প্রেমের টানে নরসিংদীতে মালয়েশিয়ান তরুণী
নরসিংদীর ছেলে জাহিদ খান আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে পারি জমান মালয়েশিয়ায়। সেখানে একটি খেলনার দোকানে সেলসম্যান হিসেবে চাকরি শুরু করেন।
ছোট থেকেই মোটরসাইকেলের প্রতি নেশা থাকায় তিনি মালয়েশিয়ায় কাজের ফাঁকে ইউটিউবে মোটর ব্লগিং করতেন। সেই সূত্রেই ফটোশুটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ান তরুণী রুহি রুহানার সঙ্গে পরিচয়, সেখান থেকে বন্ধুত্ব তারপর দুইজনের মন দেওয়া নেওয়া শুরু হয়। এরপর ভালোবাসার টানে জাহিদের সঙ্গে রুহি চলে আসলেন নরসিংদী।
সোমবার মুসলিম রীতিনীতি অনুয়ায়ী বাঙালি সাজে হয়েছে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। ছিল গায়ে হলুদসহ বিয়ের নানা আয়োজন। ভিনদেশি তরুণীকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত পরিবার ও এলাকাবাসী।
জাহিদ খান নরসিংদী সদর উপজেলার হাজিপুর এলাকার মৃত বাচ্চু মিয়ার ছোট ছেলে।
জানা যায়, ২০১৮ সালে জীবিকার তাগিদে মালয়েশিয়ায় যান জাহিদ। সেখানে একটি খেলনার দোকানে সেলসম্যান হিসেবে চাকরি করার পাশাপাশি ইউটিউবে ‘জাহিদ খান’ নামে খুলেন একটি ব্লগ। নিজের মোটর বাইক দিয়ে বিভিন্ন মানুষের ফটো-আর ভিডিও তৈরি করে দিতেন ইউটিউবের সেই ব্লগে। সেই সূত্রে পরিচয় মালয়শিয়ার নাগরিক রুহি রুহানার সঙ্গে। তিনি পেশায় একটি গাড়ি উৎপাদন কোম্পানির প্রসাশনিক কর্মকর্তা। তারপর থেকে সম্পর্ক গড়ে উঠে দুজনের মধ্যে। দীর্ঘ ২ বছর সম্পর্কের পর সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করার।
প্রথমে তরুণীর পরিবার রাজি না হলেও পরে মালয়েশিয়ায় তাদের বিয়ে হয়। সেখানে জাহিদের পরিবারের লোকজন না থাকায় প্রেমিক জাহিদের সঙ্গে (১৫ জানুয়ারি) মালয়শিয়া থেকে নরসিংদীর হাজিপুরে চলে আসেন এ তরুণ-তরুণী। পরে সোমবার মুসলিম রীতিনীতি অনুয়ায়ী তাদের দু’জনের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়। এর আগের দিন গায়ে হলুদসহ বিয়ের নানা আয়োজনও ছিলো মনমুগ্ধকর। বাংলাদেশি তরুণের সঙ্গে ভিনদেশি তরুণীর বিয়েতে খুশি পরিবার ও এলাকাবাসী।
জাহিদে বন্ধু জুবায়ের বলেন, রুহি খুবই মিশুক প্রকৃতির। সে ভিনদেশি হলেও সবার সঙ্গে অল্প সময়ে মিশে গেছে। সবার সঙ্গে খুব আনন্দ করে সময় কাটাচ্ছে। আমরা চাই তারা সবসময় সুখি থাকুক।
জাহিদের ভাই আশিক আহাম্মেদ বলেন, ওদের ভালোবাসার মাধ্যমে দুই দেশের মানুষের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হলো। তিনি খুবই দ্রুত আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে না তিনি ভিনদেশি কোনো নাগরিক, মনে হচ্ছে তিনি আমাদেরই আপনজন। তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে সবার সঙ্গে মেলামেশা করছেন।
মালয়েশিয়ান তরুণী রুহি রুহানা বলেন, ফটোশুট করতে গিয়ে পরিচয়, সেখান থেকে ভালোবাসা শুরু। আমাদের তিনবছরের প্রেমের সম্পর্ক। সে মানুষ হিসেবে খুব ভালো। সে আমার খুব যত্ন করে। তার কাছে ভাষা, খাবার দেশ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। মালয়েশিয়ায় বিয়ে হলেও ওদের পরিবারের কেউ না থাকায় আমরা আবার বিয়ে করেছি। নিজের পরিবারকে মিস করলেও এত বড় পরিবারে সবার সঙ্গে থেকে তাদের ভালোবাসায় সব ভুলে যায়। আমার বাংলাদেশের সবকিছু অনেক ভালো লাগে।
জাহিদ হাসান বলেন, আমি ৬ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় রয়েছি। মোটর বাইক দিয়ে ফটো সুট করার বাহানায় তার সঙ্গে পরিচয় হয় পরে আমরা সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। রুহির পরিবার ভিনদেশি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রথমে মেনে নিতে চায়নি। পরে সে বুঝালে তার পরিবার মেনে নেয়। রুহি আমাকে ভালোবেসে ভাষা শিখেছে। তাকে মালয়েশিয়ান বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে নিয়ে বাংলাদেশি খাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছি। পরে তাকে দেশে নিয়ে এসেছি। এখন তাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরিয়ে দেখাব। যাতে সে দেশের মানুষ ও প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পারে।
সূত্র: বাংলা নিউজ ২৪