জানা অজানা ফিচার্ড

ভার্জিন গ্রুপ: ১০০ পাউন্ডে যাত্রা শুরু যে সাম্রাজ্যের

ভার্জিন গ্রুপ: ১০০ পাউন্ডে যাত্রা শুরু যে সাম্রাজ্যের

ভার্জিন গ্রুপ। বিশ্বের বিস্ময়কর এক ব্যবসায়িক গ্রুপ। মায়ের কাছ থেকে নেয়া ১০০ পাউন্ড দিয়ে ১৯৭০-এর দশকে এত্ত বিশাল প্রতিষ্ঠানের সূচনা করেছিলেন প্রতিষ্ঠাতা স্যার রিচার্ড ব্রানসন। এখন তার ভার্জিন গ্রুপ শুধু একটি গ্রুপই নয়, একটি সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে। এর প্রধান হয়ে রাজত্ব করছেন ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী রিচার্ড ব্রানসন। তার জীবনে সফলতা অসংখ্য। তিনি একাধারে ব্যবসায় ম্যাগনেট হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে বিনিয়োগকারী, লেখক, ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা।

এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৪০০ কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করে তার ভার্জিন গ্রুপ। শৈশবেই তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন এডভেঞ্চার। একজন উদ্যোক্তা হবেন তা তার মনের ভিতর গেঁথে ছিল।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯৬৬ সালে তিনি প্রথম ব্যবসা শুরু করেন ‘স্টুডেন্ট’ নামে একটি ম্যাগাজিনের মধ্য দিয়ে। ১৯৭০ সালে মেইল-অর্ডার রেকর্ড ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেন। ভার্জিন রেকর্ডস নামে রেকর্ড স্টোরের একটি চেইনস্টোর খোলেন। পরে ১৯৭২ সালে তা পরিচিত হয় ভার্জিন মেগাস্টোরস নামে। ১৯৮০র দশকে ব্রানসনের ভার্জিন ব্রান্ডের নাটকীয় উন্নতি ঘটে। তিনি চালু করেন ভার্জিন আটলান্টিক এয়ারলাইন, বিস্তৃত করেন ভার্জিন রেকর্ডসের মিউজিক লেবেল। ২০০৪ সালে মহাকাশ বিষয়ক ভার্জিন গ্যালাকটিক করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এর ঘাঁটি ক্যালিফোর্নিয়ার মোহাভে এয়ার অ্যান্ড স্পেস পোর্টে। ২০০০ সালের মার্চে উদ্যোক্তা সার্ভিসের কারণে বৃটেনের বাকিংহাম প্যালেস থেকে তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ২০০৭ সালে বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ মানুষের তালিকায় উঠে আসেন ব্রানসন। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে ফোরবস ম্যাগাজিনের হিসাবে তার নেট সম্পদের পরিমাণ ৬৫০ কোটি ডলার।

কিভাবে একজন স্কুলপড়ুয়া বালক বিশ্ব কাঁপানো একজন উদ্যোক্তা, ধনীতে পরিণত হলেন? এমন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ব্রানসন নিজে। তিনি বৃটেনের একটি অনলাইন ট্যাবলয়েড পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। ব্রানসন বলেছেন, আমার যখন ১১ বছর বয়স, তখনই আমি ‘বাগিস’ নামের পাখি আর ক্রিসমাস ট্রি বিক্রি শুরু করি। আমার মা ইভ জানুয়ারিতে ৯৬ বছর বয়সে মারা গেছেন। তার কাছে সব সময়ই প্রজেক্ট চলমান রাখার জন্য কিছু অর্থ থাকতো। তার মধ্যে যে উদ্যোক্ত মানসিকতা ছিল তা আমার ভিতর চলে এসেছে। তিনি আমাকে শৈশবেই এডভেঞ্চার দেখাতেন। তিনি আমার মধ্যে যে কৌতুহল ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন, তার প্রতিটিতে আমি হেঁটেছি। ১৬ বছর বয়সে স্কুলের পড়াশোনা বাদ দিয়ে ‘স্টুডেন্ট’ ম্যাগাজিন প্রকাশ শুরু করি। মা একটি গলার হার খুঁজে পেয়েছিলেন। তা তিনি তুলে দিয়েছিলেন পুলিশের হাতে। কিন্তু কেউ যখন এর দাবিদার বলে সামনে এলেন না, তখন মা তা বিক্রি করে দিলেন ১০০ পাউন্ডে। আর সেই অর্থ আমাকে ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে হাতে তুলে দিলেন। পরে যা হয়েছে তার সবকিছুর জন্য পথ করে দিয়েছে ওই ১০০ পাউন্ড।

কিভাবে আপনার মাথায় কোম্পানির নাম ‘ভার্জিন’ এলো?
ব্রানসন: যখন আমরা একটি রেকর্ড লেবেল শুরু করলাম, তখন আমাদের মধ্যে কোনো ধারণা ছিল না যে, আমরা আসলে কি করছি। কারণ, তখনও ব্যবসায় আমরা সবাই একেবারে অস্পৃশ্য, নতুন বা ভার্জিন। তাই আমরা নামটি বেছে নিলাম ভার্জিন। যখন আমরা ছোট আকারে শুরু করলাম, অনেক ভাবলাম। নিজেকে প্রশ্ন করলাম- যদি আমরা একটি বৈশ্বিক কোম্পানিতে পরিণত হতে পারি তাহলে বিভিন্ন সেক্টরের জন্য কি ওই নামটি কাজ করবে কিনা।

