কানাডার সংবাদ ফিচার্ড লেখালেখি

অবশেষে চলেই গেলেন ইফতেখার ফয়সাল

অবশেষে চলেই গেলেন ইফতেখার ফয়সাল

যে ছবি তাঁর লেখাতে ব্যবহার করতাম প্রতিনিয়ত, সেই ছবিটিই একদিন তাঁর চলে যাওয়ার শেষ সংবাদটি লিখতে হবে তা কখনো ভাবিনি। ‘বলা নাই, কওয়া নাই’ হঠাৎ করেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে! প্রচন্ড অবিশ্বাস্য হলেও তা-ই সত্যি হিসেবে মেনে নিতে হচ্ছে। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস? কেউ কি বলতে পারে? সোনার হরিণ ধরার আশায় প্রিয়তমা স্ত্রী আর একমাত্র শিশু সন্তানকে রেখে এসেছিলেন কানাডায়।

কানাডায় থাকবেন বলে আশায় আশায় ছিলেন, ছিলো আগামী দিনের রঙিন স্বপ্ন স্ত্রী এবং একমাত্র সন্তানকে ঘিরে। সবকিছুই চলছিলো স্বাভাবিকভাবে। প্রতি সপ্তাহেই নতুন নতুন লেখা লিখতেন, ফেসবুকে স্ট্যেটাস দিতেন কিন্তু  হঠাৎ করেই চোখের পলকে উলোট পালোট হয়ে গেলো একটি চিঠিতে। ছন্দপতন ঘটে গেলো জীবনের আগামী চালচিত্র। এক অজানা হতাশায় নিমজ্জিত হলেন তিনি আর হয়তো হতাশা থেকেই শেষ বিদায়ের চাকাটি ঘুরতে ঘুরতে চলে গেলো দূরে-বহুদূরে, ঠিকানাবিহীন অজানা দিগন্তে। না ফেরার দেশে।

গতকাল বন্ধু সাংবাদিক দেওয়ান মনিরুজ্জামান স্ট্যেটাস থেকে জেনে একটি সংবাদ করেছিলাম  ‘মন্ট্রিয়লে বসবাসকারী লেখক ইফতেখার আহমেদ ফয়সাল ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মন্ট্রিয়ল নিউরো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বর্তমানে কোমা’তে থাকা ফয়সালের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে হাসপাতাল থেকে জানা গেছে। কয়েকটি বইয়ের লেখক ইফতেখার আহমেদ বাংলাদেশের ফেনী শহরের বাসিন্দা এবং সেখানে তার স্ত্রী-পূত্র বসবাস করছে বলে জানা গেছে।

ইফতেখার আহমেদ ফয়সাল কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের চেষ্টা করছিলেন কিন্তু তার আবেদন  বাতিল হওয়াতে ভীষণ হতাশায় ভুগছিলেন বলে জানা গেছে।  দেশে স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিলেন। তিনি সিবিএনএতে প্রায়ই লিখতেন। ফয়সালের রোগ মুক্তির জন্য সবার দোয়া চাওয়া হয়েছে ‘

নিউজটি করার সময় হাত কাঁপছিলো তারপরেও আশা ছিলো তিনি ফিরে আসবেন আমাদের মাঝে তার একমাত্র সন্তান আর প্রিয়তমা স্ত্রীর ভালোবাসায়। কত মানুষেরইতো অসময়ে অসুখ-বিসুখ হয় আবার সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন হয়তো ফায়সল ও আসবেন।  কিন্তু না, নিয়তি তাঁকে ফিরতে দেয়নি। বড্ড অসময়ে আজ ৯ ডিসেম্বর  সকালে ১১:৩৫ চলে যেতে হলো না ফেরার দেশে। জানিনা ঈশ্বরের এ কেমন খেলা।

গত সপ্তাহে আমাকে একটি লেখা পাঠিয়েছিলেন ‘মা আর বাবার আত্মকথন’ নিয়ে। কিন্তু সিবিএনএ-এর বর্ষপূর্তি বইর কাজে  এতই ব্যস্ত ছিলাম যে নতুন কোনো লেখা সিবিএনএ-এর মন্ট্রিয়ল অফিস থেকে করা সম্ভব হচ্ছে না প্রায় যতটুক আপডেটিং হচ্ছে তা বাংলাদেশ থেকেই হচ্ছে।

যাক ফয়সল তার লেখায় শেষ অংশে লিখেছিলেন ‘একদিন আসবে, বিছানায় পড়ে থাকবো, আমার একটু যত্ন নিবি সেদিন? আমাকে ক্ষমা করে দিস যদি ভুল করে বিছানা ভিজিয়ে ফেলি, যদি চাদরটা নোংরা করে দেই, আমার শেষ সময়টায় শুধু আমাকে ছেড়ে দূরে থাকিস না প্লিজ!

যখন সময় হবে, আমার হাতটা তোর মুঠোয় পুরে নিস। আমাকে একটু সাহস দিস যেন মৃত্যুকে আমি নির্ভয়ে আলিঙ্গন করতে পারি!

আর ভাবিস না, যখন আমি আমার স্রষ্টার দেখা পাবো, তাঁর কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলবো, যেন তোর মঙ্গল করেন, কারণ তুই আমাকে ভালোবেসেছিলি, আমার বুড়ো সময়গুলোতে আমার যত্ন নিয়েছিলি!–( ইফতেখার ফয়সাল)’

২০১৮ কিংবা ২০১৯ হবে সম্ভবত তাঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সাংবাদিক ও প্রকাশক শামীম ওয়াহিদ ভাই। এর পর প্রায়ই আলাপ হতো লেখালেখি নিয়ে। তার প্রকাশিত গল্পের বইও আমাকে উপহার দেওয়ার কথা ছিলো কিন্তু ততোদিনে কোভিডের আক্রমনে তাবৎ বিশ্বের মতো মন্ট্রিয়লও ক্ষত-বিক্ষত। সব অনুষ্ঠান বন্ধ। তার সঙ্গেও আর দেখা হয়না। শুধুই ফোনে, মেসেঞ্জারে কথা হতো, লেখা পাঠাতেন, ছাপাতাম মাঝেমধ্যে অপ্রকাশিতই থেকে যেতো তাতে কোনোও অভিযোগ অনুযোগ ছিলোনা।

আর আজ সবকিছুর উর্ধে চলে গেলেন ফয়সাল। যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন। জীবন বুঝি এটাই, চোখের পলকেই সব বদলে যায়…

সিবিএনএ-এর পক্ষ থেকে গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা। আত্মার শান্তি হোক এ প্রার্থনা।

বিদ্র: ইফতেখার ফয়সালের মরদেহ তাঁর প্রিয় স্বজনদের কাছে পাঠানোর চেষ্টা চলছে, যদি সম্ভব হয় সবাই সহযোগিতা করার জন্য আহবান করা হয়েছে। যোগাযোগে:দিদার ভূইয়া-514-298-3482,/ Donation/E- Transfer , [email protected]

 



সংবাদটি শেয়ার করুন