গুরু সর্বদা শ্রদ্ধার; শিষ্যের কাছে ঈশ্বরসম ।।।। অভ্র বড়ুয়া
গতকাল সকালে ক্লাসের ফাঁকে ছোট্ট বিরতিতে আমার সম্মানিত শিক্ষকের সাথে কথা হচ্ছিল, তিনি যেমন অসাধারণ পড়ান তেমনি অসাধারণ গীটার বাজান।গীটারের জাদুকর বললে ভুল হবে না।ভারতের শিলিগুড়িতে রয়েছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্বনামধন্য ব্যান্ডদল। কত শিল্পী তিনি তৈরি করেছেন। ভালোবাসেন পড়াতে, ভালোবাসেন গীটার শেখাতে।তিনি শুধু একজন শিক্ষক নয়, পথপ্রদর্শক ও বটে।
স্যার বলছিলেন—“আজ থেকে প্রায় ৮-৯ বছর আগের কথা। তখন তিনি গীটার শেখাতেন বাড়িতে,তাঁর কাছে একটা ছেলে গীটার শিখতে আসত। বহুদিন যাবৎ, ধরে গীটার শিখছিল।ছেলেটির গীটার শেখার প্রতি যেমন আগ্রহ ছিল,তেমনি অগাধ ভালোবাসা।একদিন হঠাৎ করে বলা শুরু করলো “এই গানটা তুলে দিন,গীটারে এই নোট টা তুলে দিন, গীটারে অনেক গান তুলতে হবে।”
স্যার বললেন– “না আমার আপত্তি রয়েছে, কেন রয়েছে সেটা তুই বুঝে নেয়, তোর বোঝার ক্ষমতা রয়েছে’,আমি বলব না।”
ছেলেটি– স্যারকে অসম্মানজনকভাবে, দু’চারটি কথা শুনিয়ে বাজে মন্তব্য করে বের হয়ে যায় স্যার ভীষণ কষ্ট পান, তবে কখনই সে ছেলেটির অমঙ্গল কামনা করেনি।
দীর্ঘ কয়েকমাস কেটে যায় সময়ের স্রোতধারায়—
সেই ছেলেটির মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে। একদিন রাত ৩:১০। স্যার ঘুমাচ্ছিলেন এমন সময় মোবাইলে ফোন আসল স্যার এর। চিন্তিত হয়ে স্যার ফোনটা তুললেন,বললেন “কীরে হঠাৎ এত রাতে তোর আমাকে মনে পড়ল আজ?
“কাঁপা স্বরে হিমশীতল শীতের রাতে ছেলেটি কাঁপা গলায় স্যারকে জিজ্ঞেস করলো–“কেমন আছেন স্যার?কী করছেন স্যার?”
স্যার বললেন “ভালো,কোন ভদ্র লোকের বাড়িতে এমন অসময়ে কেউ ফোন করে? বল কী হয়েছে?”
ছেলেটি বললো– “স্যার একবার বাসার নিচে আসুন, আমি গেইটে দাঁড়িয়ে আছি”
স্যার বলেলেন– “এত রাতে?” কারণ স্যার এর বাড়ির পাশেই হাসপাতাল স্যার ভেবেছিলেন ছেলেটির পরিবারের কেউ হয়ত অসুস্থ।
দ্রুত স্যার গায়ে কাপড় জড়িয়ে নেমে আসেন বাসার নিচে। গিয়ে দেখেন সে ছেলেটি এমন শীতের রাতে পাতলা গেঞ্জি গায়ে শাল গায়ে জড়িয়ে তার বাবার স্কুটি নিয়ে হাজির স্যার এর বাসায়।স্যার তাকে বাসায় নিয়ে গেলেন।
জিজ্ঞেস করলেন-“কীরে কোন বিপদ হলো নাকি,বাড়ির সবাই ভালো?”
ছেলেটি হঠাৎ হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে স্যার এর পায়ে লুটোপুটি খেতে থাকে,কোনভাবেই স্যার ছেলেটিকে থামাতে পারছিলেন না।
স্যার তাকে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।হঠাৎ করে সে ছেলেটি স্যার এর গীটার এর রুমে ঢুকে গীটার টা বুকে নিয়ে ক্ষমা চেয়ে বলে “গুরু বুঝতে পারে নিই আমি,অল্প শিখেই ভেবেছি অনেক শিখে গেছি,আপনাকে অপমান করে যে আমি অভিশপ্ত হলাম,শুধু আপনাকেই নয় আমার এই ভালোবাসার,শখের গীটারকেও অপমান করেছি আমি। কোন গীটার এর নোট তুলতেই পারি না সহজে এখন”
স্যার বললেন “দেখ তোর মধ্যে যে উপলব্ধি এসছে,তাতেই সন্তুষ্ট আমি।সংগীত,নৃত্য,আবৃত্তি,যন্ত্ রসংগীত এসবই গুরুমুখী বিদ্যা” আমি চেয়েছি তোকে যা শেখাতাম তা তুই প্রতিনিয়ত অনুশীলন করে নিজেকে সেরার সেরা করে তোল।তারপর তোর মধ্যে আপনাআপনি সব আয়ত্বে চলে আসবে”
“অনেক রাত হয়েছে বাড়ি যা,কাল সন্ধ্যায় আমরা বসব গানের আড্ডায়।কাঁদিস না।আমি কিছু মনে করি নিই। তোর মঙ্গল হোক।”
একদিন হোক বা দুদিন আপনার কাছে আপনার সে শিক্ষক বা গুরু সারাজীবনের জন্য আপনার গুরু।তার দেখানো জ্ঞানের আলোয় আপনি কিছুটা হলেও আলোকিত হয়েছেন। গুরুকে কষ্ট দেওয়ার মতো মহাপাপ আর নেই।আমরা সবকিছু খুব সহজে শিখে নিজেদের বিখ্যাত করে ফেলতে চাই, সেটা আমাদের বড় করে না বরং ছোট করে। সবকিছুর একটা সময় আছে।
একটা গাছে ফুল হঠাৎ করে হয় না, ছোট্ট মুকুল থেকে তাকে অনেক ধাপ পাড় করে ফুল হয়ে উঠতে হয়। গুরু ঈশ্বরসম।
এসএস/সিএ