আপনার ব্যবসা সামনে এগিয়ে যেতে আসলে বড় রকমের ঘটনা কি ছিল?
ব্রানসন: ভার্জিন রেকর্ডস প্রথম ১৯৭৩ সালে প্রকাশ করে মাইক ওল্ডফিল্ডের টুবুলার বেলস। আর এটাই আমার জীবনকে পাল্টে দিয়েছে। এটাকে সব লেবেলই প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু আমার মনে হয়েছে এটাই ছিল সবচেয়ে সুন্দর, চমৎকার। প্রথমে এর বিক্রি হয়েছে খুব ধীর গতিতে। কিন্তু পরে তা হুড় হুড় করে বিক্রি হতে থাকে। এক নম্বরে পরিণত হয়। এক বছরের মধ্যে তা সেরার তালিকায় চলে আসে।

কখন আপনার মনে হলো যে, আপনি ব্যতিক্রম, আপনি ব্যবসায় বিচক্ষণ হয়ে উঠেছেন?
ব্রানসন: স্কুলে পড়ার সময়ই অন্যরা যেভাবে চিন্তা করে, আমি সেভাবে চিন্তা করিনি। আমি যদি খেলার মাঠে না নামতাম তাহলে কখনোই উপযুক্ত হতে পারতাম না। ব্যাপারটা আমি অবগত ছিলাম না। খেলা সময় আমি সব ভুলে যেতাম। কিন্তু যখন ব্যবসা শুরু করলাম তখন প্রয়োজনীয় সমস্যা সমাধান, কল্পনাশক্তি আর সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনা বেরিয়ে এলো। আমার ওই যে পড়া ভুলে যাওয়া এটা আমাকে শক্তি দিয়েছে। কারণ, এটা না হলে আমি ওই বৃত্তের বাইরে আসার কথা চিন্তা করতাম না।

ভার্জিনকে একটি ব্রান্ড হিসেবে বড় করে তেলার মূলমন্ত্র কি?
ব্রানসন: সব সময়ই আমি সৃষ্টিশীল জিনিস আর অরিজিনাল হওয়াতে থ্রিল উপভোগ করি। নতুন কোনো সুযোগ এলে সব সময়ই নিজেকে আমি একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিÑ অন্যরা যা করছে তাকে কি ধাক্কা দিয়ে আমি উঠে দাঁড়াতে পারবো? যদি উত্তরটা হয়, হ্যাঁ। তাহলে আমি এটা শুরু করি। আমার টিম সব সময়ই নতুন কিছু নিয়ে কাজ করে। বেসামরিক বিমান চলাচল থেকে শুরু করে হোটেল, ভার্জিন ভয়েজার, ভার্জিন রেড পর্যন্ত সর্বত্রই আমরা এই কৌশল ব্যবহার করি। ভার্জিন গ্রুপের সন্তুষ্টি হলো এমন কিছু সৃষ্টি করা, যাতে আমি গর্বিত হই। মানুষ সন্তুষ্ট থাকে। সব উদ্যোক্তার এমনই হওয়া উচিত।

আপনি তো সবেমাত্র ভার্জিন রেড চালু করেছেন। অন্য সুনামখ্যাত কর্মসূচির থেকে এটা কিভাবে ভিন্ন?
ব্রানসন: আমরা যেভাবে পারি অন্য অনেকে তা পারে না। ভার্জিন রেড-এরও একই অবস্থা। এর উদ্দেশ্য কখনো শেষ হবে না। আপনি হয়তো অনলাইন শপিং থেকে পয়েন্ট সেভ করতে পারবেন। তা দিয়ে ব্যতিক্রমী কিছু কিনতে পারবেন। কিন্তু সততার সঙ্গে বলছি, আমরা সবাই যা করি, তার ফল আমাদেরকে পেতে হয়। দীর্ঘ সময় একটি ভাল কর্মসূচি আমার স্বপ্ন ছিল। কারণ, আমি সব সময় চেয়েছি, ভার্জিনে জীবনযাপনের জন্য কাস্টমারদের চিনতে। আমি খুশি যে, শেষ পর্যন্ত তা হয়েছে।

করোনায় টালমাটাল অবস্থাকে কিভাবে কাটিয়েছেন?
ব্রানসন: বৃটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের নিকারে বসবাস করতে পেরে আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। গত দেড় বছরে বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে আমাদেরকে। আমাদের ব্যবসায়, বিশেষ করে যারা ভ্রমণ এবং অবকাশ যাপন খাতের সঙ্গে যুক্ত, তাদের ওপর বড় প্রভাব পড়েছে। প্রতিটি ব্যবসায়ী উদ্যোগ যাতে টিকে থাকে তা নিশ্চিত করতে বিশ্বজুড়ে আমার টিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। যতটা সম্ভব কর্মসংস্থান রক্ষার চেষ্টা করছি আমরা। করোনা মহামারির প্রভাব বিশ্বের প্রতিজন মানুষ এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে পড়ছে- বিষয়টি হৃদয় ভেঙে যাওয়ার। একই সঙ্গে আমার ভার্জিন পরিবারের চমৎকার সব মানুষের ওপরও এর প্রভাব পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সবার প্রতি আমার অনুরোধ সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেয়ার এবং ইতিবাচক থাকার। -মানবজমিন


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন