দেশের সংবাদ

৭ বছরে ২৪৫০ বিঘা জমির মালিক বরকত–রুবেল দুই ভাই

বরকত–রুবেল দুই ভাই

৭ বছরে ২৪৫০ বিঘা জমির মালিক বরকত–রুবেল দুই ভাই!

ফরিদপুরের সেই দুই ভাই সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেলের নেশা ছিল জমি দখল। যে জমিই পছন্দ হতো, নামমাত্র দামে তাঁরা নিয়ে নিতেন। জমির মালিক বিক্রি করতে না চাইলে ভয় দেখিয়ে দখল করে নেওয়া হতো। এ কাজে তাঁদের যেমন সন্ত্রাসী বাহিনী ছিল, তেমনি পুলিশ বাহিনীকেও কাজে লাগাতেন। প্রয়োজনে জমির মালিককে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করাতেন। এভাবে সাত বছরে তাঁরা ২ হাজার ৪৫০ বিঘা জমির মালিক হয়েছেন। ঢাকায় মানি লন্ডারিং আইনের মামলায় গ্রেপ্তারের পর সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা বলেছেন দুই ভাই।

মানি লন্ডারিং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, বরকত ও রুবেল জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, তাঁদের হাতে টাকা এলেই জমি কিনে রাখতেন। সেই জমি বিভিন্ন ব্যাংকে বন্ধক দিয়ে ঋণ নিতেন। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির টাকা এভাবে বৈধ করার চেষ্টা করতেন।

সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, দুই ভাইয়ের নামে যে প্রায় আড়াই হাজার বিঘা জমি কেনা হয়েছে, তার বেশির ভাগই ফরিদপুর শহর ও আশপাশের। শুধু জমি নয়, তাঁদের নামে পাওয়া গেছে ৪৯টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য। এসব হিসাবে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। তবে এসব হিসাবে বড় অঙ্কের কোনো অর্থ গচ্ছিত পায়নি সিআইডি। জমানো টাকা সম্ভবত আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

মানি লন্ডারিং মামলায় বরকত-রুবেল ছাড়া আরও জবানবন্দি দিয়েছেন ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার ওরফে লেবী, জেলা শ্রমিক লীগের কোষাধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন, শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ফারহান ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিশান মাহমুদ ওরফে শামীম। সবার জবানবন্দিতে উঠে এসেছে এত কম সময়ে কীভাবে তাঁরা বিপুল সম্পদের মালিক হলেন তার বিবরণ। সে বিবরণ যেকোনো গল্পকে হার মানাবে।

ছয়জনের জবানবন্দিতেই একজন ‘গডফাদার’–এর নাম এসেছে। যাঁর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তাঁরা ফুলেফেঁপে উঠেছেন। টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি—সব কাজের জন্য গডফাদারকে দিতে হয়েছে ২ শতাংশ হারে কমিশন।

আলোচিত এই গডফাদার হলেন সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খন্দকার মোহতেশাম হোসেন ওরফে বাবর। ফরিদপুরের রাজনীতিকে কলুষিত করতে বহিরাগতদের আগমন ঘটেছিল তাঁরই হাত ধরে।

মোহতেশাম হোসেন বাবর অবশ্য দেড় বছর ধরে ফরিদপুরে যান না। কেন যান না, তা নিয়ে নানা গল্প আছে। তবে ফরিদপুরে না গেলেও ঢাকায় বসে কলকাঠি নাড়তেন, কমিশনও নিতেন তিনি। বরকত-রুবেল সিআইডির কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, ‘বাবর চাচা’কে কমিশন না দিয়ে কাজ করা যেত না।

এ ব্যাপারে জানতে গত শুক্র ও শনিবার কয়েক দফা মোহতেশাম হোসেনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। এর আগে দুই দফা তাঁর সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। তিনি বলেছিলেন, করোনার কারণে তিনি বাসার বাইরে বের হন না। আবার বাড়িতে কাউকে আসতে দেন না। সে সময় টেলিফোনের কথোপকথনে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, রাজনীতিতে তাঁর কিছু ভুল ছিল। এসব তিনি ইচ্ছা করে করেননি।

হঠাৎ কেন শুদ্ধি অভিযান

ফরিদপুরের রাজনীতিতে আজকের যে পরিবর্তন, তা শুরু হয় আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলার পর। গত ১৬ মে রাতে এই হামলা হয়। হামলার ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের একটি অংশ জড়িত। এ অংশের সদস্যরা অন্য দল থেকে এসে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে ফরিদপুরে শুরু হয় শুদ্ধি অভিযান।

সেই অভিযানে গত ৭ জুন প্রথম গ্রেপ্তার হন বরকত–রুবেল। বড় ভাই সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বরকত গ্রেপ্তারের সময়ও ছিলেন শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আর ছোট ভাই ইমতিয়াজ হাসান ওরফে রুবেল একটি পত্রিকার মালিক হয়ে প্রভাব খাটাতে থাকেন।

দুই ভাই ধরা পড়ার পর একে একে গ্রেপ্তার হন শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার ওরফে লেবী, শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান ওরফে মামুন, জেলা শ্রমিক লীগের কোষাধ্যক্ষ বিল্লাল হোসেন, শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসিবুর রহমান ফারহান, ফরিদপুর পৌরসভার বর্ধিত ২৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান, শহর আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক বন্যা মণ্ডল, কোতোয়ালি স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমান, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নারায়ণ চক্রবর্তী, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিশান মাহমুদ ওরফে শামীমসহ ১৮ জন। তাঁদের বিরুদ্ধে মোট ১১টি মামলা হয়। একটি মামলা করে সিআইডি সদর দপ্তর। মানি লন্ডারিং আইনের সেই মামলার পর সিআইডি বরকত-রুবেলের বাড়ি, গাড়ি, পরিবহন প্রতিষ্ঠান, হোটেল, রেস্টহাউস থেকে শুরু করে সব স্থাপনা ও যানবাহন জব্দ করে। ১১টি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ১৮ জনের সবাই ফরিদপুর ও ঢাকার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সূত্রঃ প্রথম আলো

বাঅ/এমএ


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন