙ্গে গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, যদি এখনই সব আক্রান্ত মানুষকে একেবারে কোয়ারেন্টাইনে রাখা যায় এবং ক্লাব,পাব, থিয়েটার,মার্কেটে যাওয়া থেকে মানুষকে আটকানো যায় তাহলে এই মৃত্যুর হার অবশ্যই কমানো সম্ভব হবে।
গবেষণার সঙ্গে যুক্ত প্রফেসর আজরা ঘানি জানিয়েছেন, ‘এই ভাইরাস আমাদের সমাজ ও অর্থনীতির উপর বিরাট প্রভাব ফেলতে চলেছে।’ আর এক গবেষক টিম কলবোর্ন জানিয়েছেন, ‘খারাপ সময় আসছে। গবেষণা কিন্তু সাংঘাতিক ইঙ্গিত দিচ্ছে।’
সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই গবেষণা সামনে আসার পরেই পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে ব্রিটেনের সরকার। বিশেষজ্ঞদের কথা অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় এই কাজ চলছে। সরকারের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘আমরা গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের কথা অনুযায়ী চলছি। আমরা যে রকম ভেবেছিলাম তার থেকে অনেক বেশি পরিমাণে ও তাড়াতাড়ি সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
এর আগে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সমালোচনা করেছিল ব্রিটেনের একাধিক সমাজসেবী সংস্থা। তাদের দাবি ছিল, করোনা মোকাবিলায় অন্য অনেক দেশ যেরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা দেখা যাচ্ছে না ব্রিটেনে। ইতালি, ফ্রান্স, স্পেনের মতো দেশে এই ভাইরাসের ভয়াবহতা দেখে ব্রিটেন সরকারের উচিত ছিল অনেক আগে থেকে এই বিষয়ে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া। একই সমালোচনা রয়েছে আমেরিকার ক্ষেত্রেও।
লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ডিরেক্টর পিটার পিয়ট আবার জানিয়েছেন, ব্রিটেন এতদিন যা ব্যবস্থা নিয়েছে তা সবই প্রমাণ নির্ভর। এটা করা হয়েছে জনগণের স্বাস্থ্য এবং সামাজিক যোগাযোগের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য বজায় রাখার জন্য। তিনি বলেন, ‘আমরা এই করোনা ভাইরাসের সম্পর্কে খুব একটা বেশি জানি না। তাই প্রতি মুহূর্তে যেভাবে এই ভাইরাসের প্রভাব দেখা যাচ্ছে, সেই অনুযায়ী এটা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’