ফিচার্ড লেখালেখি

একটি সাহসী কণ্ঠের ইতি

একটি সাহসী কণ্ঠের ইতি

শামীমুল হক।। কষ্টের চাদরে ঢেকে গেছে মনটা। শরীরটা থমকে আছে। বেশ খানিকক্ষণ। সম্বিত ফিরে- মুখে অস্পষ্ট আওয়াজ পীর হাবিবও চলে গেলেন? তার এ চলে যাওয়া যে বড্ড অকালে। চোখের সামনে ভেসে আসছে একের পর এক স্মৃতি। দেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক, সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর হাত ধরে মিডিয়া জগৎকে আলোকিত করেছেন যারা- তাদেরই একজন পীর হাবিবুর রহমান। শুধু তাই নয়, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়ও পীর হাবিবের এগিয়ে চলা মতিউর রহমান চৌধুরীর মাধ্যমেই। আর পীর হাবিব এটি উঁচু গলায় বলতেন।

তার লেখার মাধ্যমেও বিষয়টির জানান দিয়েছেন একাধিকবার। পীর হাবিব সময় পেলেই ছুটে আসতেন মানবজমিন কার্যালয়ে।
১৯৯২ সাল। গ্রীন রোডের ছোট্ট দু’তলা বাড়িটিতে বাংলাবাজার পত্রিকার কার্যক্রম শুরু হয়। ভিন্ন ধারা এবং সাংবাদিকতায় বৈচিত্র্য আনা এই বাংলাবাজার পত্রিকা তখন দেশজুড়ে আলোচনায়। পীর হাবিব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। লেখালেখির শুরু সেখান থেকেই। ছিলেন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। পড়ালেখা শেষ করে চলে আসেন ঢাকায়। এরই মধ্যে একদিন পীর হাবিব বাংলাবাজার পত্রিকায় রিপোর্টার হিসেবে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন। আচমকা এ যোগ দেয়ার পেছনের খবর হলো-
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে সুনামগঞ্জ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পীর হাবিব। এর আগে একদিন বাংলাবাজার পত্রিকা কার্যালয়ে এলেন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে পরিচিত হতে। সেই দিনই সাংবাদিকতা শুরু বাংলাবাজার পত্রিকায়। অল্পদিনেই তার কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করে দেন তিনি একদিন অনেকদূর যাবেন। গিয়েছিলেনও। কিন্তু গতকাল বিকালটা আমরা যারা তাকে জানি তাদের জন্য বিষাদময় হবে এটি ছিল কল্পনার বাইরে। আগের দিনই খবর পাই তিনি স্ট্রোক করেছেন। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মরণব্যাধি ক্যান্সার তো বহন করছিলেন বেশ আগে থেকেই। তার কলমে বহু আলোচিত রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। দেশব্যাপী ঝড় তুলেছে তার বহু রিপোর্ট। পীর হাবিব সবসময় সাদাকে সাদা বলতেন, কালোকে কালো। এজন্য তাকে অনেক সময় বিপদের মুখোমুখিও হতে হয়েছে। বাংলাবাজার পত্রিকায় পাশাপাশি চেয়ারে বসে কাজ করতাম আমরা। সে সময় তিনি রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন বিটে কাজ করেছেন। বিশ্বকাপ চলাকালে স্পোর্টসেও কাজ করেছেন তিনি। বাংলাবাজার পত্রিকা থেকে আরও ক’টি মিডিয়া হাউজে কাজ করেছেন। সর্বশেষ ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক। সত্য কথা সাহস করে বলায় তার কলাম পাঠকের মনে জায়গা করে নেয়। সারা দেশেই তার ভক্ত তৈরি হয়। টেলিভিশন টকশোতেও তিনি ছিলেন সরব। এমন এক সময় তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন- যখন তার মতো লেখকের খুব প্রয়োজন ছিল। দেশের জন্য, জাতির জন্য। পীর হাবিব আর নেই। শোকাহত মিডিয়া পাড়া। শোকাহত তার পরিবার। স্বজন। বিশেষ করে তার পরিবারকে এ শোক সইবার শক্তি দিক মহান সৃষ্টিকর্তা।
শনিবার বিকালে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পীর হাবিবুর রহমানের মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। করোনা পরবর্তী জটিলতা নিয়ে তিনি ওই হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ে সুস্থ হয়ে ওঠা পীর হাবিব সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। ভাইরাস থেকে সেরে উঠলেও তার শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্ট্রোক করলে তাকে ল্যাবএইডে স্থানান্তর করা হয়। পীর হাবিবুর রহমানের মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পীর হাবিবের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
আজ সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য পীর হাবিবুর রহমানের লাশ রাখা হবে। সেখান থেকে বেলা সাড়ে ১২টায় মরদেহ নেয়া হবে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে। সেখানে জানাজা শেষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে হবে দ্বিতীয় দফা জানাজা। এরপর পীর হাবিবের মরদেহ নেয়া হবে তার সর্বশেষ কর্মস্থল বাংলাদেশ প্রতিদিন কার্যালয়ে। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, জন্মস্থান সুনমাগঞ্জে জানাজা শেষে সেখানেই দাফন করা হবে বর্ষীয়ান এই সাংবাদিককে।
গত বছরের অক্টোবরে মুম্বইয়ের একটি হাসপাতালে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের মাধ্যমে ক্যান্সারমুক্ত হন পীর হাবিব। গত ২২শে জানুয়ারি তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। এরপর তিনি ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হন।
কোভিডমুক্ত হলেও কিডনি জটিলতার কারণে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় স্ট্রোক করলে তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সুনামগঞ্জে জন্ম নেয়া পীর হাবিবের ছোট ভাই জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান। বাংলাদেশ প্রতিদিনে যোগ দেওয়ার আগে পীর হাবিব যুগান্তর, বাংলাবাজার পত্রিকায় কাজ করেছেন। এছাড়া অনলাইন সংবাদ মাধ্যম পূর্বপশ্চিম এর সম্পাদনাও করেছেন কিছুদিন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন পীর হাবিব। পরে যুক্ত হন সাংবাদিকতায়। রাজনীতি বিষয়ক রিপোর্ট লিখে তিনি খ্যাতি পেয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর শোক: পীর হাবিবুর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। এক শোকবার্তায় তিনি বলেছেন, পীর হাবিবুর রহমানের মৃত্যু দেশের গণমাধ্যম জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। দেশে সাংবাদিকতার উন্নয়ন ও প্রসারে তিনি যে ভূমিকা রেখেছেন সংবাদকর্মীরা তা চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবেন। প্রেসিডেন্ট প্রয়াত পীর হাবিবের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শোকবার্তায় পীর হাবিবের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

 


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

 

 

সংবাদটি শেয়ার করুন